ভিয়েনা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাক্তারের জমানো আইফোন কেনার টাকায় ও মায়ের দেয়া কিডনীতে আবারো ভালো থাকবে সবুজ

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৫:২৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • ৯ সময় দেখুন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর: চিকিৎসকার মানবতার সেবক। তারা শুধু চিকিৎসা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন না। কখনো কখনো নিজের টাকা দিয়েও চিকিৎসা করান।

এমনই তথ্য পিরোজপুরে এক যুবককে নিয়ে। অসুস্থ ওই যুবকের নাম সবুজ। তার  দুটি কিডনিতেই সমস্যা। তার শারীরিক কিছু সমস্যা আগে থেকে
থাকলেও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। এর আগে ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। স্ত্রী সালমা ইয়াসমিন তিশাও শারীরিক প্রতিবন্ধী।সামর্থ্য না থাকায় নিতে পাররেননি চিকিৎসা।সবুজের পাশে দাঁড়ায়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজনও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ডা. সাকিল সরোয়ারই অবশেষে সাহায্যের হাত বাড়ালেন। আইফোন কেনার জন্য জমানো
টাকা সবুজের হাতে তুলে দিলেন কিডনির চিকিৎসার জন্য।

জানা যায়, পিরোজপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন ডা. সাকিল সরোয়ার।তিনি থাকেন পৌর শহরের শিকারপুর এলাকায়।শখের আইফোন কেনার জন্য জমানো লক্ষাধিক টাকা তিনি সবুজের হাতে তুলে দেন তার কিডনির চিকিৎসার জন্য।

সাকিলের ভাই জামিল সরোয়ার আমেরিকায় থাকেন। সেখানে তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডির শহর গোয়েন্দা ব্যুরোতে কর্মরত। তাদের বাবা সরোয়ার হোসেন ছিলেন সফল আইনজীবী।এ ছাড়া তিনি (সরোয়ার হোসেন) বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সাকিল সরোয়ারের বাবা ছোট ভাই জামিল সরোয়ারের নিউইয়র্কের বাসায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সাকিল সরোয়ারের মা রেণু সরোয়ার পিরোজপুর সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।

অসুস্থ সবুজ সাভারের আশুলিয়ায় চাচা রিজাম উদ্দিনের বাড়িতে থাকেন।বর্তমানে ঢাকার শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতালে কিডনি অপারেশনের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অসুস্থ সবুজ মিয়া বলেন, আমার কিডনি নষ্ট হয়েছে কিন্তু মাকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি।এখন মা আমাকে একটি কিডনি দিচ্ছেন। আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা না পেলে আমি চিকিৎসা করাতে পারতাম না। আমি যখন জানতে পেরেছি যে আমার দু’টো কিডনিতেই সমস্যা তখন থেকে ধরে নিয়েছিলাম আমার জীবনের সময় শেষ।তারা আমার দিকে ফিরে না তাকালে আমার কী যে হত তা আল্লাহই জানেন। যারা
আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আমি সত্যিই তাদের কাছে ঋণী।আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক।

ডা. সাকিল সরোয়ার বলেন, ডু সামথিং এক্সেপশনাল নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সবুজ মিয়ার নাম ও কিডনি সমস্যার কথা জানতে পারি। আমার পরিচিত জেবিন ইসলাম ওই গ্রুপের মাধ্যমে অনেক গরিব রোগীকে সহযোগিতা করে থাকেন।

সবুজ মিয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি বাধা দেওয়ায় তার স্ত্রীর কিডনি দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর এগিয়ে আসে সবুজের মা। তখন সমস্যা দেখা দেয় টাকা জোগাড়ের।নিউইয়র্কের এক প্রকৌশলী ভাই ২ হাজার ২০০ ডলার যোগাড় করে দিলে তারপরও আরও ১ লাখ ২২ হাজার টাকা লাগবে বলে জানা যায়।ব্যবহারের জন্য একটি আইফোন কেনার জন্য বেশ কিছুদিন যাবৎ টাকা জমাচ্ছিলাম। যখন দেখলাম টাকার অভাবে সবুজের চিকিৎসা আটকে যাচ্ছে তখন চিন্তা করলাম ফোন তো পরেও কেনা যাবে।ফোন না কিনলে কিছু হবে না, কিন্তু টাকাটা পেলে সবুজ তো
বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন গ্রুপের একজন অ্যাডমিন।গ্রুপে প্রায় ৭০ হাজার ডাক্তার আছেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আসলেই সবুজের টাকা দরকার।এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন সবুজ মিয়াকে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন।খুব শিগগিরই ঢাকার সিকেডি হাসপাতালে সবুজ মিয়ার কিডনির অপারেশন হবে।ডা. সাকিল সরোয়ার প্রমান করলেন মানবতা মরে যায় নি ।”মানুষ মানুষের জন্য” ।

এইচ এম লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস

 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

ডাক্তারের জমানো আইফোন কেনার টাকায় ও মায়ের দেয়া কিডনীতে আবারো ভালো থাকবে সবুজ

আপডেটের সময় ০৫:২৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর: চিকিৎসকার মানবতার সেবক। তারা শুধু চিকিৎসা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন না। কখনো কখনো নিজের টাকা দিয়েও চিকিৎসা করান।

এমনই তথ্য পিরোজপুরে এক যুবককে নিয়ে। অসুস্থ ওই যুবকের নাম সবুজ। তার  দুটি কিডনিতেই সমস্যা। তার শারীরিক কিছু সমস্যা আগে থেকে
থাকলেও কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। এর আগে ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। স্ত্রী সালমা ইয়াসমিন তিশাও শারীরিক প্রতিবন্ধী।সামর্থ্য না থাকায় নিতে পাররেননি চিকিৎসা।সবুজের পাশে দাঁড়ায়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজনও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ডা. সাকিল সরোয়ারই অবশেষে সাহায্যের হাত বাড়ালেন। আইফোন কেনার জন্য জমানো
টাকা সবুজের হাতে তুলে দিলেন কিডনির চিকিৎসার জন্য।

জানা যায়, পিরোজপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন ডা. সাকিল সরোয়ার।তিনি থাকেন পৌর শহরের শিকারপুর এলাকায়।শখের আইফোন কেনার জন্য জমানো লক্ষাধিক টাকা তিনি সবুজের হাতে তুলে দেন তার কিডনির চিকিৎসার জন্য।

সাকিলের ভাই জামিল সরোয়ার আমেরিকায় থাকেন। সেখানে তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডির শহর গোয়েন্দা ব্যুরোতে কর্মরত। তাদের বাবা সরোয়ার হোসেন ছিলেন সফল আইনজীবী।এ ছাড়া তিনি (সরোয়ার হোসেন) বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সাকিল সরোয়ারের বাবা ছোট ভাই জামিল সরোয়ারের নিউইয়র্কের বাসায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সাকিল সরোয়ারের মা রেণু সরোয়ার পিরোজপুর সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।

অসুস্থ সবুজ সাভারের আশুলিয়ায় চাচা রিজাম উদ্দিনের বাড়িতে থাকেন।বর্তমানে ঢাকার শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতালে কিডনি অপারেশনের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অসুস্থ সবুজ মিয়া বলেন, আমার কিডনি নষ্ট হয়েছে কিন্তু মাকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি।এখন মা আমাকে একটি কিডনি দিচ্ছেন। আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা না পেলে আমি চিকিৎসা করাতে পারতাম না। আমি যখন জানতে পেরেছি যে আমার দু’টো কিডনিতেই সমস্যা তখন থেকে ধরে নিয়েছিলাম আমার জীবনের সময় শেষ।তারা আমার দিকে ফিরে না তাকালে আমার কী যে হত তা আল্লাহই জানেন। যারা
আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আমি সত্যিই তাদের কাছে ঋণী।আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক।

ডা. সাকিল সরোয়ার বলেন, ডু সামথিং এক্সেপশনাল নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সবুজ মিয়ার নাম ও কিডনি সমস্যার কথা জানতে পারি। আমার পরিচিত জেবিন ইসলাম ওই গ্রুপের মাধ্যমে অনেক গরিব রোগীকে সহযোগিতা করে থাকেন।

সবুজ মিয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি বাধা দেওয়ায় তার স্ত্রীর কিডনি দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর এগিয়ে আসে সবুজের মা। তখন সমস্যা দেখা দেয় টাকা জোগাড়ের।নিউইয়র্কের এক প্রকৌশলী ভাই ২ হাজার ২০০ ডলার যোগাড় করে দিলে তারপরও আরও ১ লাখ ২২ হাজার টাকা লাগবে বলে জানা যায়।ব্যবহারের জন্য একটি আইফোন কেনার জন্য বেশ কিছুদিন যাবৎ টাকা জমাচ্ছিলাম। যখন দেখলাম টাকার অভাবে সবুজের চিকিৎসা আটকে যাচ্ছে তখন চিন্তা করলাম ফোন তো পরেও কেনা যাবে।ফোন না কিনলে কিছু হবে না, কিন্তু টাকাটা পেলে সবুজ তো
বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন গ্রুপের একজন অ্যাডমিন।গ্রুপে প্রায় ৭০ হাজার ডাক্তার আছেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আসলেই সবুজের টাকা দরকার।এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন সবুজ মিয়াকে ১ লাখ টাকা দিয়েছেন।খুব শিগগিরই ঢাকার সিকেডি হাসপাতালে সবুজ মিয়ার কিডনির অপারেশন হবে।ডা. সাকিল সরোয়ার প্রমান করলেন মানবতা মরে যায় নি ।”মানুষ মানুষের জন্য” ।

এইচ এম লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস