অস্ট্রিয়ায় আবারও গণপরিবহন,কেনাকাটায় ও ইন্ডোর ইভেন্টে এফএফপি-২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
ইউরোপ ডেস্কঃ ভিয়েনার হাসপাতাল সমূহ বর্তমানে করোনার জন্য বিপদসীমার তৃতীয় পর্যায়ে অবস্থান করছে। রাজধানী ভিয়েনা বর্তমানে অস্ট্রিয়ার করোনার নতুন চতুর্থ প্রাদুর্ভাবের হট স্পটে পরিণত হয়েছে। বর্তমান করোনার এই চতুর্থ তরঙ্গ ইতিমধ্যেই রাজধানী রাজ্য ভিয়েনার হাসপাতালগুলিতে প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করছে।
ভিয়েনার স্বাস্থ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই ভিয়েনাকে কোভিড পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপ ঘোষণা করেছে। ফলে এখন প্রতিদিন হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন হাসপাতালের কিছু সাধারণ ওয়ার্ডকে এখন করোনার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (I.C.U) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভিয়েনার স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিলের তথ্যমতে গত তিন সপ্তাহের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বর্তমানে ভিয়েনার আইসিইউ রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯৬,৯ শতাংশ রোগী করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেন নি। আর করোনার সাধারণ ইউনিটে ভর্তি শতকরা ৮৭ শতাংশ রোগী করোনার প্রতিষেধক টিকা নেন নি। ফলে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে,যারা করোনার টিকা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন নি তারাই অধিক মাত্রায় সংক্রমিত হচ্ছেন এবং বিপদজনক অবস্থায় আছেন।
রাজধানী ভিয়েনায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত।আজ সোমবার ভিয়েনায় ৬৬ জন রোগী ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুই সপ্তাহ পূর্বে এই সংখ্যা ছিল ২০ জন। কাজেই দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদ্বেগ বেড়ে গেছে।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা Kronen Zeitung জানিয়েছে ইতিমধ্যেই ভিয়েনা হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের নয়-পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনার তিন ধাপ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, ভিয়েনায় কোভিড রোগীদের জন্য ৩৬৪ টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (I.C.U) শয্যা নির্ধারিত করা আছে।
যাইহোক, এর মানে হল যে সিস্টেম-সমালোচনামূলক ব্যবহারের সীমা বর্তমানে ৩৩ শতাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে অতিক্রম করেছে। যদি নিবিড় পরিচর্যার শয্যাগুলির এক তৃতীয়াংশের বেশি কোভিড রোগীদের দ্বারা দখল করা হয়, তবে তারা অন্যান্য নিবিড় পরিচর্যা রোগীদের সাথে প্রতিযোগিতা করবে। এই থ্রেশহোল্ড মানে একটি খুব উচ্চ পদ্ধতিগত ঝুঁকি। ভিয়েনার সাধারণ ওয়ার্ডে কোভিড -১৯ রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ ৭৭৭ টি শয্যা নির্ধারিত করা আছে।
আজ ভিয়েনার সিটি কাউন্সিলর ফর হেলথ পিটার হ্যাকার (SPÖ) এর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ভিয়েনার নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (I.C.U) ১৫০ জন রোগী ভর্তি হলে,রাজ্যের সাধারণ অপারেশন স্থগিত ঘোষণা করা হবে। গত বসন্তেও ভিয়েনায় আইসিইউ রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের সাধারণ অপারেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
আগামী বুধবার গ্রীষ্মের ছুটির পর অস্ট্রিয়ান সরকারের মন্ত্রী পরিষদ দীর্ঘ বিরতির পর পুনরায় বৈঠকে বসছেন।অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, এই বৈঠকের পর কিছু বিধিনিষেধ আসছে। এর মধ্যে অন্যতম ১-জি নিয়ম অর্থাৎ করোনার সম্পূর্ণ টিকা ছাড়া রাতের গ্যাস্ট্রোনমি ছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গায় প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং নাক ও মুখের নিরাপদ সুরক্ষার জন্য অস্ট্রিয়ার গণপরিবহন,সুপারমার্কেট সহ সমস্ত দোকানপাট, থিয়েটার, সিনেমা হল সহ সকল ইন্ডোর ইভেন্টে পুনরায় এফএফপি-২ (FFP2-MASK) মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। আগামী বুধবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পূর্বে সরকারের নীতিনির্ধারকরা দেশের বিশেষজ্ঞদের সাথেও কথাবার্তা বলবেন বলেও জানা গেছে।
মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ (ÖVP)। ধারণা করা হচ্ছে তিনি সেদিন নতুন বিধিনিষেধের কথা জানাবেন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১,৪২৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪১৩ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৩৩৮ জন, NÖ রাজ্যে ২৩৮ জন, Steiermark রাজ্যে ১০৫ জন, Tirol রাজ্যে ১০০ জন, Kärnten রাজ্যে ৯১ জন, Salzburg রাজ্যে ৭০ জন, Vorarlberg ও Burgenland রাজ্যে ৩৭ জন করে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে মাত্র ২,০৭৬ ডোজ এবং এই পর্যন্ত দেয়া হয়েছে মোট ১,০৫,১৮,৯৬০ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৮,৭ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৯৭,৫১০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৮০১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৬,৬৯,৬২২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৭,০৮৭ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৭০ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭৯ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস/এম আর