আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক, উড়ন্ত বিমানের চাকা থেকে ছিটকে দুই জনের মৃত্যু

তাছাড়াও বিমানে তাড়াহুড়া করে উঠতে গিয়ে ৫ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়া একটি ফ্লাইটের ভয়াবহ ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, উড়ন্ত বিমান থেকে ছিটকে মাটিতে ছিটকে পড়ছেন দুইজন আফগান নাগরিক। সবকিছু তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় পর দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। যে করেই হোক বিমানে একটু জায়গা পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তারা।এর মধ্যে কাবুল বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়া একটি মার্কিন বিমান বাহিনীর হারকিউলাস ফ্লাইটের ভয়াবহ ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, উড়ন্ত বিমান থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ছেন দুইজন।স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কাবুল বিমানবন্দরের পাশে উড়ন্ত বিমান থেকে পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা বিমানের চাকার সঙ্গে নিজেদের বেঁধে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন।

কাবুল ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে বিজয় ঘোষণার পর প্রাণনাশের আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন আফগানিস্তানের জনসাধারণ। দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। আর এ জন্য জড়ো হয়েছেন কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরে কোনো বিমান নামলেই তা ভরে যাচ্ছে মুহূর্তেই। বিমানে তাড়াহুড়া করে উঠতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।

রোববার বিকেলে কাবুলে প্রবেশ করেই তালেবান থেকে বলা হয়েছিল, তারা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। ভয়ে বা আতঙ্কিত হয়ে নাগরিকেরা যেন দেশ না ছাড়েন। তালেবানদের এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না কাবুলবাসী। কাবুল বিমানবন্দরের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বিমানবন্দর এলাকায় মানুষের প্রাণপণে ছোটাছুটির দৃশ্য দেখা যায়। বিমানে উঠতে তারা রানওয়েতে চলন্ত বিমানের সাথে দৌড়াতেও দেখা গেছে।

এদিকে তালেবানের কব্জায় যাওয়া আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এখন পর্যন্ত নয়জন বাংলাদেশি থাকার তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে৷ তাদের মধ্যে ছয়জন ব্র্যাকের কর্মী৷ বাকি তিনজন রয়েছেন কাবুলের কারাগারে৷

আফগানিস্তানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ব্র্যাকের ছয় কর্মী সংস্থার আবাসিক পরিচালকের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন৷ যে কারাগারে তিনজন বাংলাদেশি ছিলেন সেখানে তালেবান যোদ্ধারা ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশি এক বন্দি পালিয়ে এসে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ আফগানিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই৷  উজবেকিস্তানে নিযুক্ত রাস্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম একসঙ্গে আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন৷

ব্র্যাকের কর্মীদের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘সিনিয়র কর্মী ঢাকা জেলার করিম শিকদারের সাথে কথা হয়েছে৷ উনারা ১৮ তারিখের ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন৷’’ বাকি পাঁচজন হলেন, রংপুরের আসাদুজ্জামান, ঢাকার মোহাম্মদ সরফরাজ, যশোরের কামাল হোসেন, ফরিদপুর রফিকুল হক মৃধা ও নোয়াখালীর ইউসুফ হোসেন৷ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘কাবুলে পুল এ চরকি নামে একটি বড় জেলখানায় তিনজন বাংলাদেশি ছিল৷ তাদের একজন খুলনা জেলার মঈন আল মেসবাহ৷ তালেবান প্রবেশ করার ফলে কয়েদিরা সব পালিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে আমাদের মঈন আল মেসবাহও আছেন৷’’ অন্য দুজন বন্দি ঢাকার ভাসানটেকের কাউছার সুলতানা ও নোয়াখালীর ওবায়দুল্লাহ৷‘‘এরা দুজন ভেতর থেকে বের হতে পেরেছে কিনা, আমরা শিওর হতে পারিনি৷ জানার চেষ্টা চালাচ্ছি,” বলেন রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর৷ যিনি বের হতে সক্ষম হয়েছেন তাকে পরবর্তী ‘অ্যাভেইলেভল’ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি৷

যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের দুই দশক পর আবারও কট্টর ইসলামী দল তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ প্রায় নিয়ে ফেলেছে৷ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি পালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘সম্ভবত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে৷ প্রেসিডেন্ট হয়ত রিজাইন করতে পারেন৷ তালেবান লিডার আব্দুল গনি বারাদারের নেতা হিসাবে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অসমর্থিত খবরে জানা যাচ্ছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘নিউজ কালেক্ট করা দুরূহ হচ্ছে৷ মানবাধিকার কর্মীর মাধ্যমে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি৷ তার ওখানে বিদ্যুৎ না থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়ে উঠছে না৷” কাবুলের বাইরে অন্য এলাকায় বাংলাদেশি আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন রাষ্ট্রদূত৷ তবে +৯৯৮-৯৯৯১১৯১০২ এবং +৯৯৮-৯৭৪৪০২২০১ এই দুটি হটলাইন নম্বর চালু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷

শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল জানায়, আফগানিস্তানের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিওটির পক্ষ থেকে শামেরান আবেদ বলেন, ‘‘আফগানিস্তানে কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকি নিরসন করে তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল৷’’

আফগানিস্তানের ১০টি প্রদেশে প্রায় তিন হাজার ব্র্যাক কর্মী রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশিসহ প্রবাসী ১৪ জনকে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷ প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশিসহ ৫ জন ছুটিতে দেশটির বাইরে ছিলেন, তাদের আফগানিস্তান ফিরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ বাকি নয়জন বাংলাদেশির মধ্যে তিনজন বিমানযোগে রওনা দিয়েছেন এবং বাকি ৬ জনের আগামী ২২ তারিখের মধ্যে রওনা দেওয়ার কথা বলে জানায় ব্র্যাক৷

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »