ডেনমার্ক ঘোষণা করেছে যে সেপ্টেম্বরে সুদূরপ্রসারী শিথিলতা থাকবে। অক্টোবরে করোনার বিধিনিষেধ
সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে
ইউরোপ ডেস্কঃ ডেনমার্ক প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসে করোনার বিধিনিষেধের ব্যাপক শিথিলতা এবং অক্টোবর মাস থেকে দেশের করোনার সকল বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। কোথাও কোন মাস্ক পড়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না, থাকবে না করোনার কোন পরীক্ষাও।
ডেনমার্কের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে শীঘ্রই ডেনমার্কের মানুষ আবার করোনার পূর্বের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে পারবে।
ডেনমার্কের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রতিবেশী অন্যান্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশেও এর প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যেই অন্যান্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশেও করোনার সকল প্রকার বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে ডেনমার্ক সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতে নাইটলাইফ এবং গ্যাস্ট্রোনমি জন্য সুদূরপ্রসারী সহজ পদক্ষেপের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সর্বোপরি, উচ্চ টিকা দেওয়ার হার এবং ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী এবং গর্ভবতী মহিলাদেরও টিকা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্ত এই সব সম্ভব করে তোলেছে বলে সরকার দাবী করছে।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক Kronen Zeitung লিখেছেন, ডেনমার্ক ইউরোপের প্রথম দেশ যে ২০২১ সালের বসন্তের শুরুতেই তার দেশে করোনার বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আর কোনো বাধ্যতামূলক পরীক্ষা নেই। এটি একটি সুপারিশে পরিবর্তিত হয়েছে: থিয়েটার, সিনেমা হল, যাদুঘর এবং ৫০০ জনের কম অংশগ্রহণকারী কোন অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য স্থানগুলিতে ভিজিটরদের আর টিকাদান সনদ বা পরীক্ষা উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই।
করোনার প্রতিষেধক টিকাদানে ডেনমার্ক ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। সরকার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রাতে বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে সহজতর এবং সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেপ্টেম্বর থেকে রাতে আবার অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে, ডিস্কো এবং ক্লাব খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আপনি যদি কোনো রেস্তোরাঁ বা উৎসবে যেতে চান, তাহলে আপনার আর টিকা সনদ বা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তথাকথিত “করোনা পাস” যা অস্ট্রিয়ায় “গ্রিন পাস” নামে অভিহিত, তারও আর দরকার হবে না।
কোপেনহেগেনের সরকারের মতে, সমস্ত করোনা ব্যবস্থা বাদ দেওয়া উচিত। ইতিমধ্যেই ডেনমার্কের সংসদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডেনমার্কের একটি বড় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দিয়েছে, যেমনটি ডেনমার্কের দৈনিক”লুবেকার নাকরিকতেন” জানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন ডেনমার্ক সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল ? যখন ইউরোপের অন্যান্য দেশ করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। অস্ট্রিয়ার দৈনিক Kronen Zeitung এ সম্পর্কে লিখেছেন যে, ইইউর মধ্যে ডেনমার্ক করোনার প্রতিষেধক টিকাদানে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। ডেনমার্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জুলাইয়ের শেষে রিপোর্ট করেছে যে ১৬ বছরের বেশি বয়সের ৬০ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণরূপে টিকা গ্রহণ সম্পন্ন করেছে। পত্রিকাটি আরও জানান, ডেনমার্কের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছে। আপনি যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকান, এটি ইউরোপের একটি পরম শীর্ষ মান।
তবে ডেনমার্কের অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণের পরেও প্রায় ৩,৭০০ শত মানুষ করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। এটি ডেনমার্কে টিকা দেওয়া সমস্ত মানুষের মাত্র ০,১ শতাংশের সাথে মিলে যায়। ভ্যাকসিনের মাত্র এক ডোজ প্রাপ্ত সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি ১৭,৫৩২ জন। এটি দেশের সমস্ত সংক্রমণের প্রায় এগারো শতাংশের সাথে মিলে যায়।
ডেনমার্কে সংক্রামক রোগ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এসএসআই এর হিসাবে এই সংখ্যাগুলি আরও সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারনে বিস্তার লাভ করেছে। সংস্থাটির বৈজ্ঞানিক পরিচালক টায়রা গ্রোভ ক্রাউস বলেন, “এই কারণে যে প্রথমবারের মতো বেশি লোককে টিকা দেওয়া হয়েছিল এবং কারণ প্রথম টিকা জুলাই মাসে প্রভাবিত ডেল্টা বৈকল্পিকের বিরুদ্ধে কম সুরক্ষা দেয়।”
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬০১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১১৬ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ১০২ জন, Tirol রাজ্যে ৮০ জন, NÖ রাজ্যে ৭৫ জন, Salzburg রাজ্যে ৬৭ জন, Steiermark রাজ্যে ৬২ জন, Kärnten রাজ্যে ৪৮ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৩৯ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে মাত্র ১২,৯২৮ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার মোট প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ৯৯,৯৯,২৭২ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন মোট ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৮৯ জন,যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৪,৫ শতাংশ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৬৪,১৩৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৮৫১ জন।
অস্ট্রিয়ায় করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৬,৪৬,৯৩৭ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৬,৪৪৫ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৪০ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৬ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস /এম আর