ইউরোপ ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক এই স্কলারশিপের ২০২২ ও ২০২৩ সালের জন্য আবেদন পত্র গ্রহণ শুরু হয়েছে গতকাল ৩ আগস্ট।
বৃটিশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সংস্থা জানিয়েছেন চেভেনিং স্কলারশিপের নতুন আবেদন পত্র গ্রহণ শুরু হয়েছে গতকাল। সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন এটি যুক্তরাজ্য সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি প্রোগ্রাম,যা ১৯৮৩ সাল থেকে চলে আসছে। যুক্তরাজ্যের (বৃটেন) ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) এবং অংশীদার সংগঠনগুলো এই বৃত্তি বা স্কলারশিপের প্রবর্তন করেছেন।
British Foreign and Commonwealth Office মূলত এটি প্রদান করে থাকে যুক্তরাজ্যের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদী মাস্টার্স করার জন্য। সারা বিশ্বের প্রায় ১৬০ টি দেশে এই স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন নেতৃবৃন্দ চিভেনিং স্কলারশিপ গ্রহণ করে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। তারমধ্যে কয়েকজন অন্যতম
যেমন- কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট , কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সচিব, পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ চিভেনিং স্কলার ছিলেন। লিডারশীপের ভিত্তিতে দেওয়া স্কলারশিপের মধ্যে চিভেনিং-ই সবচেয়ে সেরা।
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কমনওয়েলথ কি ?
কমনওয়েলথ অব নেশন্স বা কমনওয়েলথ হল অতীতে বৃটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল এমন স্বাধীন জাতিসমূহ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা। অর্থাৎ কমনওয়েলথের সদস্য দেশ সমূহ এক সময় বৃটিশরা শাসন করেছিল। বর্তমানে এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ বাংলাদেশ,ভারত ও পাকিস্তান সহ সর্বমোট ৫৪ টি। কমনওয়েলথের সর্বশেষ সদস্য দশ হল রুয়ান্ডা। এই সংস্থার সচিবালয় লন্ডনে অবস্থিত। ব্রিটেনই এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমনওয়েলথ অব নেশন্স গঠিত হয়।
এদিকে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেডিভয়েস জানান, বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে এক-দু’জন চিকিৎসক এই স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার হল এই স্কলারশিপের কোন ধাপেই শুধু বাংলাদেশীদের উপর নির্ভর করা হয় না, তাই ওদের চাওয়ার সাথে আপনার চাওয়া মিলে গেলেই পেয়ে যেতে পারেন ইউকে মাস্টার্সের টিকেট!
আবেদনের যোগ্যতা:
আবেদনের যোগ্য হতে হলে আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রীর পর অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়সের কোন সীমা নেই।
সময়সীমা:
আবেদন শুরু হয় অগাস্ট মাসে, সাধারণত চলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
আবেদনের প্রক্রিয়া:
আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করতে হয়। স্কলারশিপের আবেদন ও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির আবেদন ভিন্নভাবে করতে হয়। স্কলারশিপের আবেদনের সময়ই তিনটি ইউনিভার্সিটি চয়েস দিতে হয়। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য পরের বছরের ১১ জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে unconditional offer পেতে হবে।
যেকোনো কোর্সেই আবেদন করতে পারেন। কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে সেই কোর্স যদি আপনার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে খুব সুন্দর করে মিল হয়, তাহলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
রচনাবলি:
আবেদনের সময় চারটি ৫০০ শব্দের রচনা লিখতে হবে- লিডারশীপ অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স, নেটওয়ার্কিং, কেন যুক্তরাজ্যে পড়তে চান আর কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চান এবং ক্যারিয়ার প্ল্যান বিশদভাবে ফুঁটিয়ে তুলতে হয় আবেদনে।
রচনাগুলো নিয়ে কিছু নির্দেশনা:
লিডারশীপ অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স: এই রচনাতে আপনার নেতৃত্বের গুণাবলি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে তুলে ধরতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞরা বলেন, এই রচনাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নেতৃত্বের বিবরণ যে শুধু আপনার সেক্টরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, এমনটি নয়।। বরং সেটা ছোট বেলা থেকে আজ অবধি যে কোন কিছুই হতে পারে। যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেসব সিদ্ধান্ত কিভাবে পরিবর্তন ঘটিয়েছে বা প্রভাব ফেলেছে পরবর্তীতে সেটা ফুটিয়ে তুলতে হবে।
নেটওয়ার্কিং: কোন সন্দেহ নেই যে চিভেনিং স্কলার হিসেবে আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু নিশ্চয়ই এখনি আপনি সম্পর্কের মোটামুটি একটা শক্তিশালী জাল তৈরি করে ফেলেছেন? যেহেতু নেতৃত্বের একটা বড় দিক হলো নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং তা বজায় রাখা। তো বিস্তারিত লিখে ফেলুন সেসব কাহিনী। অবশ্যই ৫০০ শব্দের ভেতর।
লেখাপড়া সম্পর্কিত:
এখানে মূলত আপনি কেন যুক্তরাজ্যকে বেছে নিয়েছেন এবং কেন বেছে নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই পড়তে চান, তা বিশদভাবে লিখে ফেলুন। এটা আপনার সততার একটা পরীক্ষা। অযথা যুক্তরাজ্যকে বেশি না ফুলিয়ে একেবারে নিজের ভাবনাগুলো লিখে ফেলুন। পাশ্চাত্য দুনিয়ায় সর্বোপরি বৃটেনে সত্য কথা বলাকে গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করা হয়।
ক্যারিয়ার প্ল্যান:
এ রচনায় আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বর্ণনা করতে পারেন। এখন কী চাচ্ছেন, ৫ বছর পরে কী চান, দশ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান এসব গুছিয়ে লিখে ফেলুন। তবে মনে রাখবেন কারও রচনা নকল করবেন না, তাতে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আর নিজের কাছে তো অপরাধী থাকবেনই! সম্পূর্ণ নিজের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সবগুলো রচনাই যেন সুসংগত হয়,সেদিকে একটু বেশী খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে একটু সময় নিয়ে রচনাগুলি লেখা উচিত।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস /এম আর