অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে অস্ট্রিয়ার পূর্ব সীমান্তে অতিরিক্ত আরও চার শত সৈন্য মোতায়েন

একটি বিষয় পরিষ্কার, ইউরোপে আশ্রয় ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়েছে,তাই সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার অত্যাবর্ষকঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ইউরোপ ডেস্কঃ আজ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার (ÖVP) ও প্রতিরক্ষা ক্লাউডিয়া ট্যানার(ÖVP)এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার পূর্ব বিশেষ করে হাঙ্গেরীর সীমান্তে অতিরিক্ত ৪০০ শত সেনা মোতায়েনের কথা জানান। বর্তমানে অস্ট্রিয়ান পুলিশের সাথে ১,০০০ হাজার সেনা ইতিমধ্যেই সীমান্তে মোতায়েন আছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার বলেন,”একটি বিষয় পরিষ্কার, ইউরোপীয় আশ্রয় ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে”। ইইউর প্রয়োজনীয়তা অস্ট্রিয়াকে “পরিষ্কার পরিস্থিতি নিশ্চিত করা” থেকে বিরত রাখবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবৈধ স্থানান্তরের হাত থেকে রক্ষা পেতে অস্ট্রিয়ায় “শিকল চাপিয়ে দেবে”।  তাই সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।  অতএব, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে শক্তিশালী করতে আরও ৪০০ শত অতিরিক্ত সেনা সদস্যকে সীমান্তে মোতায়েন করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন,ইইউর বাহিরের সীমানা নিয়ে বড় সমস্যা রয়েছে, কারণ অস্ট্রিয়ান বাহ্যিক সীমান্তে প্রবেশের সংখ্যা বাড়ছে, যে কারনে আরও সীমান্ত নজরদারি প্রয়োজন, বিশেষত অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সীমান্তে। এই বছর এই পর্যন্ত শুধুমাত্র এই সীমান্তেই কয়েক শতাধিক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, যেহেতু পরিস্থিতি “অত্যন্ত গুরুতর” তাই সীমান্তে আরও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হবে।

নেহামার বলেন, “আমরা সহায়তা কার্যক্রমের সিস্টেমকে মৌলিকভাবে নতুনভাবে ডিজাইন করব।”  এই উদ্দেশ্যে, তারা বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যে একটি পরিস্থিতি কেন্দ্র স্থাপন করতে চান। উদ্দেশ্য পাচারকারীদের জন্য “তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করা”।

অস্ট্রিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্লাউডিয় ট্যানার বলেন, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। আর তারই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পূর্বের ১,০০০ সৈন্যের সাথে বর্তমানে আরও ৪০০ শত অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, সীমান্ত রক্ষায় প্রতি বছর প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের ব্যয় প্রায় ৪৯ মিলিয়ন ইউরো। মন্ত্রী জানান,এই অর্থ ব্যয় দেশ ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ব্যবহৃত হয়।

এদিকে অস্ট্রিয়ান সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার পূর্ব সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের সংখ্যা পুনরায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় নড়েচড়ে বসেছেন। অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্লাউডিয়া ট্যানার তুরস্কের সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শনিবার জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা Welt am Sonntag এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্যানার তুরস্ককে ইইউর প্রতিরক্ষা নীতিতে অংশ নিতে দিতে অস্বীকার করেন।

তুরস্ক ইইউর বাহিরের তৃতীয় দেশ হিসাবে এটির জন্য আবেদন করেছিল, তবে অস্ট্রিয়া “আনুষ্ঠানিক কারণে” বিরোধী ছিল।  এছাড়াও, প্রতিরক্ষা এবং সুরক্ষা ইস্যুতে ইতিমধ্যে একটি যৌথ সংলাপ হওয়া উচিত।  ট্যানার বলেন, “এর কোনওটিই ঘটনা নয়।” ইউরোপের অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসী তুরস্ক হয়েই ইউরোপে প্রবেশ করছে। তাই অবৈধ অভিবাসী বন্ধে তুরস্কের দায়িত্বে অসন্তোষ অস্ট্রিয়া সহ ইইউর কেন্দ্রীয় প্রশাসন।

আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনার সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১০৮ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৬৪ জন, NÖ রাজ্যে ৩৯ জন, Tirol রাজ্যে ৩২ জন, Salzburg রাজ্যে ৩১ জন, Steiermark রাজ্যেও ৩১ জন, Kärnten রাজ্যে ২৩ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১৩ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৮ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ৬৩ হাজার ১০৭ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার মোট প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়েছে ৯৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৫ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৪ জন। যা অস্ট্রিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৮,১ শতাংশ।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৫৫,৯৩৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৭৩১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৬,৪০,৬৮৫ জন। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪,৫২২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১০১ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »