বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত, কোয়ারেন্টাইনে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী

করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকার উভয় ডোজ নেওয়ার পরেও বৃটিশ স্বাস্থ্য সচিব(মন্ত্রী) করোনায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন

ইউরোপ ডেস্কঃ বৃটিশ স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিদ গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান,তার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিক পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন এবং পিসিআর পরীক্ষার জন্য তার নমুনা পরীক্ষাগারে জমা দেয়া হয়েছে।

গতকাল বৃটিশ স্বাস্থ্য সচিব(মন্ত্রী) সাজিদ জাভিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় নিজেই একথা জানিয়েছেন। শনিবার তার টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় স্বাস্থ্য সচিব বলেন যে, তার করোনার লক্ষণগুলি “খুব হালকা” এবং তিনি পরিবারের সাথে বাড়িতে স্ব-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বে তার পূর্ববর্তী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছিলেন। তাছাড়াও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিদ সকলকে করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তার ভিডিও বার্তা শেষ করেন।

এদিকে আজ রবিবার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ নাম্বার ডাইনিং স্ট্রিট থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শে আসায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আজ থেকে ১০ দিনের হোম আইসোলেশনে থাকবেন। যদিও পূর্বে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়েছেন তাই ১০ দিনের আইসোলেশন করতে হবে না।

বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক দু’জনেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের সংস্পর্শে ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই করোনায় শনাক্ত ঘোষণার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে এখন অবশ্যই ১০ দিনের বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণ বা হোম কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।

ডাউনিং স্ট্রিট প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন যে,প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী একটি নতুন সরকারি পাইলট স্কিমের অংশ হিসাবে স্ব-বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিবর্তে একটি দৈনিক কোভিড-১৯ পরীক্ষা করলেই চলবে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দ্বৈত মানের অভিযোগের মধ্যে এই পরিকল্পনাটি তিন ঘণ্টারও কম সময় পরে উল্টে যায়। ডাউনিং স্ট্রিট বলেছিলেন যে জনসন চেকারস, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আত্ম-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন এবং “পরীক্ষার পাইলটটিতে অংশ নেবেন না।” এটি বলেছে যে সুনাকও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করবে।

এর আগে রবিবার লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সচিব জন অশ্বওয়ার্থ স্কাই নিউজকে বলেন যে,জনসাধারণ “তাদের জন্য একটি নিয়ম এবং আমাদের বাকিদের জন্য অন্য কিছু” দেখবে এটা হতে পারে না। তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যেহেতু করোনায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাহচার্য্যে ছিলেন, তাই তাদেরকে আইন অনুযায়ী ১০ দিনের পৃথকীকরণ করতে হবে। কেননা যুক্তরাজ্যে এই পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে “পৃথকীকরণের” মুখোমুখি হতে বলা হয়েছে, কারণ তারা ইতিবাচক পরীক্ষার কারও কাছাকাছি ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে যুক্তরাজ্যের রেস্তোঁরা, গাড়ি প্রস্তুতকারক এবং লন্ডন পাতাল রেলওয়ে সহ ব্যবসায়গুলি বলছে যে স্ব-বিচ্ছিন্নতার বিধিগুলির কারণে তারা কর্মীদের ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে।

এদিকে আগামীকাল সোমবার ১৯ জুলাই থেকে ইংল্যান্ডে অবশিষ্ট মহামারী নিষেধাজ্ঞাগুলি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতির ঘোষণার পর এখন নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বৃটেনে করোনার সংক্রমণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধ বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ও বিরোধী রাজনীতিকরা তীব্রভাবে সমালোচনা করা অব্যাহত রেখেছেন।

বিরোধী লিবারাল ডেমোক্র্যাটস-এর স্বাস্থ্য বিষয়ক মুখপাত্র মুনিরা উইলসন টুইট করেছেন, “আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যেমন বলেছেন যে, সোমবার একবারে সমস্ত নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে নেওয়া একটি পরীক্ষা।” আরও সংক্রামক ডেল্টা রূপটি দ্বারা চালিত, ব্রিটেনে কয়েক সপ্তাহ ধরে কোভিড-১৯ কেস বাড়ছে।  শনিবার ৫৪,০০০ এরও বেশি নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে, যা জানুয়ারীর পর থেকে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ।

বৃটেনে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুও বাড়ছে, তবে টিকা দেওয়ার জন্য পূর্বের সংক্রমণের চেয়ে হাসপাতালে চাপ তুলনামূলক কিছুটা কম। বৃটিশ সরকার জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।  লন্ডনের বাস এবং সাবওয়ে এবং কিছু অন্যান্য ট্রানজিট নেটওয়ার্ক গুলিতে এখনও ফেস মাস্কগুলির প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন সরকারের একটি সূত্র।

আজ যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৪৮,১৬১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ জন। যুক্তরাজ্যে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪,৩৩,৯৩৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১,২৮,৭০৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪৩,৯৬,৯৫০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯,০৮,২৮১ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫৫১ জন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »