ভিয়েনা ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ডেঙ্গুেত আরও ৪ জনের প্রাণহানি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সময়সীমা নেই – ট্রাম্প জার্মানিতে শরণার্থীদের অনেকেই এখনও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে মঙ্গলবার অস্ট্রিয়া সফরে আসছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার ওমানে দুর্ঘটনায় নিহত ৮ প্রবাসীর লাশ ফিরল দেশে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী, সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না: ইসি আনোয়ারুল তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়লো ১৯ মাছের আড়ৎ

প্রেমের সালিশে কন্যা পছন্দ, চেয়ারম্যান নিজেই করলেন বিয়ে

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৮:২৪:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • ১৭ সময় দেখুন

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ সালিশী বৈঠকে কনে পছন্দ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতে বিয়ের পিড়িতর বসলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার। ষাট বছর বয়সে ১৪ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করলেন তিনি।

প্রেমের টানে বাড়িছাড়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার বিষয়ে ডাকা সালিস বৈঠকে ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে পছন্দ হয় চেয়ারম্যানের। তাৎক্ষনিক ভাবে কাজী ডেকে তাকে বিয়ে করেন। বিষয়টি এখন এলাকায় “টক অব দ্যা টাউন”।

এদিকে সালিস বৈঠকে গিয়ে নিজের প্রেমিকাকে হারানোর ঘটনায় ওই প্রেমিক যুবক বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।  শুক্রবার রাতেই ওই যুবককে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার কনকদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছন। তাঁর প্রথম স্ত্রী আছেন। সেই সংসারে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।

১৪ বছরের শিক্ষার্থীকে ৬০ বছরের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিয়ে করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ও এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিশোরীর সঙ্গে কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের রমজান নামে এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারকে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। ওই ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের বিষয়ে আর কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় লোকজন ও মেয়েটির পরিবারের ভাষ্য, কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে দেওয়া জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রেণি পাসের সনদ অনুযায়ী, ওই ছাত্রীটির জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। বিয়ের পর মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। তবে বাড়িতে তাঁর প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না।

বিয়ের খবর শুনে ছেলেটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। অচেতন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. ফিরোজ আলম।

আজ শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই ছেলে বলে, ‘ওকে আমার কাছে এনে দেন। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।’

ঘটনা জানার জন্য আজ শনিবার মেয়েটির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে লোক আছে। এখন কিছু বলব না।’ তবে প্রেমের টানে মেয়ের বাড়িছাড়ার এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেক বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখে তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন।’

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘নিজের প্রয়োজনে খুবই গরিব ঘরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। কাউকে মেরে ফেলার হুমকি কিংবা জোর করার বিষয়টি সত্য নয়।’ আর মেয়ের বয়স ১৮ বছর বলে তিনি দাবি করেন।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ছেলেটির খোঁজ নেওয়ার জন্য।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা সঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আব্দুস সালাম আরিফ/ ইবিটাইমস/আরএন

জনপ্রিয়

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

প্রেমের সালিশে কন্যা পছন্দ, চেয়ারম্যান নিজেই করলেন বিয়ে

আপডেটের সময় ০৮:২৪:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ সালিশী বৈঠকে কনে পছন্দ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতে বিয়ের পিড়িতর বসলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার। ষাট বছর বয়সে ১৪ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করলেন তিনি।

প্রেমের টানে বাড়িছাড়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার বিষয়ে ডাকা সালিস বৈঠকে ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে পছন্দ হয় চেয়ারম্যানের। তাৎক্ষনিক ভাবে কাজী ডেকে তাকে বিয়ে করেন। বিষয়টি এখন এলাকায় “টক অব দ্যা টাউন”।

এদিকে সালিস বৈঠকে গিয়ে নিজের প্রেমিকাকে হারানোর ঘটনায় ওই প্রেমিক যুবক বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।  শুক্রবার রাতেই ওই যুবককে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার কনকদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছন। তাঁর প্রথম স্ত্রী আছেন। সেই সংসারে তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিবাহিত।

১৪ বছরের শিক্ষার্থীকে ৬০ বছরের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বিয়ে করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ও এলাকায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিশোরীর সঙ্গে কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের রমজান নামে এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত বৃহস্পতিবার রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। এরপর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারকে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। ওই ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের বিষয়ে আর কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় লোকজন ও মেয়েটির পরিবারের ভাষ্য, কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। বিয়ের কাবিননামায় মেয়েটির জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল। কিন্তু বিদ্যালয়ে দেওয়া জন্মনিবন্ধন ও পঞ্চম শ্রেণি পাসের সনদ অনুযায়ী, ওই ছাত্রীটির জন্মতারিখ ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল। বিয়ের পর মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান চেয়ারম্যান। তবে বাড়িতে তাঁর প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না।

বিয়ের খবর শুনে ছেলেটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পরিবারের সদস্যদের দাবি। অচেতন অবস্থায় শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. ফিরোজ আলম।

আজ শনিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওই ছেলে বলে, ‘ওকে আমার কাছে এনে দেন। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।’

ঘটনা জানার জন্য আজ শনিবার মেয়েটির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সামনে লোক আছে। এখন কিছু বলব না।’ তবে প্রেমের টানে মেয়ের বাড়িছাড়ার এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেক বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটির জন্মনিবন্ধন দেখে তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন।’

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘নিজের প্রয়োজনে খুবই গরিব ঘরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি। কাউকে মেরে ফেলার হুমকি কিংবা জোর করার বিষয়টি সত্য নয়।’ আর মেয়ের বয়স ১৮ বছর বলে তিনি দাবি করেন।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়েছে ছেলেটির খোঁজ নেওয়ার জন্য।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তা সঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আব্দুস সালাম আরিফ/ ইবিটাইমস/আরএন