ভিয়েনা ১১:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ডেঙ্গুেত আরও ৪ জনের প্রাণহানি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সময়সীমা নেই – ট্রাম্প জার্মানিতে শরণার্থীদের অনেকেই এখনও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে মঙ্গলবার অস্ট্রিয়া সফরে আসছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার ওমানে দুর্ঘটনায় নিহত ৮ প্রবাসীর লাশ ফিরল দেশে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী, সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না: ইসি আনোয়ারুল তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়লো ১৯ মাছের আড়ৎ

নির্বাচনী সহিংসতা, চরফ্যাসনে মনিরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজাল

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৪:৫৫:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
  • ৭ সময় দেখুন

চরফ্যাসন(ভোলা) : ভোলার চরফ্যাসনে ২১ জুন ভোটগ্রহনের দিন হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং  ওয়ার্ডের মহিলা ভোটারদের জন্য নির্ধারিত দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি কেন্দ্রে নিহত মনির হোসেনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির মারা গেছেন এমনটা পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করলেও ‘ কার গুলিতে মনির মৃত্যু হয়েছে’ এই প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না।

পুলিশের সাফ কথা ‘পুলিশের গুলিতে মনির মরেনি। মনিরের প্রাণহরণকারী গুলির উৎস নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে গতকাল বৃহষ্পতিবার বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আকতারুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩শত ৬১ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ৫৭ জন মহিলা ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি এবং ১ হাজার ৩শ ৪জন পুরুষ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল চর ফকিরা হাজি খলিলুর রহমান সপ্রাবি। এই দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব দেড় থেকে ২ কিমি। একই ওয়ার্ডের ভোটারদের জন্য বিশাল দূরত্বের পৃথক দু’টি কেন্দ্রই ভোটগ্রহনের দিন সহিংতার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি দু’টি কেন্দ্র প্রতিদ্বন্ধী দুই প্রার্থীর বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় ভোটের দিন সহিংসতা আশংকা আগে থেকেই ছিল।

স্থনীয়রা জানান, আগে একই কেন্দ্রে ভোটগ্রহন করা হতো। তখন সহিংসতা ছিল না। পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র ভিন্ন ভ্যানুতে নেয়ার পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। বিশাল দূরত্বের দু’টি কেন্দ্রে এ যাবৎ ৩টি নির্বাচনে ভোটগ্রহন করা হয়। সব ক’টি নির্বাচনেই এখানে সহিংসতা হয়েছে। এবারও সহিংসতার শংকা ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। তাদের মধ্যে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের মধ্যে উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির বাড়ি মহিলা কেন্দ্র সংলগ্ন এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের বাড়ি পুরুষ কেন্দ্র সংলগ্ন। বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র হওয়ায় দুই প্রার্থী কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া ছিল। আধিপত্য বিস্তারের এই অপচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রুপ নেয় এবং ওই সহিংতার বলি হয় পেশায় জেলে যুবক মনির।

মহিলা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিং এজেন্ট জানান, মহিলা ভোটকেন্দ্রে হামলার সময় সাধারন সদস্যপদে প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন প্রার্থীর সবাই কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয়, দেড় থেকে ২ কিমি দূরের পুরুষ ভোটকেন্দ্র থেকে। সকালে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন পুরুষ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান ফুটবল মার্কার প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি। সেখানে টিউবওয়েল মার্কার কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করে। এই ঘটনার পরপর ইয়াছিন মাঝি তার বাড়ি সংলগ্ন মহিলা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসেন। তিনি আসার পর লাঞ্চনার খবর কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। ইয়াছিন মাঝির উত্তেজিত কর্মীরা খুব দ্রত সময়ের মধ্যে ধারালো অস্ত্র, লোহার রড এবং লাঠি নিয়ে কেন্দ্রের পাশে উপস্থিত  টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মীদের উপর হামলা করে। হামলার মুখে, প্রার্থী ইউসুফ সিকদার কেন্দ্রের মধ্যে ৩য় তলায় ভোটগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কক্ষে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ৩ তলা বিশিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিচতলার লোহার গেইট ভেঙ্গে ২য় তলায় উঠে আসে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসনের লোকজন ৩য় তলায় উঠার লোহার  গেইটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে গেইটের ভেতর-বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা অবরুদ্ধ হয়ে পরে। বিশেষ করে ৩য় তলার গেইটের বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা তোপের মধ্যে অসহায় হয়ে পরে।

এসময় হামলাকারীরা ২য় গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। এই ৩য় তলায় ছিল কেন্দ্রের ৩টি ভোটগ্রহন কক্ষ। যেখানে প্রতিদ্বন্ধী ৩ প্রার্থী, ভোটগ্রহন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ আক্রমনে আতংকিত হয়ে পরেন কর্মকর্তারাও।

প্রিজাডিং অফিসার মো. ইমাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আহত মনিরকে চরফ্যাসন হাসপাতালে নেয়ার  পর সে মারা যায়। কিন্ত তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসার কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন।

ওই ভোটকেন্দ্রের একজন পুলিং এজেন্ট জানান, হামলাকারীরা গেইট এবং গেইট সংলগ্ন লোহার গ্রিল ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। নিহত মনিরও হামলাকারীদের একজন ছিল। সে গেইটের পাশের গ্রিলভেঙ্গে ৩য় তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের গুলির আঘাতে সে গ্রিল থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই  পুলিং এজেন্ট দাবী করেন, পুলিশ রাবারের গুলি ছুঁড়ে। এখনো অসংখ্য রাবার গুলি ভোটকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোট দিতে আসা কিছু মহিলাও রাবারগুলি বিদ্ধ হয়েছেন। গ্রামের শিশুরা এসব রাবার গুলি কুড়িয়ে নিয়েছেন। এই রাবার গুলিতে কারো মৃত্যু  হওয়ার কথা নয়। গ্রীল বেয়ে উপরে উঠার সময় রাবারগুলির আঘাতে মনির ছিটকে নিচের  পিলারে উপর পড়ে গুরুতর আঘাত হয়। ওই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় মনিরের বাবা বশির সিকদার বাদি হয়ে শশীভূষণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মী-সমর্থকদের আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে প্রতিপক্ষের গুলিতে মনিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, মৃতদেহে ছোটখাট জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

নিহত মনিরের বাড়ি ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াসিন মাঝির বাড়ি ও ঘটনাস্থল মহিলা  ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন। মনির পরিবার ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির সমর্থক ছিল। ফলে মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার অনুগতরা খুনের মামলায় ফেঁসে যায়।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ মো.রফিকুল ইসলাম জানান, এজাহার ভুক্ত প্রধান আসামী রিয়াদ সিকদার কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিয়াদ টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের ছেলে। অপরাপর আসামীদের গ্রেপতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জামাল মোল্লা /ইবি টাইমস

জনপ্রিয়

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

নির্বাচনী সহিংসতা, চরফ্যাসনে মনিরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজাল

আপডেটের সময় ০৪:৫৫:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

চরফ্যাসন(ভোলা) : ভোলার চরফ্যাসনে ২১ জুন ভোটগ্রহনের দিন হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং  ওয়ার্ডের মহিলা ভোটারদের জন্য নির্ধারিত দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি কেন্দ্রে নিহত মনির হোসেনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির মারা গেছেন এমনটা পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করলেও ‘ কার গুলিতে মনির মৃত্যু হয়েছে’ এই প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না।

পুলিশের সাফ কথা ‘পুলিশের গুলিতে মনির মরেনি। মনিরের প্রাণহরণকারী গুলির উৎস নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে গতকাল বৃহষ্পতিবার বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আকতারুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩শত ৬১ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ৫৭ জন মহিলা ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি এবং ১ হাজার ৩শ ৪জন পুরুষ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল চর ফকিরা হাজি খলিলুর রহমান সপ্রাবি। এই দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব দেড় থেকে ২ কিমি। একই ওয়ার্ডের ভোটারদের জন্য বিশাল দূরত্বের পৃথক দু’টি কেন্দ্রই ভোটগ্রহনের দিন সহিংতার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি দু’টি কেন্দ্র প্রতিদ্বন্ধী দুই প্রার্থীর বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় ভোটের দিন সহিংসতা আশংকা আগে থেকেই ছিল।

স্থনীয়রা জানান, আগে একই কেন্দ্রে ভোটগ্রহন করা হতো। তখন সহিংসতা ছিল না। পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র ভিন্ন ভ্যানুতে নেয়ার পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। বিশাল দূরত্বের দু’টি কেন্দ্রে এ যাবৎ ৩টি নির্বাচনে ভোটগ্রহন করা হয়। সব ক’টি নির্বাচনেই এখানে সহিংসতা হয়েছে। এবারও সহিংসতার শংকা ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। তাদের মধ্যে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের মধ্যে উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির বাড়ি মহিলা কেন্দ্র সংলগ্ন এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের বাড়ি পুরুষ কেন্দ্র সংলগ্ন। বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র হওয়ায় দুই প্রার্থী কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া ছিল। আধিপত্য বিস্তারের এই অপচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রুপ নেয় এবং ওই সহিংতার বলি হয় পেশায় জেলে যুবক মনির।

মহিলা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিং এজেন্ট জানান, মহিলা ভোটকেন্দ্রে হামলার সময় সাধারন সদস্যপদে প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন প্রার্থীর সবাই কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয়, দেড় থেকে ২ কিমি দূরের পুরুষ ভোটকেন্দ্র থেকে। সকালে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন পুরুষ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান ফুটবল মার্কার প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি। সেখানে টিউবওয়েল মার্কার কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করে। এই ঘটনার পরপর ইয়াছিন মাঝি তার বাড়ি সংলগ্ন মহিলা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসেন। তিনি আসার পর লাঞ্চনার খবর কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। ইয়াছিন মাঝির উত্তেজিত কর্মীরা খুব দ্রত সময়ের মধ্যে ধারালো অস্ত্র, লোহার রড এবং লাঠি নিয়ে কেন্দ্রের পাশে উপস্থিত  টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মীদের উপর হামলা করে। হামলার মুখে, প্রার্থী ইউসুফ সিকদার কেন্দ্রের মধ্যে ৩য় তলায় ভোটগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কক্ষে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ৩ তলা বিশিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিচতলার লোহার গেইট ভেঙ্গে ২য় তলায় উঠে আসে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসনের লোকজন ৩য় তলায় উঠার লোহার  গেইটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে গেইটের ভেতর-বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা অবরুদ্ধ হয়ে পরে। বিশেষ করে ৩য় তলার গেইটের বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা তোপের মধ্যে অসহায় হয়ে পরে।

এসময় হামলাকারীরা ২য় গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। এই ৩য় তলায় ছিল কেন্দ্রের ৩টি ভোটগ্রহন কক্ষ। যেখানে প্রতিদ্বন্ধী ৩ প্রার্থী, ভোটগ্রহন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ আক্রমনে আতংকিত হয়ে পরেন কর্মকর্তারাও।

প্রিজাডিং অফিসার মো. ইমাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আহত মনিরকে চরফ্যাসন হাসপাতালে নেয়ার  পর সে মারা যায়। কিন্ত তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসার কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন।

ওই ভোটকেন্দ্রের একজন পুলিং এজেন্ট জানান, হামলাকারীরা গেইট এবং গেইট সংলগ্ন লোহার গ্রিল ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। নিহত মনিরও হামলাকারীদের একজন ছিল। সে গেইটের পাশের গ্রিলভেঙ্গে ৩য় তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের গুলির আঘাতে সে গ্রিল থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই  পুলিং এজেন্ট দাবী করেন, পুলিশ রাবারের গুলি ছুঁড়ে। এখনো অসংখ্য রাবার গুলি ভোটকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোট দিতে আসা কিছু মহিলাও রাবারগুলি বিদ্ধ হয়েছেন। গ্রামের শিশুরা এসব রাবার গুলি কুড়িয়ে নিয়েছেন। এই রাবার গুলিতে কারো মৃত্যু  হওয়ার কথা নয়। গ্রীল বেয়ে উপরে উঠার সময় রাবারগুলির আঘাতে মনির ছিটকে নিচের  পিলারে উপর পড়ে গুরুতর আঘাত হয়। ওই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় মনিরের বাবা বশির সিকদার বাদি হয়ে শশীভূষণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মী-সমর্থকদের আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে প্রতিপক্ষের গুলিতে মনিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, মৃতদেহে ছোটখাট জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

নিহত মনিরের বাড়ি ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াসিন মাঝির বাড়ি ও ঘটনাস্থল মহিলা  ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন। মনির পরিবার ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির সমর্থক ছিল। ফলে মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার অনুগতরা খুনের মামলায় ফেঁসে যায়।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ মো.রফিকুল ইসলাম জানান, এজাহার ভুক্ত প্রধান আসামী রিয়াদ সিকদার কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রিয়াদ টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের ছেলে। অপরাপর আসামীদের গ্রেপতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জামাল মোল্লা /ইবি টাইমস