ইউরোপ ডেস্কঃঅস্ট্রিয়ার লকডাউন শিথিলতা ও সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদারের তীব্র সমালোচনা করেছেন জার্মানি। অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী জার্মানির রাজ্য বাভারিয়ার (রাজধানী মিউনিখ) গভর্নর মার্কাস সোরডার অস্ট্রিয়ান সরকারের করোনার লকডাউন দ্রুত শিথিলতার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন,”এটি অস্ট্রিয়ার একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত!” সব খুলে দিয়ে এখন আবার সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ জোরদার অনেকটাই “দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ”।
জার্মানির সরকার প্রধান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মের্কেলর দল সিএসইউর (CSU) সাধারণ সম্পাদক মার্কাস ব্লুম মঙ্গলবার জার্মান গণমাধ্যমকে বলেছেন,বাভারিয়া অস্ট্রিয়ার সাথে তার “দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ” করার কারণে তার সীমান্ত বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। অর্থাৎ অস্ট্রিয়া জার্মানি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করায় জার্মানি এখন অস্ট্রিয়ার সাথে তার সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করার পরোক্ষ হুমকি দিয়েছে। তিনিও অস্ট্রিয়ান সরকারের দ্রুত লকডাউন শিথিলতার তীব্র সমালোচনা করেন।
অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী দেশ সমূহ যথাক্রমে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লিকটেনস্টাইন, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং স্লোভেনিয়া। অস্ট্রিয়া ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে লকডাউনে ব্যাপক শিথিলতার ঘোষণা দিলেও দেশটি বর্তমানে করোনার মিউটেশন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য অস্ট্রিয়া গতকাল ৮ জানুয়ারী থেকে করোন ভাইরাসের তৃতীয় লকডাউন ব্যবস্থায় কিছুটা শিথিল করে স্কুল,সেলুন ব্যবসা-বাণিজ্য,দোকান-পাট,যাদুঘর, চিড়িয়াখানা,গ্রন্থাগার এবং আর্ট গ্যালারী FFP2 মাস্ক বাধ্যতামূলক,সুপারমার্কেটে কেনাকাটায় ২ মিটারের সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য যেমন কাপড়ের দোকানে ২০ মিটারের মধ্যে একজন গ্রাহক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নতুন বিধিনিষেধের ফলে গতকাল প্রথমদিন বিভিন্ন দোকানে লোকজনকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,”আমরা দেখতে পেয়েছি বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় বিরাজমান বৃটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মিউটেশন বা পরিবর্তিত ভাইরাস সীমান্তে নিরাপত্তার শিথিলতার জন্যই ছড়িয়েছে।”কাজেই এখন আমরা আমাদের সীমান্তকে আর অরক্ষিত রাখতে পারি না। তিনি জনগণকে মহামারী চলাকালীন সময়ে ভ্রমণকে স্থগিত রাখতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরও জানান,অস্ট্রিয়ার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার ও অতিরিক্ত চেকিংয়ের ব্যাপারে তিনি জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সিহোফারের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। এদিকে আজ মঙ্গলবার ৯ ফেব্রুয়ারী বিকেলে অস্ট্রিয়ান সরকার মিউটেশন ভাইরাস বা দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জার্মানি ও ইতালির সীমান্তবর্তী রাজ্য Tirol কে “সীমাবদ্ধ অঞ্চল” হিসাবে ঘোষণা করেছেন। সরকার আগামী শুক্রবার ১২ ফেব্রুয়ারী থেকে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া কাউকে Tirol রাজ্য ছাড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই রাজ্যের বাহির থেকে কাউকে অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রবেশ পথে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেক পোস্ট বসানো হবে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন।
বর্তমান অস্ট্রিয়ার এই আল্পস পর্বতবেস্টিত রাজ্যে এই পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার মিউটেশন ভাইরাসে ৪০০ শতের উপরে এবং বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাসে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ১৫০ জনের উপরে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই সংখ্যা আরও কয়েক হাজার সনাক্ত হতে পারে। অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল নেহামার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্যে ঘোষিত নতুন বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের জন্য উচ্চ অর্থ জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট ব্যতীত কেহ রাজ্যের বাহিরে গেলে বা চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ জরিমানা €১,৪৫০ ইউরো জরিমানা গুনতে হবে।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১,১৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২৩১ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ২৬৭ জন,Steiermark রাজ্যে ২১০ জন,OÖ রাজ্যে ১৬০ জন,Tirol রাজ্যে ৯৮ জন, Salzburg রাজ্যে ৮৭ জন,Kärnten রাজ্যে ৮৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৪০ জন এবং Burgenland রাজ্যে ১৯ জন নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪,২৬,০৯৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৮,০৩১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪,০৪,৬৭৬ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৩,৩৪৬ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২৮৫ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৫৯৩ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস