ভিয়েনা ০৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জে একদিনেই হাসপাতালে ভর্তি ২১৯ শিশু, দুই নবজাতকের মৃত্যু

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০২:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১০৪ সময় দেখুন

মোতাহার হোসেন কাজল, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পা রাখলেই বুকটা হঠাৎ ভারী হয়ে আসে। কোথাও মায়ের কোলে কাঁপছে জ্বরাক্রান্ত শিশু, কোথাও ঠান্ডায় নীলচে হয়ে যাওয়া নবজাতককে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন অসহায় বাবা-মা। বেড নেই, জায়গা নেই, মেঝেতেই পাতানো হয়েছে চাদর। শৈত্যপ্রবাহের এই সময়ে হাসপাতালে যেন অসুস্থতার স্রোত থামছেই না।

একদিনেই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১৯ শিশু। বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪২২ জন, যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। অর্ধশতাধিক শিশু স্ক্যানু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তীব্র শীতে আক্রান্ত হয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
শিশিরে ভেজা রাত, কাঁপুনি দিয়ে শুরু হয় সকাল : শৈত্যপ্রবাহে ভারী হয়ে উঠছে হবিগঞ্জ জেলার আকাশ। সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় হাওর ও গ্রামাঞ্চল। পরদিন দুপুর পর্যন্ত শিশির ঝরে পড়ে তুষারের মতো। কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন কার্যত স্থবির।

হাওর, চা বাগান ও প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। শিশুদের ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ঘুম ভাঙে, আর বৃদ্ধরা রাতভর শীতের সঙ্গে লড়াই করে নির্ঘুম সময় কাটান। অনেক পরিবারের শরীরে নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। দরিদ্র ঘরের শিশুরা যেন সবচেয়ে সহজ শিকার হয়ে উঠেছে শীতজনিত রোগের।
কুয়াশায় হারিয়ে যাচ্ছে পথ জীবিকার ঝুঁকিতে শ্রমজীবী মানুষ : রিকশা চালক আব্দুল করিম বলেন, “সকালে কিছুই দেখা যায় না। এ ছাড়া বিকেল হলে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সব। অনেক সময় কুয়াশার কারণে পথ ভুলে যাই।” ঘন কুয়াশা শুধু চলাচল ব্যাহত করছে না, বাড়াচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। কাজের অভাবে দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক ও রিকশা চালকদের অনেকের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই শিশু ও ফসলের অসুস্থতা আর ক্ষতির শঙ্কা: কৃষক নূর জামাল বলেন, “রাতেও ঠাণ্ডা, দিনেও ঠাণ্ডা। এভাবে ঠাণ্ডা খাইতে খাইতে আমার দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চার ডায়েরিয়া হয়েছে।” তিনি জানান, টানা কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা, আলু, সরিষা ও শীতকালীন সবজিতে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।

হাসপাতালে চিকিৎসার চাপ, চোখে ক্লান্তি, তবু থামেনি সেবার চেষ্টা : হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল হক সরকার বলেন, “শিশু ও প্রবীণরা শীতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় চিকিৎসক ও সেবিকারা হিমশিম খাচ্ছেন। তবু সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” তিনি শিশু ও নবজাতকদের গরম কাপড় পরানো, হালকা গরম পানিতে গোসল করানো এবং ধুলাবালি ও ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন।

শীতের রাতে মায়ের প্রার্থনা কবে কমবে এই দুর্ভোগ: হাসপাতালের মেঝেতে বসে শিশুকে বুকে জড়িয়ে এক মা ফিসফিস করে বললেন, “আল্লাহ যেন আমার বাচ্চাটাকে ভালো করে দেন।”এই একটি প্রার্থনাতেই যেন ধরা পড়ে শীতাক্রান্ত হবিগঞ্জের হাজারো পরিবারের কষ্ট। শৈত্যপ্রবাহ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ভারী হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস, মানুষের বুক আর অসহায়ত্ব।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

হবিগঞ্জে একদিনেই হাসপাতালে ভর্তি ২১৯ শিশু, দুই নবজাতকের মৃত্যু

আপডেটের সময় ০২:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

মোতাহার হোসেন কাজল, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পা রাখলেই বুকটা হঠাৎ ভারী হয়ে আসে। কোথাও মায়ের কোলে কাঁপছে জ্বরাক্রান্ত শিশু, কোথাও ঠান্ডায় নীলচে হয়ে যাওয়া নবজাতককে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন অসহায় বাবা-মা। বেড নেই, জায়গা নেই, মেঝেতেই পাতানো হয়েছে চাদর। শৈত্যপ্রবাহের এই সময়ে হাসপাতালে যেন অসুস্থতার স্রোত থামছেই না।

একদিনেই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১৯ শিশু। বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪২২ জন, যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। অর্ধশতাধিক শিশু স্ক্যানু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তীব্র শীতে আক্রান্ত হয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
শিশিরে ভেজা রাত, কাঁপুনি দিয়ে শুরু হয় সকাল : শৈত্যপ্রবাহে ভারী হয়ে উঠছে হবিগঞ্জ জেলার আকাশ। সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় হাওর ও গ্রামাঞ্চল। পরদিন দুপুর পর্যন্ত শিশির ঝরে পড়ে তুষারের মতো। কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন কার্যত স্থবির।

হাওর, চা বাগান ও প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। শিশুদের ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ঘুম ভাঙে, আর বৃদ্ধরা রাতভর শীতের সঙ্গে লড়াই করে নির্ঘুম সময় কাটান। অনেক পরিবারের শরীরে নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। দরিদ্র ঘরের শিশুরা যেন সবচেয়ে সহজ শিকার হয়ে উঠেছে শীতজনিত রোগের।
কুয়াশায় হারিয়ে যাচ্ছে পথ জীবিকার ঝুঁকিতে শ্রমজীবী মানুষ : রিকশা চালক আব্দুল করিম বলেন, “সকালে কিছুই দেখা যায় না। এ ছাড়া বিকেল হলে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সব। অনেক সময় কুয়াশার কারণে পথ ভুলে যাই।” ঘন কুয়াশা শুধু চলাচল ব্যাহত করছে না, বাড়াচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। কাজের অভাবে দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক ও রিকশা চালকদের অনেকের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই শিশু ও ফসলের অসুস্থতা আর ক্ষতির শঙ্কা: কৃষক নূর জামাল বলেন, “রাতেও ঠাণ্ডা, দিনেও ঠাণ্ডা। এভাবে ঠাণ্ডা খাইতে খাইতে আমার দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চার ডায়েরিয়া হয়েছে।” তিনি জানান, টানা কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় বীজতলা, আলু, সরিষা ও শীতকালীন সবজিতে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।

হাসপাতালে চিকিৎসার চাপ, চোখে ক্লান্তি, তবু থামেনি সেবার চেষ্টা : হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল হক সরকার বলেন, “শিশু ও প্রবীণরা শীতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় চিকিৎসক ও সেবিকারা হিমশিম খাচ্ছেন। তবু সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” তিনি শিশু ও নবজাতকদের গরম কাপড় পরানো, হালকা গরম পানিতে গোসল করানো এবং ধুলাবালি ও ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন।

শীতের রাতে মায়ের প্রার্থনা কবে কমবে এই দুর্ভোগ: হাসপাতালের মেঝেতে বসে শিশুকে বুকে জড়িয়ে এক মা ফিসফিস করে বললেন, “আল্লাহ যেন আমার বাচ্চাটাকে ভালো করে দেন।”এই একটি প্রার্থনাতেই যেন ধরা পড়ে শীতাক্রান্ত হবিগঞ্জের হাজারো পরিবারের কষ্ট। শৈত্যপ্রবাহ যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই ভারী হচ্ছে হাসপাতালের বাতাস, মানুষের বুক আর অসহায়ত্ব।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস