ইউরোপ ডেস্কঃ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ক্রমাগত অভিবাসন নীতি কঠোর করার পথে হাঁটছে। সর্বশেষ যুক্তরাজ্যের সরকার সম্প্রতি অনিয়মিত আশ্রয়প্রার্থীদের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নেয়া বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপগুলো এই প্রতিবেদনে জানা যাবে।
‘বিদেশি অপরাধীদের’ যাতে সহজে বহিষ্কার করা যায় সেজন্য মে মাসে নয়টি সদস্য রাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আবেদন জানিয়েছে। দেশগুলো হলো ইতালি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড। ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন ব্যবহার করে বহিষ্কারে বাধা দেয়ার কারণে কিছু দেশ ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা চায় এই নিয়ম সংশোধন করা হোক৷
যুক্তরাজ্যের (ইউকে) সরকার তাদের অভিবাসন নীতি সংস্কারের ক্ষেত্রে ডেনমার্কের মডেলকে সামনে রেখেছে। ডেনমার্ক আশ্রয়প্রার্থীদের শুধু অস্থায়ী
সুরক্ষা দিয়ে থাকে যা নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। শরণার্থীর নিজ দেশের পরিস্থিতি নিরাপদ হলে ডেনমার্কে তার থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়। অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথকেও কঠিন ও দীর্ঘ করেছে দেশটি ৷
২০২৪ সালে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন আইন আনে ফ্রান্সের সরকার। এতে পরিবারিক পুনর্মিলন ভিসার সুবিধা সীমিতকরণ, সামাজিক ভাতা প্রাপ্তির সুযোগ কমানো এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান কঠোর করার বিধান রাখা হয়। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশের সাংবিধানিক পরিষদ বেশিরভাগ কঠোর বিধানগুলো বাতিল করে।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানিও আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি ‘নিরাপদ দেশের’ তালিকা বাড়ানো হয়েছে, যাতে আবেদন প্রত্যাখ্যান ও ফেরত পাঠানো সহজ হয়। এছাড়া প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারী ও বিদেশি অপরাধীর বহিষ্কারের প্রক্রিয়ায় গতি আনা হয়েছে। অবশ্য দক্ষ কর্মীদের জন্য বসবাস ও নাগরিকত্বের সুযোগও সহজ করেছে জার্মানি।
এদিকে গত জুলাই মাসে গ্রিস উত্তর আফ্রিকা থেকে সমুদ্রপথে আগত অভিবাসীদের জন্য আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া অন্তত তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। সেইসঙ্গে বেড়া তৈরি করে ও সমুদ্রে টহল বাড়িয়ে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।
আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আইন প্রণয়ন করেছে আয়ারল্যান্ড। এতে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং আপিল ব্যবস্থা দ্রুততর করা হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে আশ্রয়প্রক্রিয়া আরো কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরমধ্যে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের রাষ্ট্রীয় অর্থে আবাসনের মেয়াদ ৯০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ইউক্রেনীয় সরকারের দেয়া আবাসনগুলোতে বসবাস করছে।
অভিবাসন নিয়ম কঠোর করেছে ইতালির ডানপন্থি সরকারও। সমুদ্রপথে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদনের প্রক্রিয়ার জন্য আলবেনিয়ার সাথে একটি চুক্তি করেছে দেশটি। চুক্তিটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সালে ইইউ-এর নতুন অভিবাসন চুক্তির সঙ্গে তা কার্যকর হবে।
এছাড়া অনথিভুক্ত অভিবাসীদের আটক রাখার সময় বাড়িয়ে ১৮ মাস করা হয়েছে। সমুদ্র থেকে অভিবাসীদের উদ্ধারে এনজিওগুলোর অভিযানের প্রক্রিয়াকে সীমিতকরণ এবং বিশেষ মানবিক সুরক্ষার সুযোগ কমিয়েছে ইতালির সরকার। একইসঙ্গে ‘নিরাপদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত দেশ থেকে আগতদের জন্য দ্রুত আশ্রয় প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, যাতে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে প্রত্যাখ্যাতদের অল্প সময়ের মধ্যে বহিষ্কার করা যায়।
আশ্রয়ের নিয়ম কঠোর করার জন্য নতুন আইনি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলছে ডাচ (নেদারল্যান্ডস) পার্লামেন্টে। এটি চালু হলে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের শর্তগুলো কঠিন হবে। এছাড়া বসবাসের অনুমতির মেয়াদ তিন বছরের কম রাখা এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের সুবিধাগুলোকেও সীমিত করা হবে। পরিকল্পনাটি পূর্ববর্তী ডানপন্থি সরকার তৈরি করেছিল। তবে প্রধান দলগুলো আশ্রয়ের সংখ্যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করাকে সমর্থন করছে।
নাগরিকত্বের বিধান কঠিন করেছে পর্তুগাল: পর্তুগালের সংসদ গত জুন মাসে একটি অভিবাসন বিল অনুমোদন করেছে। এর ফলে বেশিরভাগ বিদেশি ১০ বছর বসবাসের পর দেশটির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যা বিদ্যমান সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেশী। পাশাপাশি এই আইন কার্যকর হলে নাগরিকত্ব পাওয়ার অন্য শর্তগুলোও কঠোর হবে। সংশোধিত অভিবাসন আইনে পরিবারিক পুনর্মিলনের নিয়ম কঠোর করার পক্ষেও অনুমোদন দিয়েছেন
দেশটির আইন প্রণেতারা। পরিবর্তনগুলো এখন সাংবিধানিক আদালতে পর্যালোচনার অপেক্ষায় আছে।
অর্থ দিয়ে হলেও অভিবাসীদের ফেরাতে চায় সুইডেন: অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরাতে নগদ অনুদানের পরিমান ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে সুইডেন। স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অর্থের পরিমান ১০ হাজার ক্রাউন থেকে বাড়িয়ে ৩৫০,০০০ ক্রাউন (৩৬,৯৮৫ ডলার) করা হয়েছে। এছাড়া নাগরিকত্বের নিয়ম কঠোর করার পরিকল্পনা করেছে সরকার, যার মধ্যে ভাষা ও দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের শর্ত যোগ করা হচ্ছে। গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত দ্বৈত নাগরিকদের সুইডিশ পাসপোর্ট বাতিল করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস/এম আর





















