ইউরোপীয়ান বাছাই পর্বের ‘এইচ’ গ্রুপের শেষ খেলায় বসনিয়ার বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র করে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রিয়া গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়
স্পোর্টস ডেস্কঃ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে ভিয়েনার আর্নস্ট হাপেল স্টেডিয়ামে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার জাতীয় ফুটবল দল ইউরোপীয়ান বাছাই পর্বের ‘এইচ’ গ্রুপের শেষ খেলায় ১-১ গোলে ড্র করে উত্তর আমেরিকায় (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো) ২০২৬ এর ফিফা বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করেছে।
অস্ট্রিয়ার কোচ রাল্ফ র্যাংনিক এবং তার দল তাদের একমাত্র অবশিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিরুদ্ধে রোমাঞ্চকর শেষ বাছাইপর্বে তাদের মেজাজ বজায় রেখেছিল।
খেলার ১২ মিনিটের মাথায় এক আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত গোলে অস্ট্রিয়া পিছিয়ে থাকার পরেও অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় খেলার শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত
প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে খেলেছে শক্তিশালী বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিরুদ্ধে। অস্ট্রিয়ার বদলি খেলোয়াড় মিখাইল গ্রেগোরিটশের খেলার ৭৭ মিনিটের সমতাসূচক গোলে (১-১) ১৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং উত্তর আমেরিকায় ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছে।
গত শনিবার সাইপ্রাসের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের তুলনায় অস্ট্রিয়ান জাতীয় দলের কোচ রাল্ফ র্যাংনিক বসনিয়ার বিরুদ্ধে শুরুর লাইনআপে দুটি পরিবর্তন এনেছিলেন – স্টিফান পোশ এবং রোমানো স্মিডের স্থলাভিষিক্ত হন ফিলিপ মওয়েন এবং প্যাট্রিক উইমার। সম্প্রতি ফিট না হওয়া ক্যাপ্টেন ডেভিড আলাবা বেঞ্চে বসে ছিলেন।
বসনিয়ানরা শুরু করে অস্ট্রিয়ার ক্লাব “স্টার্ম গ্রাজের” খেলোয়াড় এমির কারিচ – যার খেলার অনুমতি মাত্র সোমবার সন্ধ্যায় এসেছিল – এবং আরজান মালিককে ফুল-ব্যাক হিসেবে রেখে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার কোচ সের্গেজ বারবারেজও স্ট্রাইক পার্টনারশিপ হিসেবে এডিন ডিজেকো এবং তাবাকোভিচকে বেছে নেন।
খেলা শুরুর বাঁশি থেকে বসনিয়ানরা অনেকটাই ডিফেন্সিব খেলতে থাকে। এর ফলে অস্ট্রিয়ানরা গোলের সুযোগ তৈরি করতে হিমশিম খায়। উইমারের (৭ম মিনিট) একটি ভলি এবং ক্রিস্টোফ বাউমগার্টনারের (৯ম মিনিট) একটি হেডার উভয়ই লক্ষ্যভেদে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এরপর বসনিয়ানরা তাদের প্রথম আক্রমণাত্মক আক্রমণে আঘাত হানে খেলার ১২ মিনিটে। কর্নারের পর, গোলরক্ষক আলেকজান্ডার শ্লাগার বলটি অল্প সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে দেন, আমার মেমিচ বলটিকে বিপদের জোনে ফিরিয়ে আনেন এবং তাবাকোভিচ খুব কাছ থেকে হেড করে বলটিকে জালে জড়িয়ে (১-০) গোলে বসনিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান।
আকস্মিক গোলে অস্ট্রিয়ার খেলোয়াড়দের প্রথম কয়েক মিনিট নার্ভাস দেখাচ্ছিলো। তারপর নিজেদের সামলে নিয়ে শক্তিশালী বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার
বিরুদ্ধে আক্রমণ করে খেলতে থাকে।
খেলার ৩৫ মিনিটে অস্ট্রিয়ার একটি আকর্ষণীয় গোল ভিডিও দেখে বাতিল করেন ফিফার পর্তুগালের রেফারি। গোলটি সঠিক হলেও পূর্বে মাঝমাঠে ফাউল
করেছিল এক অস্ট্রিয়ার খেলোয়াড়। অস্ট্রিয়া খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে খেললেও প্রথমার্ধে তা আর সম্ভব হয়নি।
বিরতির পর অস্ট্রিয়ান জাতীয় ফুটবল দল নতুন উদ্যমে খেলা শুরু করে। খেলার ৪৮ মিনিটের মাথায় মওয়েনের ক্রসের পর উইমার উপরের কর্নারের বাইরে হেড করেন। দুই মিনিট পরে,বসনিয়ার তাবাকোভিচ তাদের জয় নিশ্চিত করতে পারতেন, কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ছয় গজের বক্সে বল হাতে নিজেকে খুঁজে পেয়ে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান।
দ্বিতীয়ার্ধে এটি বসনিয়ার একমাত্র বিপজ্জনক আক্রমণ ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে পুরোটা সময় খেলা হয়েছিল বসনিয়ার সীমানায়। এই সময় গোল পরিশোধের
জন্য অস্ট্রিয়া মরিয়া হয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে।
বদলি খেলোয়াড় গ্রেগোরিচ খেলার ৭৭ মিনিটে অস্ট্রিয়ার একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার হিসাবে বসনিয়ার গোলরক্ষকের ফিরিয়ে দেয়া বল জালে জড়িয়ে খেলায় সমতা আনেন (১-১)।
অস্ট্রিয়ার কোচ খেলার ৬০ মিনিটের পর গ্রেগোরিচকে মাঠে আনেন। তার এই পরিবর্তনের পদক্ষেপ যা এখন একটি মাস্টারস্ট্রোক হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে: মাত্র ১৫ মিনিট বাকি থাকতে, স্টাইরিয়ান এমন একটি গোল করেন যা তাকে অস্ট্রিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ÖFB) ইতিহাসের বইতে স্থান নিশ্চিত করেছে।
মার্সেল সাবিতজার বক্সে ক্রস দেন, আরনাউটোভিচ বলটি ভুলভাবে বিচার করেন, ভাসিলজকে বিভ্রান্ত করেন, যিনি এটি ক্রসবারে ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু গ্রেগোরিচ ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে খুব কাছ থেকে বলটি জালে ফেলে দেন।
খেলার বাকী সময় বসনিয়া ফিরে আসতে পারেনি, এবং অস্ট্রিয়া আরামে সিদ্ধান্তমূলক পয়েন্টটি খুঁজে পেয়েছিল। তবে ৮৯তম মিনিটে গ্রেগোরিচের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ান দল ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তবে বসনিয়ার গোলরক্ষক কর্নারের মাধ্যমে গোল বাঁচায়।
উল্লেখ্য যে,আগামী ৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। ড্রয়ের পর জানা যাবে অস্ট্রিয়া বিশ্বকাপ ২০২৬ এ কোন গ্রুপে খেলবে। ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে উত্তর আমেরিকার তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। স্বাগতিক এই তিন দেশ বাছাই পর্বের খেলা ছাড়াই সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এই টুর্নামেন্টে এই প্রথমবার ৪৮টি দেশ অংশগ্রহণ করবে।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস




















