শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে জমি নিয়ে বিরোধ এবং পারিবারিক কলহের জের ধরে মায়ের করা মামলায় ছেলে ফজলুল করিম ফরিদ (৫৫) এখন দিন কাটছে কারাগারে।
এদিকে আজ (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর থানা আমলি আদালতে আসামি ফজলুল করিম ফরিদ জামিন চাইলে বিচারক বাদল চন্দ্র কর্মকার জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে টাঙ্গাইল শহরের পৌর এলাকায় সন্তোষ পাতুলি পাড়ায় জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মা এ মামলার ব্যাপারে এখনও অজ্ঞাত। কারণ ভাই পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতারণার মাধ্যমে মাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।
এদিকে এ মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী আসামীর মেজো ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মুক্তাদিরুল করিম রিয়াদ। আপন ছেলে হয়ে চাচাদের সাথে হাত মিলিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করে বাবাকে জেলে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার অসহায় মা মোসাম্মৎ খুরশিদা বেগম।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের পৌর এলাকায় সন্তোষ পাতলি পাড়ার বাসিন্দা মৃত দানেশ আলীর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা জমি নিয়ে বিরোধ এবং পারিবারিক কলহের জের ধরে বড় ছেলের নামে গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর থানা আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন । যার সিআর মামলা নং ১৮১৯/২০২৫। এ মামলায় ছেলে ফজলুল করিম ফরিদ বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।
মামলায় বিবরণীতে আরো জানা যায়, আসামি ফজলুল করিম ফরিদ একজন শান্তি বিনষ্টকারী, ভবঘুরে আইন ও অমান্য কারী লোক। তিনি কোন কাজ করে না। তার প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পত্তি তাকে লিখে দেওয়ার জন্য প্রায় সময় বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও অসভ্য ভাষায় গালি গালাজ করে আসছিল বাদী কে।
এ অবস্থায় আসামী গত ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় শহরের পৌর এলাকায় সন্তোষ পাতলি পাড়ায় বাড়িতে গিয়ে আসামি তার প্রাপ্ত সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য বাদী কে লাঠি দ্বারা আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। এর পর গলায় পাড়া দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে বাদীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তার ঘরে থাকা ট্রাংকের তালা ভেঙ্গে নগদ একলক্ষ দশ হাজার টাকা চুরি করে। এ ছাড়াও ঘরের টিনের বেড়া ভেঙে ফেলা সহ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা সম্পদের ক্ষতি সাধন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করেন বাদী ফজিলাতুন্নেছা।
ফজলুল করিম ফরিদ এর স্ত্রী মোসাম্মৎ খুরশিদা বেগম জানান, শুধুমাত্র আমাদের প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি দিবে না বিধায় সম্পূর্ণ ভুয়া মামলায় ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামীকে আসামি করে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। যেখানে আমার শেষ বয়সে সন্তান পরিবার-পরিজন নিয়ে আয়েশে জীবন যাপন করার কথা। সেখানে হয়রানিমুলক মামলায় স্বামীর জামিনের জন্য এখন আমার কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি কে নিয়ে আমি আমার শ্বশুর বাড়ি যাই শাশুড়ির সাথে দেখা করতে। সে সময় আমার ননদ ফরিদা আক্তার মুকুল বলে মা’র সাথে দেখা করা যাবে না। ভাই জেলে আছে জানলে মা হার্টস্টোক করতে পারে। এতেই বুঝা যায় গভীর ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামীকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, আমার মেজো ছেলে মুক্তাদিরুল করিম রিয়াদ বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরি করে। সে চাচাদের সাথে হাত মিলিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করে বাবাকে জেলে পাঠিয়েছে। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কিছু হতে পারে না। সে ফোনে ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমাকে নিয়মিত অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। ছেলেও আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অপরদিকে আমার স্বামীর নামে ১৪ শতাংশ বাড়ির জমি হয়েছে। সেই জমি আমার শাশুড়ি ও দেবররা জোর করে দখল করে নিয়েছে। আমরা দখলে যেতে চাইলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এ পরিপেক্ষিতে আমি গত ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
ফজলুল করিম ফরিদ এর ছোট ছেলে রাথিউল করিম জানান, আমার বাবা ও চাচাদের জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বাবা কারাগারে এবং মা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হাতি নেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার চাচা নাজমুল করিম আমার মা ও বাবা কে আসামী করে গত ২৭ আগস্ট টাঙ্গাইল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল আদালতে আরেকটি মামলা করেন। মামলা নং ৯০৯/২০২৫। এই মামলাটি ভিত্তহীন ও হয়রানি মূলক মামলা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।
আসামির পক্ষের আইনজীবী মনসুর আহমেদ টিটু জানান, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিধায় এর জেরে সম্পূর্ণ ভুয়া মামলায় ষড়যন্ত্র করে ফজলুল করিম ফরিদকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলাটি মূলত একটি হয়রানিমূলক মামলা।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ জানান, জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে ফজলুল করিম ফরিদ এর স্ত্রী মোসাম্মৎ খুরশিদা বেগম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছে। সেই পরিপেক্ষিতে খুরশিদা বেগম কে সাথে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু বিষয়টি অনেক জটিলতা থাকায় সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আমার মনে হয় সঠিক তদন্ত হলে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস