নেপালে দুর্নীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জেন-জির নেতৃত্বে হওয়া দেশব্যাপী আন্দোলন ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু এবং অন্যান্য বড় শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৩৪৭ জন আহত হয়েছেন। নেপালের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ‘দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে,শুধুমাত্র কাঠমান্ডুতেই ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে
৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১ জন মারা যান। এছাড়া সুনসারির ইটাহারিতে বিক্ষোভ চলাকালে এক বিক্ষোভকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় আরেকজন BP কৈরালা ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্সেসে মারা যান।
আহতের সংখ্যা সারাদেশে ৩৪৭ জনে পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। হাসপাতালভিত্তিক আহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন, এভারেস্টে ১০২ জন, ট্রমা সেন্টারে ৫৯ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ৩৭ জন, ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১৮ জন, বীর হাসপাতালে ৬ জন, পাটনে ৪ জন, নরভিকে ৩ জন, ধরানের BP কৈরালা ইনস্টিটিউটে ২ জন, গণ্ডকী মেডিকেলে ১ জন, বিরাট মেডিকেলে ৪ জন এবং দামক হাসপাতালে ৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এভারেস্ট হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান,তাদের হাসপাতালে অন্তত চারজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে। ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক ডা. দীপেন্দ্র পান্ডে জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন দশজনের মাথা ও বুকে গুলি লেগেছে, যাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক।
কাঠমান্ডুর নতুন বানেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেল ৩:৩০টা থেকে কারফিউ জারি করা হলেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ব্যবহার করে জনতা ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একই ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখরা, বিরাটনগর, জনকপুর, হেতাউডা, নেপালগঞ্জসহ বহু শহরে।
ঝাপার দামকে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুঁড়ে মারে। পুলিশ পালটা গুলিবর্ষণ করে। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে পূর্ব–পশ্চিম মহাসড়কের কিছু অংশ অবরোধ করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে একাধিক জেলায় কারফিউ জারি করে প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে নেপালের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতি প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায়। কমিশন উল্লেখ করে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনে নিশ্চিত এবং সাম্প্রতিক সহিংসতা ও প্রাণহানি ‘গভীর উদ্বেগজনক’।
এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে জেন-জি,যারা দেশটির তরুণ প্রজন্ম। দেশের বর্তমান দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও বাকস্বাধীনতা রোধের বিরুদ্ধে এরা খুবই সোচ্চার। ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো বিক্ষোভের অগ্রভাগে রয়েছে। সকাল থেকেই হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নামে, দাবি জানায় গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার পক্ষে।
বর্তমানে হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়ে, আর পরিস্থিতি এখনও অস্থির। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করলেও, তরুণ প্রজন্মের এই গণআন্দোলন নতুন মোড় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস