ভোলায় ফের অস্ত্র উদ্ধার, কারণ জানতে চায় জনগণ

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন থেকে ৪ দিনের মাথায় আরও একটি দেশীয় সচল পাইপগান পরিত্যক্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই ইউনিয়ন থেকে গত ৪ দিন আগে দেশীয় সচল আরেকটি শার্টারগান ও ১ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছিল। উভয় ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। পুলিশের দাবি, নিয়মিত টহল ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশ এসব অস্ত্র পড়ে থাকতে দেখেছেন। যদিও স্থানীয় জনগণের দাবি পরিত্যক্ত অবস্থা থেকে অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নাটক এবং তা পুলিশের সাজানো।

ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা জানান, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মধ্যরাতে তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নিয়মিত টহল ডিউটির উদ্দেশ্যে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দকপুর গ্রামে যান। এসময় তিনি দেখেন কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশকে দেখে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ দেখতে পান কন্দকপুর গ্রামের জনৈক আলতাফ ফরাজির পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় বাঁশ ঝাড়ের নিচে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দেশীয় সচল একটি পাইপগান ফেলে রেখেছে। এরপর তিনি সেটি উদ্ধার করে তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসেন এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনার ঠিক ৪ দিন আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদুর রহমান একই ইউনিয়নের একই গ্রামে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মাদক উদ্ধার অভিযানে যায়। এসময় তিনি দেখতে পান জনৈক কাশেম পালোয়ানের বাড়ির সামনের বাঁশের ঝাড়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা একটি শার্টারগান ও ১ রাউন্ড কার্তুজ ফেলে রেখে পুলিশকে দেখে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। সেই ঘটনায়ও এসআই মাসুদুর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যদিও এখন পর্যন্ত তিনি অজ্ঞাতনামা কোনো আসামিকে আটক করতে পারেননি।

এদিকে ঘটনার ৪ দিনের মাথায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা আরও একটি অস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, হঠাৎ করে পুলিশ রাজাপুর ইউনিয়নের একই গ্রাম থেকে পরপর দুটি দেশীয় সচল অস্ত্র উদ্ধার করলেও এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেননি। স্থানীয়রা দাবি করছেন, অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার ঘটনা পুলিশের সাজানো নাটক নয়তো জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।

রাজাপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মো. শাহাজাহান বেপারি বলেন, ‘এটি পুলিশের একটি সাজানো নাটক অথবা অভিনয়। পুলিশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হয়তো এ নাটক শুরু করেছেন। তাঁর ধারণা রাজাপুর ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে আটক করার উদ্দেশ্য থেকেই পুলিশ এ নাটক করে থাকতে পারে। অথবা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এই অস্ত্র উদ্ধারের পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা তিনিসহ স্থানীয়রা জানতে চান।’

মঙ্গলবার মধ্যরাতে কন্দকপুর গ্রামের যে ওয়ার্ড থেকে পুলিশ পাইপগানটি উদ্ধার করেছে সেই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওয়াব আলী জানান, অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ তাকে কিছু জানায়নি। তিনি আজ দু’বার তদন্ত কেন্দ্রে সালিশ করেছেন। এরপরও পুলিশ তাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরী বলেন, পরপর দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ তাকে কোনো ধরনের অবগত করেননি। অস্ত্র দুটি উদ্ধার হওয়ার ঘটনা তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আপাতত তিনি অন্য কিছু জানেন না।

এ বিষয়ে জানতে ভোলা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন চন্দ্র সরকারকে দুই দফায় ফোন করা হলেও তার মুঠোফোন রিসিভ না হওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন মিঞা বলেন, নির্বাচনের আগে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। হয়তো কেউ নাশকতা করার চেষ্টা করতে পারে। তবুও বিষয়টির তদন্ত চলমান আছে, তাই আপাতত এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশিকিছু বলা সম্ভব না।

মনজুর রহমান/ইবিটাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »