ভিয়েনা ১০:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুইজারল্যান্ডে আশ্রয়প্রার্থীদের বিদেশ ভ্রমণে নতুন আইন

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৯:১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৯৯ সময় দেখুন

অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসাবে আশ্রয়প্রার্থীদের আর নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনও দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেবে না জোট নিরপেক্ষ ইউরোপীয় দেশ সুইজারল্যান্ড

ইউরোপ ডেস্কঃ শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এতথ্য জানায়। সম্প্রতি সুইস পার্লামেন্টে নেয়া এক সিদ্ধান্তের আলোকে এই ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। আগামী বছর থেকে এই নিয়ম কার্যকর করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর এই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবে সুইস সরকার।

দেশটিতে বসবাসরত সব আশ্রয়প্রার্থী, অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষার প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি কার্যকর হবে। তবে আত্মীয়স্বজনের
মৃত্যুর মতো জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে।

জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীরা সুইজারল্যান্ডের অভিবাসন বিষয়ক সচিবালয় (এসইএম)-এর কাছে ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবে। সংস্থাটি তা যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীকে নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনও দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেবে।

দেশটির ফেডারেল কাউন্সিল জানিয়েছে, অভিবাসন নীতি সংশোধনে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, ২০২১ সালে সুইস পার্লামেন্টে অনুমোদিত বিদেশি নাগরিক ও অন্তর্ভুক্তি আইনটির ধারাগুলো কার্যকর করা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হলে অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিক পালিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে সুইজারল্যান্ডে আসে। ইউক্রেনীয়দের জন্য ২০২২ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো বিশেষ সুরক্ষা ক্যাটাগরি ‘এস’ চালু করে সুইজারল্যান্ড। আর এই কারণেই এতদিন আইনটির ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

নিজ দেশে ভ্রমণ সংক্রান্ত এমন নিয়ম অস্ট্রিয়া ও জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রযোজ্য রয়েছে। তবে সুইজারল্যান্ডের এই নিষেধাজ্ঞা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নিজ দেশের পাশাপাশি তৃতীয় দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়া ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য এই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকবে। ভবিষ্যতে তারা প্রতি ছয় মাসে ১৫ দিন ইউক্রেনে থাকার অনুমতি পাবে। বর্তমানে, প্রতি তিন মাসে ১৫ দিন ইউক্রেনে থাকার অনুমতি পাচ্ছে ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শরণার্থীরা।

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) অস্থায়ীভাবে সুরক্ষা পাওয়া মানুষের জন্য প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞাকে অসম বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে পালিয়ে আসা ও নিপীড়নের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বহু পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

এক নজরে সুইজারল্যান্ড: সুইজারল্যান্ড পশ্চিম-মধ্য ইউরোপ একটি স্থলবেষ্টিত পাহাড়ি রাষ্ট্র। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। এর মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক এবং বাৎসরিক স্থূল দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ৫১২.১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাংক। এটি পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম।

সুইজারল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। এদেশে মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ৬৭,৮২৩ সুইস ফ্রাংক (২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ)। আইনত সুইজারল্যান্ডের কোনও রাজধানী না থাকলেও দেশটির কার্যত রাজধানী হচ্ছে বের্ন। অন্যতম বিখ্যাত অন্য দুটি শহর হলো জুরিখ এবং জেনেভা। জুরিখের দিকের লোকেরা জার্মানি এবং জেনেভার দিকের লোকেরা ফরাসি ভাষায় কথা বলে। আল্পস পর্বতমালা ও প্রশস্ত হ্রদ সুইজারল্যান্ডকে অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রূপে ভূষিত করেছে। বিশ্বের পর্যটকদের জন্য এটি বিশেষ আকর্ষণীয় একটি দেশ। সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি, ট্রেন এবং চকলেট খ্যাতি বিশ্বজোড়া। অবশ্য সুইস ব্যাংকসমূহ কালো টাকা নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য কুখ্যাত। দেশটির কোনও নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই। দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যমূলক ও অত্যন্ত সুস্থির। সুইস সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবছর ১লা জানুয়ারি তারিখে এর রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বৎসরের জন্য গঠিত মন্ত্রীপরিষদের একেক জন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সুইজারল্যান্ডের সাথে অস্ট্রিয়া,জার্মানি,ইতালি,ফ্রান্স ও লিশটেনস্টাইনের সীমান্ত রয়েছে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

সুইজারল্যান্ডে আশ্রয়প্রার্থীদের বিদেশ ভ্রমণে নতুন আইন

আপডেটের সময় ০৯:১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসাবে আশ্রয়প্রার্থীদের আর নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনও দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেবে না জোট নিরপেক্ষ ইউরোপীয় দেশ সুইজারল্যান্ড

ইউরোপ ডেস্কঃ শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এতথ্য জানায়। সম্প্রতি সুইস পার্লামেন্টে নেয়া এক সিদ্ধান্তের আলোকে এই ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। আগামী বছর থেকে এই নিয়ম কার্যকর করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির পর এই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবে সুইস সরকার।

দেশটিতে বসবাসরত সব আশ্রয়প্রার্থী, অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষার প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি কার্যকর হবে। তবে আত্মীয়স্বজনের
মৃত্যুর মতো জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে।

জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীরা সুইজারল্যান্ডের অভিবাসন বিষয়ক সচিবালয় (এসইএম)-এর কাছে ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবে। সংস্থাটি তা যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীকে নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনও দেশে ভ্রমণের অনুমতি দেবে।

দেশটির ফেডারেল কাউন্সিল জানিয়েছে, অভিবাসন নীতি সংশোধনে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, ২০২১ সালে সুইস পার্লামেন্টে অনুমোদিত বিদেশি নাগরিক ও অন্তর্ভুক্তি আইনটির ধারাগুলো কার্যকর করা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হলে অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিক পালিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে সুইজারল্যান্ডে আসে। ইউক্রেনীয়দের জন্য ২০২২ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো বিশেষ সুরক্ষা ক্যাটাগরি ‘এস’ চালু করে সুইজারল্যান্ড। আর এই কারণেই এতদিন আইনটির ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

নিজ দেশে ভ্রমণ সংক্রান্ত এমন নিয়ম অস্ট্রিয়া ও জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রযোজ্য রয়েছে। তবে সুইজারল্যান্ডের এই নিষেধাজ্ঞা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নিজ দেশের পাশাপাশি তৃতীয় দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে অস্থায়ী সুরক্ষা পাওয়া ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য এই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকবে। ভবিষ্যতে তারা প্রতি ছয় মাসে ১৫ দিন ইউক্রেনে থাকার অনুমতি পাবে। বর্তমানে, প্রতি তিন মাসে ১৫ দিন ইউক্রেনে থাকার অনুমতি পাচ্ছে ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শরণার্থীরা।

এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) অস্থায়ীভাবে সুরক্ষা পাওয়া মানুষের জন্য প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞাকে অসম বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে পালিয়ে আসা ও নিপীড়নের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বহু পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

এক নজরে সুইজারল্যান্ড: সুইজারল্যান্ড পশ্চিম-মধ্য ইউরোপ একটি স্থলবেষ্টিত পাহাড়ি রাষ্ট্র। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। এর মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক এবং বাৎসরিক স্থূল দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ৫১২.১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাংক। এটি পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম।

সুইজারল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। এদেশে মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ৬৭,৮২৩ সুইস ফ্রাংক (২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ)। আইনত সুইজারল্যান্ডের কোনও রাজধানী না থাকলেও দেশটির কার্যত রাজধানী হচ্ছে বের্ন। অন্যতম বিখ্যাত অন্য দুটি শহর হলো জুরিখ এবং জেনেভা। জুরিখের দিকের লোকেরা জার্মানি এবং জেনেভার দিকের লোকেরা ফরাসি ভাষায় কথা বলে। আল্পস পর্বতমালা ও প্রশস্ত হ্রদ সুইজারল্যান্ডকে অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রূপে ভূষিত করেছে। বিশ্বের পর্যটকদের জন্য এটি বিশেষ আকর্ষণীয় একটি দেশ। সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি, ট্রেন এবং চকলেট খ্যাতি বিশ্বজোড়া। অবশ্য সুইস ব্যাংকসমূহ কালো টাকা নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য কুখ্যাত। দেশটির কোনও নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই। দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যমূলক ও অত্যন্ত সুস্থির। সুইস সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবছর ১লা জানুয়ারি তারিখে এর রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বৎসরের জন্য গঠিত মন্ত্রীপরিষদের একেক জন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সুইজারল্যান্ডের সাথে অস্ট্রিয়া,জার্মানি,ইতালি,ফ্রান্স ও লিশটেনস্টাইনের সীমান্ত রয়েছে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস