শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল : প্রমত্ত্বা যমুনা নদীর উপর নবনির্মত রেল সেতুর সিরাজগঞ্জ অংশে কয়েকটি পিলারের নিচের ঝুলন্ত অংশে একাধিক চুলাকৃতির ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে শংসয় দেখা দিয়েছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ফাটলের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী রুহুল আমিন জানান, চলতি বছরের ২০ অক্টোবর তিনি সিরাজগঞ্জ ইকো পার্কে যাওয়ার সময় রেল সেতুর নিচে গেলে ফাটল লক্ষ্য করেন। পরে ফাটলগুলো পলিশ করে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে রেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয় মানুষের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
যমুনা রেলসেতুর কয়েকটি পিলারে ফাটলের মতো দাগ দেখা যাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবি ঘিরে সেতুর নির্মাণমান ও অনিয়ম নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
রেলসেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, সেতুতে কোনো গঠনগত ত্রুটি হয়নি। প্রচণ্ড গরমের প্রভাবে পিলারের নিচের অংশে খুব সূক্ষ্ম ‘চুল আকৃতির ফাঁকা’ (হেয়ার ক্র্যাক) তৈরি হয়েছে- যা কংক্রিটের শক্তি বা স্থায়িত্বে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, এসব ফাঁকা সাধারণত শূন্য দশমিক এক থেকে তিন মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে- যা কংক্রিটের স্বাভাবিক প্রসারণ ও সংকোচনের কারণে ঘটে থাকে।
যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী নাইমুল হক জানান, পশ্চিম প্রান্তের ৮ থেকে ১০টি পিলারে এই ধরনের অতিক্ষুদ্র ফাঁকা দেখা গেছে। সেগুলো ঘষে বিশেষ আঠা বা রেজিন দিয়ে পূরণের কাজ চলছে। এগুলো মূলত ফাটল নয় বরং তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষুদ্র রেখা। এগুলো সেতুর কাঠামো বা ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তায় কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না।
রেল সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্রজেক্ট ম্যানেজার) মার্ক হ্যাবি জানান, এটি তাপমাত্রাজনিত হেয়ার ক্র্যাক, নির্মাণজনিত কোনো ত্রুটি নয়। এগুলো সেতুর কংক্রিট কাঠামো বা স্থাপনার জন্য ক্ষতিকর নয়।
তিনি আরো জানান, ফাটলগুলো রেজিন বা বিশেষ আঠার মিশ্রণ দিয়ে একে একে রিপেয়ার করা হচ্ছে এবং সেতুর স্থায়িত্ব বা ট্রেন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়বে না।
প্রকাশ, চলতি বছরের ১৮ মার্চ উদ্বোধন হওয়া ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ডুয়েল গেজ রেলসেতুটি দেশের প্রথম এবং সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে রেল যোগাযোগে নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিয়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ অর্থ, বাকিটা বহন করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেতুটি জাপানের ওটিজি ও আইএইচআই কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করেছে।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস



















