ভিয়েনা ০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুসলিম দেশগুলো ন্যাটোর আদলে যৌথ বাহিনী গঠন করতে পারে

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৮:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৯৭ সময় দেখুন

ইসরায়েল কাতারে হামলা করার এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানী দোহায় আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি মুসলিম দেশের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যৌথ সম্মেলনে প্রায় ৬০টি সদস্যদেশ অংশ নেয়। এসব দেশের নেতারা বলেছেন, ইসরায়েলের নজিরবিহীন আগ্রাসনের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়ার জন্য এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত সপ্তাহে দোহায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এ সময় হামাস নেতারা যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। নজিরবিহীন ওই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সম্মেলনে স্বাগতিক কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার দেশের রাজধানী একটি বিশ্বাসঘাতী হামলার শিকার হয়েছে। হামাস নেতাদের পরিবার এবং সংগঠনটির আলোচক প্রতিনিধিদলের আবাসস্থলকে লক্ষ্য করে এ হামলা করা হয়।’

শেখ তামিম বলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল। কারণ, তারা আলাপ-আলোচনা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।

কাতারের আমির আরও বলেন, ‘যদি তারা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়, তবে কেন সব আলোচককে হত্যা করল? ইসরায়েল যেখানে আমাদের দেশে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে হামলা চালাল, সেখানে আমরা কীভাবে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানাব?’

শেখ তামিম বলেন, নেতানিয়াহু আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এটি বিপজ্জনক বিভ্রম। ইসরায়েল এখনো তার একগুঁয়ে মনোভাব বজায় রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জেদ দেখাচ্ছে।

সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী মানসিকতার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা, যা অরাজকতা ও রক্তপাতের ওপর টিকে আছে। এই মানসিকতা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। অপরাধের শাস্তি না হওয়ায় এ মানসিকতা বদলাচ্ছে না।’

এরদোয়ান আরও বলেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে লোভী ও রক্তপিপাসু মনোভাব বিদ্যমান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।

এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অতীতের নজির অনুযায়ী এমন চাপ কার্যকর। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি, জাতিগত নিধন কিংবা বিভাজন মেনে নিতে পারি না।’

এদিকে সম্মেলনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, কাতারের ভূখণ্ডে এই ঘৃণ্য হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।

ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের জনগণকে বলছি, যা এখন ঘটছে তা বিদ্যমান শান্তিচুক্তিগুলোকে ভন্ডুল করে দিচ্ছে। এর ফলাফল ভয়ংকর হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে যে তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব জোরজবরদস্তি দিয়ে অর্জিত হবে না, বরং অন্য রাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হতে পারে।

সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘নেতাদের ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করা উচিত, যাতে তাঁরা একজোট হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। আমাদের এই হুমকির মোকাবিলা করতে হবে। আর কোনো অপরাধ সহ্য করা হবে না। গাজা, বৈরুত কিংবা ইয়েমেনে যা হচ্ছে, তাতে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই।’

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, ‘যেকোনো আরব বা ইসলামি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ আল-সুদানি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিন্দা নয়, বরং সমন্বিতভাবে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

আল–সুদানি একটি যৌথ আরব-ইসলামিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরবে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি বিস্তৃত রূপরেখা তৈরিরও আহ্বান জানান তিনি।

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েল যে সীমাহীন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তারই জীবন্ত প্রমাণ দোহায় হামলা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হতে হবে স্পষ্ট, দৃঢ় এবং সবচেয়ে বড় কথা—প্রতিরোধমূলক।’

বাদশাহ আবদুল্লাহ জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করা, গাজায় যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে এই শীর্ষ সম্মেলনকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, তারা যেন ইসরায়েলের অপরাধ এবং আমাদের দেশ ও জনগণের ওপর বারবার হামলার জন্য দেশটিকে দায়ী ও জবাবদিহি করে। তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’

মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী সরকার আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার কোনো অংশীদার হতে পারে না। এই দুষ্ট রাষ্ট্র এবং তার আচরণের অবসান ঘটাতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শক্ত অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, নিন্দা করলে ক্ষেপণাস্ত্র থামবে না। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করবে। কড়া ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো বন্ধ করার পাশাপাশি সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জিবরান রাকাবুমিং রাকা বলেন, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন শুধু ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে নয়। এটি আমাদের জাতির টিকে থাকা, আমাদের জনগণের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক আইনের পবিত্রতারও প্রশ্ন।’

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এই সম্মেলন থেকে শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত নিন্দা জানালেই চলবে না। বরং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে কঠোর ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাতারের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা: উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহামেদ আল-বুদাইয়ি বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা, তারা ইসরায়েলের ওপর নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করবে, যাতে তারা এই আচরণ বন্ধ করে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা বলেন, ‘এই সম্মেলন ভয়াবহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের একটি সুযোগ।’ ব্রামিহ বলেন, ‘আমরা কাতারের রাষ্ট্রীয় ও ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বে হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করছি।’

ওআইসির মহাসচিব আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দায়িত্ব নিতে’ ও ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে জোর দেন।

আরব লীগ: আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত বলেন, অপরাধের প্রতি নীরব থাকা নিজেই একটি অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের প্রতি নীরবতা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

মুসলিম দেশগুলো ন্যাটোর আদলে যৌথ বাহিনী গঠন করতে পারে

আপডেটের সময় ০৮:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসরায়েল কাতারে হামলা করার এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানী দোহায় আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি মুসলিম দেশের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যৌথ সম্মেলনে প্রায় ৬০টি সদস্যদেশ অংশ নেয়। এসব দেশের নেতারা বলেছেন, ইসরায়েলের নজিরবিহীন আগ্রাসনের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়ার জন্য এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত সপ্তাহে দোহায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এ সময় হামাস নেতারা যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। নজিরবিহীন ওই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সম্মেলনে স্বাগতিক কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার দেশের রাজধানী একটি বিশ্বাসঘাতী হামলার শিকার হয়েছে। হামাস নেতাদের পরিবার এবং সংগঠনটির আলোচক প্রতিনিধিদলের আবাসস্থলকে লক্ষ্য করে এ হামলা করা হয়।’

শেখ তামিম বলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল। কারণ, তারা আলাপ-আলোচনা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।

কাতারের আমির আরও বলেন, ‘যদি তারা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়, তবে কেন সব আলোচককে হত্যা করল? ইসরায়েল যেখানে আমাদের দেশে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে হামলা চালাল, সেখানে আমরা কীভাবে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানাব?’

শেখ তামিম বলেন, নেতানিয়াহু আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এটি বিপজ্জনক বিভ্রম। ইসরায়েল এখনো তার একগুঁয়ে মনোভাব বজায় রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জেদ দেখাচ্ছে।

সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী মানসিকতার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা, যা অরাজকতা ও রক্তপাতের ওপর টিকে আছে। এই মানসিকতা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। অপরাধের শাস্তি না হওয়ায় এ মানসিকতা বদলাচ্ছে না।’

এরদোয়ান আরও বলেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে লোভী ও রক্তপিপাসু মনোভাব বিদ্যমান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।

এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অতীতের নজির অনুযায়ী এমন চাপ কার্যকর। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি, জাতিগত নিধন কিংবা বিভাজন মেনে নিতে পারি না।’

এদিকে সম্মেলনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, কাতারের ভূখণ্ডে এই ঘৃণ্য হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।

ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের জনগণকে বলছি, যা এখন ঘটছে তা বিদ্যমান শান্তিচুক্তিগুলোকে ভন্ডুল করে দিচ্ছে। এর ফলাফল ভয়ংকর হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে যে তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব জোরজবরদস্তি দিয়ে অর্জিত হবে না, বরং অন্য রাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হতে পারে।

সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘নেতাদের ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করা উচিত, যাতে তাঁরা একজোট হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। আমাদের এই হুমকির মোকাবিলা করতে হবে। আর কোনো অপরাধ সহ্য করা হবে না। গাজা, বৈরুত কিংবা ইয়েমেনে যা হচ্ছে, তাতে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই।’

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, ‘যেকোনো আরব বা ইসলামি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ আল-সুদানি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিন্দা নয়, বরং সমন্বিতভাবে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

আল–সুদানি একটি যৌথ আরব-ইসলামিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরবে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি বিস্তৃত রূপরেখা তৈরিরও আহ্বান জানান তিনি।

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েল যে সীমাহীন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তারই জীবন্ত প্রমাণ দোহায় হামলা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হতে হবে স্পষ্ট, দৃঢ় এবং সবচেয়ে বড় কথা—প্রতিরোধমূলক।’

বাদশাহ আবদুল্লাহ জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করা, গাজায় যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে এই শীর্ষ সম্মেলনকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, তারা যেন ইসরায়েলের অপরাধ এবং আমাদের দেশ ও জনগণের ওপর বারবার হামলার জন্য দেশটিকে দায়ী ও জবাবদিহি করে। তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’

মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী সরকার আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার কোনো অংশীদার হতে পারে না। এই দুষ্ট রাষ্ট্র এবং তার আচরণের অবসান ঘটাতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শক্ত অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, নিন্দা করলে ক্ষেপণাস্ত্র থামবে না। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করবে। কড়া ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো বন্ধ করার পাশাপাশি সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জিবরান রাকাবুমিং রাকা বলেন, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন শুধু ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে নয়। এটি আমাদের জাতির টিকে থাকা, আমাদের জনগণের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক আইনের পবিত্রতারও প্রশ্ন।’

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এই সম্মেলন থেকে শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত নিন্দা জানালেই চলবে না। বরং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে কঠোর ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাতারের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা: উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহামেদ আল-বুদাইয়ি বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা, তারা ইসরায়েলের ওপর নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করবে, যাতে তারা এই আচরণ বন্ধ করে।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা বলেন, ‘এই সম্মেলন ভয়াবহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের একটি সুযোগ।’ ব্রামিহ বলেন, ‘আমরা কাতারের রাষ্ট্রীয় ও ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বে হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করছি।’

ওআইসির মহাসচিব আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দায়িত্ব নিতে’ ও ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে জোর দেন।

আরব লীগ: আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত বলেন, অপরাধের প্রতি নীরব থাকা নিজেই একটি অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের প্রতি নীরবতা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস