তৃতীয় দেশে আশ্রয় স্থানান্তরে আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা – কাউন্সিল অব ইউরোপ

আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণে আশ্রয়প্রার্থীদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের নীতি থেকে সরে আসতে ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কাউন্সিল অব ইউরোপ

ইউরোপ ডেস্কঃ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত অভিবাসন বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস এতথ্য জানিয়েছে। কাউন্সিল অব ইউরোপ বলছে, এই নীতির কারণে নির্যাতন বা হত্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন আশ্রয়প্রার্থীরা ৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ৷ এক্ষেত্রে সবার শুরুতে আসে ইতালির নাম৷ কারণ, দেশটির কট্টর ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি আলবেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে দেশটিতে অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ৷ কিন্তু আদালতের কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি৷ যদিও বিকল্প পন্থা হিসেবে কেন্দ্রগুলোকে অভিবাসী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে রূপ দিয়েছে ইতালি ৷

এছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ আরও কয়েকটি দেশ তৃতীয় দেশে আশ্রয় ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে৷ এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নও তৃতীয় কোনও দেশে রিটার্ন হাব বা প্রত্যাবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা পেশ করেছে ৷

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কাউন্সিল অব ইউরোপের মানবাধিকার কমিশনার মাইকেল ও’ফ্ল্যাহার্টি বলেছেন, ‘‘বহির্মুখীকরণ নীতির ফলে মানুষ নির্যাতন বা অন্যান্য অশোভন আচরণ, সম্মিলিত বহিষ্কার এবং নির্বিচারে আটকের শিকার হতে পারেন৷ এমনকি, তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যেও ফেলতে পারে ৷’’

তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এই ধরনের নীতি আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তাদের আইনি সহায়তার চাওয়ার সুযোগকেও বঞ্চিত করতে পারে৷’’ ইউরোপের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা কাউন্সিল অব ইউরোপের নতুন এক প্রতিবেদনে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এগুলো হলো: তৃতীয় দেশে আশ্রয় প্রক্রিয়া স্থানান্তর, তৃতীয় দেশ থেকে প্রত্যাবাসন, এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কোসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের ইউরোপমুখী যাত্রা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশগুলো ৷ এসব চুক্তিগুলো নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে৷ কারণ, লিবিয়া ও তিউনিশিয়ায় অভিবাসীরা নির্যাতন, দাসত্ব, অত্যাচার, ধর্ষণ ও বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ৷

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর বন্ধে রায় দিয়েছিল৷ ইইউ ছেড়ে যাওয়া ব্রিটেনও কাউন্সিল অব ইউরোপের সদস্য ৷ দেশটি সম্প্রতি ফ্রান্সের সঙ্গে ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ নামে একটি চুক্তি করেছে৷ এই চুক্তির আওতায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের আটক করে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে৷ পরিবর্তে ফ্রান্সে থেকে সমান সংখ্যক অভিবাসীকে নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আসার অনুমতি দেয়া হবে ৷

কাউন্সিল অব ইউরোপ হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা৷ এটি ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংস্থাটির সদর দপ্তর ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে৷ এটি মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে৷ সংস্থাটির ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে ৷

কাউন্সিল অব ইউরোপের আইনি ভিত্তি হলো ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর)৷ এই আদালত ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনটি কার্যকর করে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলো আইনগতভাবে মানতে বাধ্য থাকে ৷

কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ নয়৷ সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইইউ সদস্য না হয়েও তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৷ রাশিয়াও এই সংস্থার সদস্য ছিল, কিন্তু ইউক্রেনে আক্রমণের জের ধরে দেশটিকে বহিষ্কার করা হয় ৷

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস/এম আর 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »