শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ইউএনও’র জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন তার স্বামী। রোজ সকালে অফিসে যাওয়া ও অফিস শেষে বাড়ি ফেরার কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই গাড়ি। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে উপজেলাজুড়ে৷ এই প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ইউএনও’র সরকারি গাড়িকে তার স্বামীর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের দৃশ্য। তবে পাম্পে তেল নিতে এসেছেন বলে দাবি ইউএনও’র স্বামী ও গাড়ির ড্রাইভারের।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাসের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি পাজেরো স্পোর্টস ব্রান্ডের নতুন মডেলের গাড়িটি পার্কিং করা আছে গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড নামক এলাকায়৷ এর কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তির ইশারায় গাড়িটি তার দিয়ে এগিয়ে যায়৷ পরে এই প্রতিবেদক গাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে ড্রাইভার আব্দুল কাদের জানান,এটি ইউএনও’র গাড়ি। পাম্পে তেল নিতে এসেছেন। ভেতরে বসে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ইউএনও’র স্বামী হিসেবে পরিচয় দেন। এসময় সরকারি গাড়ি তার স্বামী ব্যবহার করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে পাম্পে তেল নিতে এসেছেন বলে জানান গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল কাদের ও ইউএনও’র স্বামী। এছাড়াও নিয়মিত গাড়িটি ব্যবহারের বিষয়ও অস্বীকার করেন তারা।
জানা যায়, রোজই নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য এই গাড়ি ব্যবহার করছেন ইউএনও’র ব্যাংকার স্বামী। নিকটেই স্বামী স্ত্রীর চাকরির সুবাদে দু’জন একসাথেই বসবাস করেন। তাই প্রতিদিন সকালে শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে জেলা শহরের অফিসে যাওয়ার সময় সরকারি গাড়িটি তার অপেক্ষায় থাকে। বাসা থেকে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গাড়াগঞ্জ নামক স্থানে নামিয়ে দেন৷ যার দুরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। এরপর সন্ধ্যা লাগতেই আবার একই স্থানে সরকারি এই গাড়িটি গিয়ে অপেক্ষা করে ইউএনও’র স্বামীর জন্য। তিনি আসলে তাকে নিয়ে যান শৈলকুপা শহরে। এভাবে প্রতিদিন ইউএনও’র স্বামীকে নিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যাত্রা করে গাড়িটি। যা সরকারি বিধিমালায় সম্পূর্ণ নিষেধ। নিয়ম ভেঙে (প্রাধিকার বহির্ভূত) সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধের (বারিতকরণ) নির্দেশনাও দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রকল্প ও সরকারি দপ্তর-বিভাগগুলোর গাড়ি অবৈধভাবে ব্যবহার বন্ধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়,সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে,প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু কর্মচারী প্রচলিত বিধি ও প্রাধিকার বহির্ভূতভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারীর প্রাধিকার বহির্ভূত গাড়ি ব্যবহারের এমন প্রবণতার ফলে একদিকে যেমন জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও আর্থিক অপচয়ের কারণ ঘটছে। অন্যদিকে তেমনি নৈতিকতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে সমাজে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকারের দায়িত্ব সচেতনতা সম্পর্কেও জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ ধারণা তৈরি হচ্ছে। সরকার এ ধরনের বিষয়ে অনমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে।
এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং আওতাধীন দপ্তর/সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের প্রাধিকার বহির্ভূত গাড়ি ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ (বারিত) করতে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে ইউএনও’র গাড়ির ভিডিও করার ঘটনাটি জানাজানি হলে ইউএনও ফোন করেন এই প্রতিবেদককে৷ তিনি নিজের দোষ ঢাকতে উল্টো এই প্রতিবেদকে হুমকি দেন। তার কাছে না শুনে কেন ভিডিও করা হয়েছে এ বিষয়ে জেরা করেন। ইউএনও স্নিগ্ধা দাস এই প্রতিবেদককে বলেন,আপনি মব সৃষ্টি করে আমার গাড়ি আটকে ভিডিও করেছেন। ভিডিও করার আগে আমার কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। অনুমতি না নিয়ে আমার স্বামীকে হেরাসমেন্ট করেছেন। আমার অনুমতি ছাড়া আপনি এটা করতে পারেন না। এরপর সাংবাদিকতার এথিক্স সম্পর্কে জ্ঞান দেন তিনি।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস