রবিবার দিবাগত রাতে পূর্ব আফগানিস্তানে রিক্টার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আফগান সরকারের মুখপাত্র মাওলাভি জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে দেশটির পূর্বের কুনার প্রদেশে মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৮১২, আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০০ মানুষ। ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ আফগানিস্তানের অন্তত পাঁচটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্প বিষয়ে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, উদ্ধার অভিযান চলতে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য যে,আফগানিস্তান প্রাকৃতিক ভূমিকম্পের প্রবণ এলাকায় রয়েছে। দেশটি ভারত ও ইউরেশিয়ার টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত, যা একটি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চল।
গতকাল রবিবার (৩১ আগস্ট) রাতের ভূমিকম্পের ধাক্কা পাকিস্তানের কিছু অংশেও অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাজধানী ইসলামাবাদ। তবে সেখানে কোনও হতাহতের বা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের সিসমোলজি সেন্টারের পরিচালক নাজিব আহমদ আমির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ হওয়া ভূমিকম্পের পর অন্তত নয়টি আফটার শক রেকর্ড হয়েছে। তিনি বলেন, আফটার শক আরও দুই দিন পর্যন্ত চলতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (USGS) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্প এবং প্রথম পাঁচটি আফটার শকে পুরো রাতজুড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ তীব্র বা অত্যন্ত তীব্র ভূকম্পন অনুভব করেছেন।
অনেক পরিবার সদস্যের অর্ধেকই হারিয়েছে আফগানিস্তানের আরটিএ সম্প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে কয়েকজন ভূমিকম্প বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যারা বর্তমানে আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দেশটির পূর্বাঞ্চলের কুনার প্রদেশের এক ছোট গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আজম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি তার ছেলে, তিন কন্যা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয়কে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, যখন ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, তখন ছাদ ধসে পড়ে। আমাদের
পরিবারের মধ্যে মাত্র দুইজনই বেঁচে আছি।
আরেকজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেছিলেন, তার বাড়ি ধসে পড়ার সময় তিনি রাস্তায় বেরিয়ে যান এবং পরিবারের সদস্যদের ভিতরে আটকা পড়া দেখেন, যারা উদ্ধার হওয়ার জন্য মিনতি করছিল।
তিনি বলেন, প্রথমে আমরা শিশুদের উদ্ধার করি এবং তারপর মাটি ও ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে অন্যদেরও বের করি। এই দুর্যোগে অনেক পরিবার তাদের অর্ধেক সদস্য হারিয়েছে।
আফগানিস্তানের নুরগাল জেলায় কৃষি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং সীমিত টেলিযোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন দূরবর্তী এলাকায় মানুষ রাস্তা সচর করার কাজে ছুটে গেছে।
তিনি বলেন, “খুব ভীতির ও উত্তেজনার পরিবেশ ছিল, শিশু ও নারীরা চিৎকার করছিল। আমাদের জীবনে এমন কিছু কখনও অভিজ্ঞতা হয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে বসবাসকারী অনেক মানুষই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসা চার মিলিয়নের বেশি আফগানদের মধ্যে ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, আফগানিস্তানে ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাবের মুখোমুখি হলো এবার। দোহায় অবস্থানকারী তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেন, উদ্ধার সংক্রান্ত তথ্য এখনও পুরোপুরি পাওয়া যায়নি, তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি জানান, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ক্ষেত্র হাসপাতাল, উদ্ধার সরঞ্জাম, আশ্রয়, খাদ্য ও পরিষ্কার পানির প্রয়োজন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস