বাধন রায়ঃ ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন কমলেও বাংলাদেশিদের আবেদন বেড়েছে । এই বছরের মার্চ মাসের ৩ তারিখ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় সংস্থা ইউরোপীয ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলাম (ইইউএএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে ।
২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মোট ১০ লাখ ১৪ হাজার আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে যা ২০২৩ সালের তুলনায় সংখ্যাটি ১১ শতাংশ কম। এই প্রতিবেদনে দেখা যায় যে ২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় চেয়েছিলো কিন্তু ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৩৩২ জন। তবে এখানে বাংলাদেশিদের আবেদন বাড়ার পিছনে কারনটা পরিষ্কার করা হয় নি । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিবাসীদের যাবার পথটা সুখকর নয় । অবৈধ ভাবে ইউরোপে যাবার আসায় বাংলাদেশীরা দালালের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে ।
এই বছরে ফ্রেরুযারি ১ তারিখে লিবিয়ার ভূম্যসাগরে উপকূলে ২০ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয় স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে । এ ছাড়া চলতি বছরে অবৈধভাবে ইটালি যাওয়ার পথে মাদারীপুর জেলার অন্তত ১৬ জন মারা গেছে । এই রিপোর্টে বাংলাদেশিদের আবেদন বাড়ার কারন সম্পর্কে কিছু না বললে ও আশ্রয় প্রাথীদের কমার কারন সম্র্পকে ইইউ-এর কড়াকড়ি অভিবাসন নীতি, সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক অভিবাসন প্রবাহে পরিবর্তনকেই আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা কমার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা, তুরুস্ক ,কলম্বিয়া,পাকিস্তান বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া এবং ইরান থেকে সর্বাধিক সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে । আবেদনের মধ্যে সামাজিক অস্থিরতাজনিত দুটি দেশ সিরিয়া এবং আফগানিস্তান আবেদনের শতকরা ৯০ শতাংশকে ও আফগানিস্তানের শতকরা ৬৩ শতাংশকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে । সিরিয়া আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার ও আফগানিস্তানে ৮৭ হাজার নাগরিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন । এছাড়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তুরস্ক থেকে ৫৮ হাজার, কলম্বিয়া থেকে ৫৩ হাজার এবং ভেনেজুয়েলা থেকে ৬০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ১০ লাখের বেশি লোক আশ্রয়ের আবেদন করে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম।
জার্মানিতে আবেদন করে দুই লাখ ৩৭ হাজার লোক, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম। জার্মানির পর স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্সের প্রতিটি দেশে এক লাখ ৬০ হাজার আশ্রয়প্রত্যাশী আবেদন করেছিল। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আশ্রয় নেবার হার ২০২৪ সালেও উল্লেখযোগ্য ছিল।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্য দেশ ইটালি । অসংখ্য বিপদ থাকলে ও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে প্রবেশের হারও বেড়েছে । ইতালিতে সর্বাধিক ৩৩ হাজার ৪৫৫ বাংলাদেশি আশ্রয় চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৪৪৮ জন। গত বছর ইতালিতে আশ্রয় প্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল মোট আবেদনকারীর ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে আবেদনের সংখ্যা অবশ্য কমেছে। ২০২৩ সালে ছিলেন ১০ হাজার ২১৫ জন কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে হয়েছে ছয় হাজার ৪২৯ জন। এ ছাড়া গ্রিসে ২০২৩ সালে আবেদন করেছিল ৬৪০ বাংলাদেশি। গত বছর আবেদন করেছিল এক হাজার ৪ জন।
ইইউএএ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশি আশ্রয়প্রত্যাশীদের প্রায় চার শতাংশকে ২০২৪ সালে রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন । যা মোট আবেদনকারীদের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এই আবেদনের মাত্র ৪ শতাংশ বৈধতা এতে করে বাকি ৯৬ শতাংশ লোকের বৈধতা না পাওয়া অনেক অংশেই সন্তোষজনক নয়। এতে করে অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রার ভবিষৎ বাংলাদেশিদের জন্য সুখকর নয় ।
ডেস্ক/ইবিটাইমস/এম আর























