ভিয়েনা ১১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাপানের সুজুকি মোটরসের কর্ণধার ওসামু সুজুকি আর নেই

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৪:২৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৩ সময় দেখুন

বিশ্বখ্যাত সুজুকি মোটরসের কর্ণধার ওসামু সুজুকি গাড়ি ও মোটরসাইকেল (অটোমোবাইল) প্রস্তুতকারী জাপানি কোম্পানি সুজুকি মোটরসের চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাপানের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এতথ্য জানায়। সংবাদ বলা হয়,২৫ ডিসেম্বর রাজধানী টোকিওর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন তিনি। দেরিতে তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের কোনও কারণ উল্লেখ
করা হয়নি।

লিম্ফোমা নামক এক প্রকার রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়স্ক ওসামু মারা যান বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সুজুকি মোটরস। ওসামু সুজুকি তার সময়ের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। মূলত তার সুদূরপ্রসারী বাণিজ্যিক পরিকল্পনার সুবাদেই সর্বপ্রথম মধ্যবিত্তের নাগালে আসে মোটরগাড়ি।

বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের সীমিত বাজেটের লোকজনদের প্রথম গাড়ি বলা হয় যেটিকে, সেই মারুতি-সুজুকি’র বাজারে আসা অসম্ভব হয়ে পড়তো যদি তিনি এর পেছনে না থাকতেন। তিনি ছিলেন সেইসব শিল্পপতিদের দলে, যারা সস্তার মধ্যে সেরা পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে চাইতেন। এখন পর্যন্ত সুজুকির প্রধান গ্রাহক মূলত মধ্যবিত্ত লোকজন।

ওসামু ব্যবসায়ীক পরিবার থেকে আসেননি। বিয়ে করার আগ পর্যন্ত তার নাম ছিল ওসামু মাৎসুদা এবং কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ব্যাংকে চাকরির মধ্যে দিয়ে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সুজুকি মোটরসের তৎকালীন মালিকের মেয়েকে বিয়ে করেন ওসামু। তখনও ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।

সুজুকি মোটরসের মালিকের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় এক সময় কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব আসে তার হাতে। জাপানের সংস্কৃতি অনুসারে, স্বামী যদি স্ত্রী বা শ্বশুরের কোনো বড় স্থাবর সম্পত্তির মালিক হন, তখন নিজের নামের পদবি বাদ দিয়ে শ্বশুরবাড়ির পদবি গ্রহণ করতে হয়। সেই রীতি মেনে ‘মাৎসুদা’ পদবি বাদ দিয়ে ‘সুজুকি’ এবং ১৯৫৮ সালে সুজুকি মোটরসের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

তিনি যখন কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীর পদে আসেন, সে সময় লোকসান ও ব্যাংক ঋণের চাপে প্রায় ডুবতে বসেছিল সুজুকি মোটরস। দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে কোম্পানিকে সেই অবস্থা থেকে টেনে তোলেন তিনি।

আজ সুজুকি মোটরসের যে অবস্থা, তার শুরু ৭০ এবং আশির দশকে। ১৯৭১ সালে ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি মারুতির সঙ্গে অংশীদার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয় সুজুকি মোটরস এবং সেই চুক্তির ফসল মারুতি-সুজুকি গাড়ি, যা ইতোমধ্যে ভারতীয় মধ্যবিত্তের প্রথম গাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পরে ১৯৭৯ সালে ‘অল্টো মিনিভেহিকেল’ নামের একটি গাড়ি বাজারে ছাড়ে সুজুকি মোটরস, যা সে সময় মধ্যবিত্ত ক্রেতা-গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

ব্যক্তিগত জীবনে মিতব্যয়িতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন ওসামু সুজুকি। এসির খরচ বাঁচাতে তিনি তার অফিস ও কারখানার ছাদ বিশেষভাবে তৈরি করেছিলেন, বিমান ভ্রমণের বেলায় সবসময় ইকোনমি ক্লাস বেছে নিতেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও কোনো আড়ম্বরতার ছাপ তার মধ্যে ছিল না বলে জানিয়েছেন ওসামুর পরিচিত ও স্বজনরা।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

জাপানের সুজুকি মোটরসের কর্ণধার ওসামু সুজুকি আর নেই

আপডেটের সময় ০৪:২৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বখ্যাত সুজুকি মোটরসের কর্ণধার ওসামু সুজুকি গাড়ি ও মোটরসাইকেল (অটোমোবাইল) প্রস্তুতকারী জাপানি কোম্পানি সুজুকি মোটরসের চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাপানের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এতথ্য জানায়। সংবাদ বলা হয়,২৫ ডিসেম্বর রাজধানী টোকিওর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন তিনি। দেরিতে তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের কোনও কারণ উল্লেখ
করা হয়নি।

লিম্ফোমা নামক এক প্রকার রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়স্ক ওসামু মারা যান বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সুজুকি মোটরস। ওসামু সুজুকি তার সময়ের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। মূলত তার সুদূরপ্রসারী বাণিজ্যিক পরিকল্পনার সুবাদেই সর্বপ্রথম মধ্যবিত্তের নাগালে আসে মোটরগাড়ি।

বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের সীমিত বাজেটের লোকজনদের প্রথম গাড়ি বলা হয় যেটিকে, সেই মারুতি-সুজুকি’র বাজারে আসা অসম্ভব হয়ে পড়তো যদি তিনি এর পেছনে না থাকতেন। তিনি ছিলেন সেইসব শিল্পপতিদের দলে, যারা সস্তার মধ্যে সেরা পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে চাইতেন। এখন পর্যন্ত সুজুকির প্রধান গ্রাহক মূলত মধ্যবিত্ত লোকজন।

ওসামু ব্যবসায়ীক পরিবার থেকে আসেননি। বিয়ে করার আগ পর্যন্ত তার নাম ছিল ওসামু মাৎসুদা এবং কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ব্যাংকে চাকরির মধ্যে দিয়ে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সুজুকি মোটরসের তৎকালীন মালিকের মেয়েকে বিয়ে করেন ওসামু। তখনও ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।

সুজুকি মোটরসের মালিকের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় এক সময় কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব আসে তার হাতে। জাপানের সংস্কৃতি অনুসারে, স্বামী যদি স্ত্রী বা শ্বশুরের কোনো বড় স্থাবর সম্পত্তির মালিক হন, তখন নিজের নামের পদবি বাদ দিয়ে শ্বশুরবাড়ির পদবি গ্রহণ করতে হয়। সেই রীতি মেনে ‘মাৎসুদা’ পদবি বাদ দিয়ে ‘সুজুকি’ এবং ১৯৫৮ সালে সুজুকি মোটরসের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

তিনি যখন কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীর পদে আসেন, সে সময় লোকসান ও ব্যাংক ঋণের চাপে প্রায় ডুবতে বসেছিল সুজুকি মোটরস। দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে কোম্পানিকে সেই অবস্থা থেকে টেনে তোলেন তিনি।

আজ সুজুকি মোটরসের যে অবস্থা, তার শুরু ৭০ এবং আশির দশকে। ১৯৭১ সালে ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি মারুতির সঙ্গে অংশীদার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয় সুজুকি মোটরস এবং সেই চুক্তির ফসল মারুতি-সুজুকি গাড়ি, যা ইতোমধ্যে ভারতীয় মধ্যবিত্তের প্রথম গাড়ি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পরে ১৯৭৯ সালে ‘অল্টো মিনিভেহিকেল’ নামের একটি গাড়ি বাজারে ছাড়ে সুজুকি মোটরস, যা সে সময় মধ্যবিত্ত ক্রেতা-গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

ব্যক্তিগত জীবনে মিতব্যয়িতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন ওসামু সুজুকি। এসির খরচ বাঁচাতে তিনি তার অফিস ও কারখানার ছাদ বিশেষভাবে তৈরি করেছিলেন, বিমান ভ্রমণের বেলায় সবসময় ইকোনমি ক্লাস বেছে নিতেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও কোনো আড়ম্বরতার ছাপ তার মধ্যে ছিল না বলে জানিয়েছেন ওসামুর পরিচিত ও স্বজনরা।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস