ভিয়েনা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদানি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে সরকারের ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার শুল্ক ক্ষতি

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৭:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫ সময় দেখুন

ইবিটাইমস, ঢাকা: ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার গোপনীয় চুক্তির দায়ে সরকার ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা শুল্ক ক্ষতির মুখে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি সংক্রান্ত চুক্তির আগে এনবিআরের মতামত নিতে হয়। কিন্তু আদানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এমন কি আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অসম্মতি জানিয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে’ নিজেরাই শুল্ক-কর অব্যাহতি দিয়ে চুক্তি করে।

শুল্ক গোয়েন্দার এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তার ওপর শুল্ক-কর আদায়যোগ্য কিনা, প্রযোজ্য হলে শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা এবং শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কিনা- এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআর থেকে অব্যাহতির আদেশ না থাকা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে পিডিবি কর্তৃক শুল্ক-কর পরিশোধ না করায় ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা আদায়যোগ্য। অর্থাৎ এই অর্থ পিডিবি থেকে এনবিআরকে পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা করেনি। এতে রাষ্ট্র ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা শুল্ক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই চুক্তির আগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ভারতের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এনটিপিসি বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড থেকে বিদ্যুৎ কেনে। এ ক্ষেত্রেও এনবিআর শুল্ক অব্যাহতি সংক্রান্ত আদেশ জারি করেনি। ফলে এনটিপিসি থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ শুল্ক-কর ফাঁকির দায় এড়াতে পারে না। তাই বিদ্যুৎ বিভাগকে শুল্ক পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

জানা গেছে, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সই করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানও চুক্তির কপি দেখার সুযোগ পাননি। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। এতে করে চুক্তিতে কী কী ধারা রাখা হয়েছিল, তা বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই জানতেন না।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২২ সালে বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে চিঠি দেয়। এর প্রেক্ষিতে চুক্তি খসড়া পাঠাতে এনবিআর ২০২৩ সালের ২ মার্চ, ২২ মার্চ ও ১৩ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগে ৩ দফায় চিঠি দেয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে খসড়া পাঠানো হয়নি। ফলে এ বিষয়ে এনবিআর মতামত দিতে পারেনি। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে জানায়, আয়কর অব্যাহতি প্রদানে অসম্মতি জানিয়ে শর্ত সংযোজনের নির্দেশনা দিয়েছিল এনবিআর। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে’ শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুক্তি করা হয়। এখানে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ’কে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

কাস্টমস আইন অনুযায়ী, দেশে পণ্য আমদানির পূর্বে পণ্যের বিস্তারিত উল্লেখ করে কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনে বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে বিদ্যুৎ আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি ও কাস্টমস আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সেটি পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটি করা হয়। এরইমধ্যে কমিটি ভ্যাট-কাস্টমস আইন ও শুল্ক-কর অব্যাহতিসংশ্লিষ্ট বিধিবিধান পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। এটি শিগগিরই এনবিআরে পাঠানো হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে এনবিআর।

ঢাকা/ইবিটাইমস/এনএল/আরএন

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

আদানি থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে সরকারের ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার শুল্ক ক্ষতি

আপডেটের সময় ০৭:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ইবিটাইমস, ঢাকা: ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার গোপনীয় চুক্তির দায়ে সরকার ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা শুল্ক ক্ষতির মুখে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি সংক্রান্ত চুক্তির আগে এনবিআরের মতামত নিতে হয়। কিন্তু আদানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এমন কি আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অসম্মতি জানিয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে’ নিজেরাই শুল্ক-কর অব্যাহতি দিয়ে চুক্তি করে।

শুল্ক গোয়েন্দার এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, আদানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি খতিয়ে দেখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য ও তার ওপর শুল্ক-কর আদায়যোগ্য কিনা, প্রযোজ্য হলে শুল্ক-কর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা এবং শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়ে এনবিআর অনুমতি দিয়েছিল কিনা- এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআর থেকে অব্যাহতির আদেশ না থাকা সত্ত্বেও আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে পিডিবি কর্তৃক শুল্ক-কর পরিশোধ না করায় ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা আদায়যোগ্য। অর্থাৎ এই অর্থ পিডিবি থেকে এনবিআরকে পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা করেনি। এতে রাষ্ট্র ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা শুল্ক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই চুক্তির আগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ ভারতের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এনটিপিসি বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড থেকে বিদ্যুৎ কেনে। এ ক্ষেত্রেও এনবিআর শুল্ক অব্যাহতি সংক্রান্ত আদেশ জারি করেনি। ফলে এনটিপিসি থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ শুল্ক-কর ফাঁকির দায় এড়াতে পারে না। তাই বিদ্যুৎ বিভাগকে শুল্ক পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

জানা গেছে, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সই করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানও চুক্তির কপি দেখার সুযোগ পাননি। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। এতে করে চুক্তিতে কী কী ধারা রাখা হয়েছিল, তা বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই জানতেন না।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২২ সালে বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে চিঠি দেয়। এর প্রেক্ষিতে চুক্তি খসড়া পাঠাতে এনবিআর ২০২৩ সালের ২ মার্চ, ২২ মার্চ ও ১৩ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগে ৩ দফায় চিঠি দেয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে খসড়া পাঠানো হয়নি। ফলে এ বিষয়ে এনবিআর মতামত দিতে পারেনি। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে জানায়, আয়কর অব্যাহতি প্রদানে অসম্মতি জানিয়ে শর্ত সংযোজনের নির্দেশনা দিয়েছিল এনবিআর। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে’ শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুক্তি করা হয়। এখানে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ’কে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

কাস্টমস আইন অনুযায়ী, দেশে পণ্য আমদানির পূর্বে পণ্যের বিস্তারিত উল্লেখ করে কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনে বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে বিদ্যুৎ আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি ও কাস্টমস আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সেটি পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটি করা হয়। এরইমধ্যে কমিটি ভ্যাট-কাস্টমস আইন ও শুল্ক-কর অব্যাহতিসংশ্লিষ্ট বিধিবিধান পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। এটি শিগগিরই এনবিআরে পাঠানো হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে এনবিআর।

ঢাকা/ইবিটাইমস/এনএল/আরএন