ইতালিতে প্রথম বাংলাদেশী, চিকিৎসা বিজ্ঞানী হতে যাচ্ছেন জুয়াইরিয়া

বিশেষ প্রতিনিধি, ইতালিঃ জুয়াইরিয়া উদ্দিন দেখা। দেশের বাড়ি বরিশালে। মাত্র ৪ বছর বয়সে বাবা মোঃ আকতার উদ্দিন এবং মা জেসমিন আক্তারের সাথে ইতালি আসেন।

দেখার শিক্ষা জীবন শুরু হয় ভেনিসের চেজারে বাত্তিসতি স্কুল থেকে। ছোট সময় থেকে দেখা প্রচন্ড মেধানী ছিলেন। জুলিয়া চেজারে স্কুলে মাধ্যমিক করার সময় থেকে তার মেধায় মুগ্ধ হতে শুরু করেন ক্লাস টিচাররা।

লুইজি স্তেফানিন কলেজ থেকে ইন্টার লেভেল পাশ করে দেখা ইতালির বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় দেইলি ইসতুদি দি ফেররারা থেকে বায়ো টেকনলজি ফর হেল্থ বিষয়ে ৩ বছরের অনার্স শেষ করেন।

দেখা একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি মেডিকেল বায়ো টেকনলজি বিষয়ে ২ বছরের মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

দেখা মেডিকেল বায়ো টেকনলজিতে মাস্টার্স করার সময়ে গবেণষার বিষয় হিসাবে বেছে নেন সিএক্স ৪৯৪৫ বা ব্লাড ক্যানসারের সিলমিতা সেরতিভ প্রতিষেধকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং রক্তের ক্ষতিকর সেল গঠন প্রক্রিয়া।

গত ১৫ ডিসেম্বর তারিখে দেখার মাস্টার্সের শেষ প্রেজেনটেশন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ইতালির ৯ জন বিখ্যাত প্রফেসরদের কমিশনে দেখাসহ মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী তাদের তেইজি বা থিসিস উপস্থাপন করেন।

দেখা তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ব্লাড ক্যানসারের কিছু কোষ ধ্বংশ করতে তার গবেষণা লব্ধ প্রতিষেধক কতোটা কার্যকর এবং এটা মানব দেহে কী উপায়ে কাজ করবে।

দেখার গবেষণা লব্ধ সিএক্স ৪৯৪৫ ইদুরের উপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে এটির কার্যকারীতা প্রায় শতভাগ।

দেখার গবেষণা ব্লাড ক্যানসারের বিশেষ কিছু সেল চিহ্নিত করতে এবং ধ্বংশ করতে প্রথম ফেইজে কার্যকর হওয়ায় এখন তা দ্বিতীয় ফেইজ হিসাবে ল্যাব টেষ্টে পাঠানো হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এর পরে ক্লিনিক টেষ্টের জন্যে পাঠানো হবে।

দেখার প্রফেসর ভেরেনিকা তিজাতো বলেন, দেখার গবেষণার ফল প্রথম ফেইজে যেমন কাজ করেছে, পরের ফেইজগুলোতেও তা অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

প্রেজেনটেশন অনুষ্ঠানের কমিশন প্রফেসররা জানান, ৭৮ পৃষ্ঠার বিশাল গবেষণাপত্র লিখেছেন দেখা। যা তার গ্রুপের সব চেয়ে বড় থিসিস।

আগামী বছর ইতালির জাতীয় রিসার্চ কংগ্রেসে দেখার সম্পূর্ণ ইংরেজিতে লেখা থিসিস উপস্থাপন করা হবে এবং এর পরে তা ইতালিসহ পৃথিবীর বিখ্যাত জার্নালগুলোয় প্রকাশ হবে।

দেখার উপস্থাপন এবং জ্ঞানের গভীরতা কমিশন প্রফেসরদের মুগ্ধ করেছে। তারা দেখাকে ১১০ পুনতি বা মার্কস দিয়েছেন। যা ইতালি সর্বোচ্চ নাম্বার। অর্থাৎ এর উপরে ইতালির উচ্চ শিক্ষায় কেউ নাম্বার পায় না।

দেখা এখন পাদোভার ভিম রিচার্য সেন্টারে কর্মরত আছেন। আগামী এক বছর তিনি ওখানে ব্লাড ক্যানসার নিয়েই কাজ করবেন। এরপর পিএইচডি করতে সুইজারল্যান্ডে যাবেন।

জুয়াইরা উদ্দিন দেখা কবিতা পড়তে এবং ঘুরতে পছন্দ করেন। তিনি বাংলা পড়তে এবং লিখতে জানেন। তার বাংলা শিক্ষার হাতে খড়ি হয় ভেনিস বাংলা স্কুলে। তিনি ভালো গান করেন। বাংলাদেশের ক্লাসিক সংগীতের প্রতি তার দুর্বলতা আছে।

দেখা বলন, এতদিন পড়ালেখার চাপে খুব বেশি ঘোরাঘুরির সুযোগ হয়নি। এখন ঘুরবো। ঘুরে ঘুরে পৃথিবী দেখবো। পৃথিবীর মানুষ দেখবো।

২০২০ সালে শেষ বার বাংলাদেশে গিয়েছেন দেখা। টানা ৪ মাস ছিলেন। সেখানের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার দেশ। তা যেমনই হোক, আমার জন্মভূমি আমার কাছে সব থেকে প্রিয়। ওখানে আমার আত্মীয় স্বজন, আপন মানুষরা থাকেন। তাদের সাথে থাকার, সময় কাটানোর মজাটা আমি খুব মিস করি।

দেখা বলেন, জীবনে যদি কখনো বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য, কিছু করার সুযোগ আসে, আমি সেটাকেই অগ্রাধিকার দিবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বাজেট বাড়ানো উচিত। অধুনিক ল্যাব তৈরী করা উচিত। ইন্ট্রিুমেন্ট কেনা উচিত। দেশের সরকারের এসব বিষয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।

ইতালিয় কালচার অনুযায়ী দেখের প্রেজেনটেশন শেষে শুভাকাঙ্খিদের ডিনারের দাওয়াত করেন তার বাবা। ফেররারার একটি রেষ্টুরেন্টের সেলিব্রেশন পার্টিতে ভেনিস বাংলা স্কুলের সভাপতি সৈয়দ কামরুল সরোয়ার, ভেনিস বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা আমিনুল হাজারিসহ দেখার তিন সহপাঠি- ভানেচ্ছা, ভেরোনিকা ও আনতা উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদউল্লাহ সোহেল/ইবিটাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »