দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া, প্রতিপক্ষ ভারত

স্পোর্টস ডেস্ক: ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হৃদয় ভাঙলো ‘চোকার্স’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার।  বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্টের রোমাঞ্চকর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া কাছে ৩ উইকেটে হেরে যাওয়ায় প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার।  এই নিয়ে পঞ্চমবার বিশ্বকাপের সেমি থেকে বিদায় নিলো প্রোটিয়ারা।  রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপার লক্ষে স্বাগতিক ভারতের মোকাবেলা করবে অস্ট্রেলিয়া।  আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া।

ডেভিড মিলারের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২১২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।  মিলার ১১৬ বলে ১০১ রান করেন। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে  ১৬ বল বাকী রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।  দলের পক্ষে ৪৮ বলে সর্বোচ্চ ৬২ রান করে ম্যাচ সেরা হন ওপেনার ট্রুাভিস হেড।

এর আগে কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।  ব্যাট হাতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার স্টার্ক ও হ্যাজেলউডের তোপের মুখে পড়ে প্রোটিয়ারা। ১২ ওভারের মধ্যে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রথম ওভারের শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে খালি হাতে বিদায় করেন স্টার্ক। ষষ্ঠ ওভারে ইনফর্ম কুইন্টন ডি কককে ৩ রানে তুলে নেন হ্যাজেলউড। ৮ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেই চাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি  প্রোটিয়া মিডল অর্ডার । ১১তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন স্টার্ক। উইকেটে সেট হবার চেষ্টায় থাকা আইডেন মার্করামকে ১০ রানে শিকার করেন স্টার্ক। পরের ওভারে টেস্ট মেজাজে থাকা ডুসেনকে বিদায় দেন হ্যাজেলউড। ৩১ বল খেলে ৬ রান করেন ডুসেন।

২৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন হেনরিচ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। তাদের জুটির শুরুতে বৃষ্টির কারনে আধা ঘন্টার মত খেলা বন্ধ ছিলো। খেলা শুরু হবার পর উইকেট পতন ঠেকানোতে মনোযোগী হন তারা। উইকেটে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর দলের রানের চাকা সচল করেন ক্লাসেন ও মিলার। এই জুটির কল্যাণে ২৮তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন তারা। দলের পাশাপাশি জুটির রানও তিন অংকে নেয়ার পথেই ছিলেন ক্লাসেন-মিলার।

কিন্তু ৩১তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চমকে দেন অকেশনাল স্পিনার ট্রাভিস হেড। চতুর্থ বলে ক্লাসেনকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হেড। পরের বলে নতুন ব্যাটার মার্কো জানসেনকে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন ক্লাসেন। ১ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন জানসেন। পঞ্চম উইকেটে মিলার-ক্লাসেন  ১১৩ বলে ৯৫ রান যোগ করেন।

১১৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ওয়ানডেতে ২৫তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ৭০ বল খেলা মিলার। সপ্তম উইকেটে জেরাল্ড কোয়েৎজির সাথে আবারও বড় জুটির চেষ্টা করেন মিলার। এখানেও সফল হয়েছেন তারা। ৭৬ বলে ৫৩ রান তুলে দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দেয়ার পথ তৈরি করেন মিলার ও কোয়েৎজি।

তবে ১৯ রান করা কোয়েৎজিকে শিকার করে অস্ট্রেলিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দেন কামিন্স। দলীয় ১৭২ রানে কোয়েৎজির বিদায়ের সময় ৮০ রানে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিলার। এরপর কেশব মহারাজকে ৪ রানে শিকার করেন স্টার্ক। কামিন্সের করা ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন ছয় নম্বরে নামা মিলার। তার ঐ ছক্কায় দলের রানও ২শতে পৌঁছায়। তিন অংকে পা দেয়ার পরের ডেলিভারিতেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন মিলার। কামিন্সের শিকার হবার অগে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১১৬ বলে ১০১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন মিলার।  বিশ্বকাপ নক আউট পর্বে  দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের নজিরও গড়েন মিলার।

শেষ দিকে কাগিসো রাবাদার ১২ বলে ১০ রানে ৪৯ দশমিক ৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২১২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার স্টার্ক ৩৪ রানে ও কামিন্স ৫১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। হ্যাজেলউড ১২ রানে ও হেড ২১ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

২১৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসার জানসেন ও রাবাদার করা প্রথম ৬ ওভারে ৬০ রান তুলেন তারা। সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত অকেশনাল স্পিনার মার্করামকে এনেই সাফল্য পেয়ে যান প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা। ওভারের প্রথম বলেই ওয়ার্নারের উইকেট উপড়ে ফেলেন মার্করাম। ১৮ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৯ রান করেন ওয়ার্নার। পরের ওভারে নতুন ব্যাটার মিচেল মার্শকে রানের খাতা খোলার আগে বিদায় দেন রাবাদা। ৬১ রানে ২ উইকেট পতনে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। দলকে চাপমুক্ত করতে জুটির চেষ্টায় সফল হন হেড ও স্টিভেন স্মিথ। ৩৯ বলে ৪৫ রানের জুটিতে দলের রান তিন অংকে নেন তারা। এই জুটিতেই ১৬তম ওয়ানডে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৪০ বল খেলা হেড।

হাফ-সেঞ্চুরির পর জীবন পেয়েও বেশি দূর যেতে পারেননি হেড। স্পিনার মহারাজের বলে বোল্ড হওয়ায় ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ বলে ৬২ রানে আউট হন হেড। দলীয় ১০৬ রানে হেডের বিদায়ের পর  স্মিথকে ব্যক্তিগত১০ রানে বিদায়ের সুযোগ পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। স্পিনার তাবরাইজ শামসির বলে স্মিথের ক্যাচ ফেলেন ডি কক। তবে ধীরলয়ে খেলা লাবুশেনকে  ১৮ রানে লেগ বিফোর আউট করে প্রথম উইকেটের দেখা পান শামসি। চতুর্থ উইকেট পতনে ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন লিগ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মহাকাব্যিক ২০১ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এবার শামসির ঘুর্ণিতে কুপোকাত হন ম্যাক্সি। ৫ বল খেলে শামসির বলে বোল্ড হয়ে ১ রান ফিরেন এই মারকুটে ব্যাাটার।

১৩৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার  পঞ্চম উইকেট তুলে নিয়ে চালকের আসনে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ অবস্থায় চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠে অস্ট্রেলিয়ার কপালে। দলকে লড়াইয়ে ফেরাতে প্রয়োজনীয় জুটি গড়েন উইকেটে সেট ব্যাটার স্মিথ ও উইকেটরক্ষক জশ ইংলিশ।  শট না খেলে ধীরে ধীরে রান জড়ো করতে থাকেন তারা। এতে অস্ট্রেলিয়ার রান ১৭০এর ঘরে পৌঁছে যায়। জমে যাওয়া জুটি ভাঙতে বোলিংয়ে বারবার পরিবর্তন আনে প্রোটিয়ারা। অবশেষে ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৭৪ রানে স্মিথকে শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন কোয়েৎজি। ২টি চারে ৬২ বলে ৩০ রান করেন স্মিথ। জুটিতে ৫৯ বল ৩৭ রান যোগ করেন স্মিথ- ইংলিশ। স্মিথ ফেরার পর অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে ছিলেন ইংলিশ। ৪০তম ওভারে দলীয় ১৯৩ রানে ইংলিশকে(২৮) বোল্ড করেন কোয়েৎজি।

জয় থেকে ২০ রান দূরে থাকতে জুটি বাঁধেন স্টার্ক ও কামিন্স। ১১ রানের জুটি হবার পর মার্করামের বলে কামিন্সের ক্যাচ ফেলেন ডি কক। এরপর অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে নিতে বেগ পেতে হয়নি স্টার্ক ও কামিন্সের। অষ্টম উইকেটে ৪৬ বলে ২২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলেন তারা। স্টার্ক ১৬ ও কামিন্স ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়েৎজি ৪৭ ও শামসি ৪২ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

ইবিটাইমস/ডেস্ক/এনএল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »