স্টাফ রিপোর্টারঃ ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর ছয়জন প্রতিনিধির একটি মার্কিন টিম ৮-১১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে বলেছেন, গণতান্ত্রিক মূলনীতির প্রতি এসব চ্যালেঞ্জ হুমকি। এর ফলে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের দিকে যে ইতিবাচক প্রক্ষেপণ তা খর্ব হতে পারে। বাংলাদেশ এখন ‘ক্রসরোডে’।
আসন্ন নির্বাচন হলো- দেশটির গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিশ্রুতিতে একটি লিটমাস টেস্ট।
বাংলাদেশে আছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রীতি। আছে গতিশীল মিডিয়া, সক্রিয় নাগরিক সমাজ, রাজনীতিতে যুক্ত নাগরিকরা। কয়েক দশকে দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ভিশন অর্জনের জন্য এসব একটি শক্ত ভিত্তি রচনা করেছে, তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ববর্তী মূল্যায়নে এসব কথা বলেছেন।কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তা নির্বাচনি অখণ্ডতার প্রতি বড় রকমের বাধা সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে আছে আপসহীন এবং জিরো-সাম রাজনীতি। উচ্চমাত্রায় বাগাড়ম্বরতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, অনিশ্চয়তা ও ভীতির বিস্তৃত আবহ, নাগরিক সমাজ ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্থান সংকুচিত হয়ে আসা। এ ছাড়া আছে নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা এবং এর অংশীদারদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট। নারী, যুবশ্রেণি ও অন্য প্রান্তিক গ্রুপগুলো অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধার মুখোমুখি।
এ সময়ে তারা সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউএসএইডের সাবেক ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বোনি গ্লিক (আইআরআই সহসভাপতি), দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইনডারফার্থ (এনডিআই সহসভাপতি), মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাবেক অ্যাসোসিয়েট কাউন্সেল জামিল জাফের, আইআরআইয়ের সিনিয়র পরিচালক (এশিয়া প্যাসিফিক ডিভিশন) জোহানা কাও এবং এনডিআইয়ের আঞ্চলিক পরিচালক (এশিয়া প্যাসিফিক) মানপ্রীত সিং আনন্দ।
সফর শেষে এই প্রতিনিধি টিম রিপোর্ট দিয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জন্য কিছু সুপারিশ বিবেচনার জন্য প্রকাশ করেছেন। বলা হয়েছে, এসব সুপারিশ একটি রোডম্যাপ, যা নির্বাচনের আগে এবং পরে বিশ্বাসযোগ্য, সবার অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বী ও অহিংস নির্বাচনের দিকে অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে।
সুপারিশগুলো হলো–
১.নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে উদার কথাবার্তা, উন্মুক্ত এবং গঠনমূলক সংলাপ।
২. মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে।
৩.অহিংস থাকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে।
৪. সব দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এর মধ্যে থাকবে স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা।
৫. নাগরিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সক্রিয় নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে হবে।
প্রতিনিধি দল স্বীকার করেন, বাংলাদেশের জনগণই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৈধতা নির্ধারণ করবেন।
মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন/ইবিটাইমস