ভিয়েনা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অগাস্ট ২০২৩
  • ১০ সময় দেখুন

 বাধন রায়, ঝালকাঠিঃ  ঝালকাঠি জেলাটি ইতিহাস ঐতিহ্যর সমৃদ্ধময় ভান্ডার নিয়ে প্রকৃতিকে যেন আপন করে নিয়েছে। ঝালকাঠি জেলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আষাঢ় পেরিয়ে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দূর-দূরান্তের বেপারিদের আনাগোনায় পেয়ারা মোকামগুলোতে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে পেয়ারার স্বাদ নিতে বহু পর্যটকের এসব নদীপথে দেখা মেলে। ঝালকাঠির আটঘরে চলমান বর্ষায় জমে উঠেছে নৌকার হাট। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ হাটে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। যুগ যুগ ধরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার সন্ধ্যা নদীর শাখা খালের এ হাটে নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম নৌকারহাট আটঘরসহ আশপাশের বিভিন্ন নৌকা বিক্রির হাটগুলো এখন ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে।

ঝালকাঠির কৃত্তিপাশা, শেখের হাট, কপ্পুড়কাঠি, , ভিমরুলি, কাচাবালিয়া, শতদশকাঠি, জগদিশপুর, ও শাখাকাচি সহ ২০-২৫ টি গ্রাম এবং পিরোজপুর জেলার কয়েক হাজার পরিবার বছরের পর বছর ধরে নৌকা তৈরি করে আসছে জীবিকা নির্বাহের জন্য। এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমজীবি মানুষের প্রধান পেশা নৌকা তৈরি করে হাটে এনে বিক্রি করা। গ্রামের মধ্যে পাকা রাস্তা এবং হাট বসাবার মত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে খালের মধ্যে সারিবদ্ধ ভাবে নৌকা সাজিয়ে তার উপরে বাজার বসিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা করেন। সে কারণেই ধনী গরীব সবার কাছে ডিঙ্গি নৌকার চাহিদা একটু বেশি।

খাল-বিল, নদী-নালা বেষ্টিত ঝালকাঠি এবং এর আশেপাশের জেলাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে কৃষকদের কাছে। ধান কাটা, বাগান থেকে পেয়ারাসহ, বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার কাজে নৌকার বিকল্প নেই।
দুই শতাধিক বছরের পুরানো ঝালকাঠির সিমান্তবর্তী নৌকা কেনা-বেচার এ হাটে বিক্রির জন্য বিভন্ন স্থান থেকে কারিগর এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে আসে। এখান থেকে এসব নৌকা যাচ্ছে বৃহত্তর বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকায়। প্রতি মৌসুমে এ হাটে এক থেকে দেড় কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ঝালকাঠি বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের এক কর্মকতা নৌকা তৈরির কারিগরদের পুঁজি সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, এ সমস্যা সমাধানে তাদের বিসিক থেকে স্বল্প সুদে মৌসুমি ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প রয়েছে। তারা ঋণের জন্য এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আড়ৎদার ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, প্রতিহাটে আটঘরে ১৫-২০ লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়। এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের কয়েকশ’ পরিবার

ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় গিয়ে পেয়ারা চাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পাইকারের ট্রলার, মালবাহী নৌকায় তুলে দেন। কোথাও ঝুড়ি ভরে বাছাই করা পেয়ারা ট্রাকে তুলে দেয়া হচ্ছে। পেয়ারার মৌসুম ঘিরে নৌকায় করে ‘নাইওর’ আসে কন্যারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় সারা বছরই নৌকায় চলাচল করলেও বর্ষা কালে এর কদর বাড়ে কয়েকগুণ। জল ও স্থলের মাইল খানিক এলাকা জুড়ে সারি সারি নৌকা। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর হাট। নৌকা বেচাকেনায় শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে এই হাটটির। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের চারমাস জমজমাট হয়ে ওঠে এখানকার নৌকার ব্যবসা। হাট বসে প্রতি শুক্র ও সোমবার। তাই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজি আর দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে প্রকৃত মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

ঝালকাঠি/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

আপডেটের সময় ১০:০৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অগাস্ট ২০২৩

 বাধন রায়, ঝালকাঠিঃ  ঝালকাঠি জেলাটি ইতিহাস ঐতিহ্যর সমৃদ্ধময় ভান্ডার নিয়ে প্রকৃতিকে যেন আপন করে নিয়েছে। ঝালকাঠি জেলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আষাঢ় পেরিয়ে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দূর-দূরান্তের বেপারিদের আনাগোনায় পেয়ারা মোকামগুলোতে রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেই সঙ্গে পেয়ারার স্বাদ নিতে বহু পর্যটকের এসব নদীপথে দেখা মেলে। ঝালকাঠির আটঘরে চলমান বর্ষায় জমে উঠেছে নৌকার হাট। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ হাটে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। যুগ যুগ ধরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২০ গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার সন্ধ্যা নদীর শাখা খালের এ হাটে নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম নৌকারহাট আটঘরসহ আশপাশের বিভিন্ন নৌকা বিক্রির হাটগুলো এখন ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে।

ঝালকাঠির কৃত্তিপাশা, শেখের হাট, কপ্পুড়কাঠি, , ভিমরুলি, কাচাবালিয়া, শতদশকাঠি, জগদিশপুর, ও শাখাকাচি সহ ২০-২৫ টি গ্রাম এবং পিরোজপুর জেলার কয়েক হাজার পরিবার বছরের পর বছর ধরে নৌকা তৈরি করে আসছে জীবিকা নির্বাহের জন্য। এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমজীবি মানুষের প্রধান পেশা নৌকা তৈরি করে হাটে এনে বিক্রি করা। গ্রামের মধ্যে পাকা রাস্তা এবং হাট বসাবার মত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ বর্ষাকালে খালের মধ্যে সারিবদ্ধ ভাবে নৌকা সাজিয়ে তার উপরে বাজার বসিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবসা করেন। সে কারণেই ধনী গরীব সবার কাছে ডিঙ্গি নৌকার চাহিদা একটু বেশি।

খাল-বিল, নদী-নালা বেষ্টিত ঝালকাঠি এবং এর আশেপাশের জেলাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে কৃষকদের কাছে। ধান কাটা, বাগান থেকে পেয়ারাসহ, বিভিন্ন ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার কাজে নৌকার বিকল্প নেই।
দুই শতাধিক বছরের পুরানো ঝালকাঠির সিমান্তবর্তী নৌকা কেনা-বেচার এ হাটে বিক্রির জন্য বিভন্ন স্থান থেকে কারিগর এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে আসে। এখান থেকে এসব নৌকা যাচ্ছে বৃহত্তর বরিশাল এবং ফরিদপুরের প্রত্যন্ত এলাকায়। প্রতি মৌসুমে এ হাটে এক থেকে দেড় কোটি টাকার নৌকা বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ঝালকাঠি বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের এক কর্মকতা নৌকা তৈরির কারিগরদের পুঁজি সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, এ সমস্যা সমাধানে তাদের বিসিক থেকে স্বল্প সুদে মৌসুমি ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প রয়েছে। তারা ঋণের জন্য এলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আড়ৎদার ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, প্রতিহাটে আটঘরে ১৫-২০ লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়। এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের কয়েকশ’ পরিবার

ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় গিয়ে পেয়ারা চাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পাইকারের ট্রলার, মালবাহী নৌকায় তুলে দেন। কোথাও ঝুড়ি ভরে বাছাই করা পেয়ারা ট্রাকে তুলে দেয়া হচ্ছে। পেয়ারার মৌসুম ঘিরে নৌকায় করে ‘নাইওর’ আসে কন্যারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় সারা বছরই নৌকায় চলাচল করলেও বর্ষা কালে এর কদর বাড়ে কয়েকগুণ। জল ও স্থলের মাইল খানিক এলাকা জুড়ে সারি সারি নৌকা। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর হাট। নৌকা বেচাকেনায় শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে এই হাটটির। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের চারমাস জমজমাট হয়ে ওঠে এখানকার নৌকার ব্যবসা। হাট বসে প্রতি শুক্র ও সোমবার। তাই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজি আর দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে প্রকৃত মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

ঝালকাঠি/ইবিটাইমস