ভিয়েনা ০৫:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

মহানায়িকা শাবানার ৭১

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৫:৩৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩
  • ৭ সময় দেখুন
রিপন শানঃ জীবনের আরেকটি বসন্ত পার করলেন ঢাকাই সিনেমার জীয়ল কিংবদন্তি শাবানা। ১৫ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার ছিল গুণী এই অভিনেত্রীর ৭১তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না।
শাবানার জীবন অনেকটা চলচ্চিত্রের গল্পের মতই। তার বাবার নাম ফয়েজ চৌধুরী, মায়ের নাম ফজিলাতুন্নেসা। বাবা ফয়েজ চৌধুরী পেশায় টাইপিস্ট ছিলেন বলে জানা যায়, আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তিনি পেশা পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বলে শোনা যায়। আর্থিক অবস্থার কারণে এবং পড়াশোনায় অনাগ্রহের কারণে শাবানার শিক্ষাও নয় বছর বয়সেই সমাপ্ত হয় বলে জানা যায়। ফয়েজ চৌধুরী তার মেয়েকে নিয়ে এফডিসিতে আসতেন। ১৯৬২ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে শাবানা ‘নতুন সুর’ নামের চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৬৩ সালে তালাশ সিনেমার একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন। এর পরে বিভিন্ন ছবিতে অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘আবার বনবাসে রূপবান’ এবং ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে তিনি  সহনায়িকার চরিত্রেও অভিনয় করেন।
এহতেশাম ছিলেন শাবানার চাচা (বাবার খালাতো ভাই)। তার হাত ধরেই ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’তে নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পান এই কিংবদন্তি। এই সিনেমার মাধ্যমেই সবাই তাকে শাবানা নামে চিনতে শুরু করেন। সিনেমাটি বেশ ব্যবসাসফল হলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে সময় অনেকগুলো উর্দু ছবিতে অভিনয় করেন শাবানা। অবুঝ মন এবং মধু মিলন এই দুটো ছবিতে অভিনয় করার মাধ্যমে তিনি রাজ্জাকের জুটি বাধেন এবং একের পর এক জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়ে যান। প্রায় একই সময়ে তিনি তার বাবার সাথে মিলে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। এই প্রযোজনা সংস্থা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘মুক্তি’ যার পরিচালক ছিলেন শাবানার বাবা ফয়েজ চৌধুরী।
তিন দশকের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবানা। এর মধ্যে ১৩০টি সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন আলমগীর। এছাড়াও রাজ্জাক, জসীম, সোহেল রানা, ফারুকসহ বেশ কয়েকজন গুণী অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। ১৯৮০ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সখি তুমি কার’ সিনেমার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবানা। এরপর অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য সর্বমোট ১১বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। এছাড়াও বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি ও কথক একাডেমি’সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুর দিকে চিত্রনায়ক নাদিমকে ঘিরে কিছু গুজব শোনা গেলেও শাবানা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালে সরকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাবানা। শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস এস প্রোডাকশন দেখাশোনার দায়িত্ব নেন ওয়াহিদ সাদিক। শাবানা-সাদিকের সংসারে তিনটি সন্তান – দুই মেয়ে সুমি এবং উর্মি এবং পুত নাহিন। উল্লেখ্য, শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের বড় ভাই হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক।
সন্তানদের ভবিষতের কথা চিন্তা করে চলচ্চিত্রের ৩৬ বছরের সোনালী ক্যারিয়ার ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন শাবানা। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি।
বড় মেয়ে ফারহানা সাদিক সুমি এমবিএ, সিপিএ পাস করে আগে চাকরি করতো। পরে তার দুই বাচ্চাকে দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ছোট মেয়ে সাবরিনা সাদিক বিশ্বখ্যাত ইয়েল ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে শিকাগোর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। একমাত্র ছেলে শাহীন সাদিক নিউজার্সির রাদগার্স ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে এখন সেখানকার স্বনামধন্য ব্লুমবার্ড কোম্পানিতে কর্মরত।
১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ চলচ্চিত্র থেকে বিদায়ের ঘোষনা দেন এবং নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বন্ধ করে দেন। ২০০০ সালে শাবানা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস শুরু করেন এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে তিনি ধার্মিক জীবন শুরু করেন, ফুলহাতা কামিজ, হিজাব ইত্যাদি পোশাকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখা শুরু করেন। অতি সম্প্রতি শাবানা তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন না করার ব্যাপারেও অনুরোধ করেন। বেগম রোকেয়া চরিত্রে অভিনয় করা অভিনয় জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল এমনটি জানিয়েছিলেন শাবানা। সুভাষ দত্ত ছবিটি নির্মানের উদ্যোগ নিয়ে কিছুদূর এগিয়েছিলেন, ১৯৯৫ সালে মহরতও অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য মন্ত্রনালয় ছবিটি সমাপ্ত করার উদ্যোগ নিতে পারে। নিক।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক/ইবিতাইমস  
জনপ্রিয়

৩৩ বছর ধরে বন্ধ লালমোহন পাবলিক লাইব্রেরি

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

মহানায়িকা শাবানার ৭১

আপডেটের সময় ০৫:৩৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩
রিপন শানঃ জীবনের আরেকটি বসন্ত পার করলেন ঢাকাই সিনেমার জীয়ল কিংবদন্তি শাবানা। ১৫ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার ছিল গুণী এই অভিনেত্রীর ৭১তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না।
শাবানার জীবন অনেকটা চলচ্চিত্রের গল্পের মতই। তার বাবার নাম ফয়েজ চৌধুরী, মায়ের নাম ফজিলাতুন্নেসা। বাবা ফয়েজ চৌধুরী পেশায় টাইপিস্ট ছিলেন বলে জানা যায়, আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তিনি পেশা পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বলে শোনা যায়। আর্থিক অবস্থার কারণে এবং পড়াশোনায় অনাগ্রহের কারণে শাবানার শিক্ষাও নয় বছর বয়সেই সমাপ্ত হয় বলে জানা যায়। ফয়েজ চৌধুরী তার মেয়েকে নিয়ে এফডিসিতে আসতেন। ১৯৬২ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে শাবানা ‘নতুন সুর’ নামের চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ১৯৬৩ সালে তালাশ সিনেমার একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন। এর পরে বিভিন্ন ছবিতে অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘আবার বনবাসে রূপবান’ এবং ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে তিনি  সহনায়িকার চরিত্রেও অভিনয় করেন।
এহতেশাম ছিলেন শাবানার চাচা (বাবার খালাতো ভাই)। তার হাত ধরেই ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’তে নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পান এই কিংবদন্তি। এই সিনেমার মাধ্যমেই সবাই তাকে শাবানা নামে চিনতে শুরু করেন। সিনেমাটি বেশ ব্যবসাসফল হলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে সময় অনেকগুলো উর্দু ছবিতে অভিনয় করেন শাবানা। অবুঝ মন এবং মধু মিলন এই দুটো ছবিতে অভিনয় করার মাধ্যমে তিনি রাজ্জাকের জুটি বাধেন এবং একের পর এক জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়ে যান। প্রায় একই সময়ে তিনি তার বাবার সাথে মিলে চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। এই প্রযোজনা সংস্থা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘মুক্তি’ যার পরিচালক ছিলেন শাবানার বাবা ফয়েজ চৌধুরী।
তিন দশকের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবানা। এর মধ্যে ১৩০টি সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন আলমগীর। এছাড়াও রাজ্জাক, জসীম, সোহেল রানা, ফারুকসহ বেশ কয়েকজন গুণী অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। ১৯৮০ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সখি তুমি কার’ সিনেমার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবানা। এরপর অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য সর্বমোট ১১বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। এছাড়াও বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি ও কথক একাডেমি’সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুর দিকে চিত্রনায়ক নাদিমকে ঘিরে কিছু গুজব শোনা গেলেও শাবানা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালে সরকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাবানা। শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস এস প্রোডাকশন দেখাশোনার দায়িত্ব নেন ওয়াহিদ সাদিক। শাবানা-সাদিকের সংসারে তিনটি সন্তান – দুই মেয়ে সুমি এবং উর্মি এবং পুত নাহিন। উল্লেখ্য, শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিকের বড় ভাই হলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এ এস এইচ কে সাদেক।
সন্তানদের ভবিষতের কথা চিন্তা করে চলচ্চিত্রের ৩৬ বছরের সোনালী ক্যারিয়ার ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন শাবানা। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি।
বড় মেয়ে ফারহানা সাদিক সুমি এমবিএ, সিপিএ পাস করে আগে চাকরি করতো। পরে তার দুই বাচ্চাকে দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ছোট মেয়ে সাবরিনা সাদিক বিশ্বখ্যাত ইয়েল ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে শিকাগোর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। একমাত্র ছেলে শাহীন সাদিক নিউজার্সির রাদগার্স ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে এখন সেখানকার স্বনামধন্য ব্লুমবার্ড কোম্পানিতে কর্মরত।
১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ চলচ্চিত্র থেকে বিদায়ের ঘোষনা দেন এবং নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বন্ধ করে দেন। ২০০০ সালে শাবানা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস শুরু করেন এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে তিনি ধার্মিক জীবন শুরু করেন, ফুলহাতা কামিজ, হিজাব ইত্যাদি পোশাকে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখা শুরু করেন। অতি সম্প্রতি শাবানা তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন না করার ব্যাপারেও অনুরোধ করেন। বেগম রোকেয়া চরিত্রে অভিনয় করা অভিনয় জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল এমনটি জানিয়েছিলেন শাবানা। সুভাষ দত্ত ছবিটি নির্মানের উদ্যোগ নিয়ে কিছুদূর এগিয়েছিলেন, ১৯৯৫ সালে মহরতও অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য মন্ত্রনালয় ছবিটি সমাপ্ত করার উদ্যোগ নিতে পারে। নিক।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক/ইবিতাইমস