ভোলা থেকে মনজুর রহমানঃ ভোলার ছেলে জাহিদ মাত্র সাড়ে তিন মাসে টেলিস্কোপ তৈরী করে এখন সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল তিনি।দুর দুরান্ত থেকে জাহিদের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদসহ বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রপূঞ্জ দেখতে ভিড় জমান অনেকে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী তার বাড়িতে আসেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহ- উপগ্রহ দেখতে। দীর্ঘদিনের আগ্রহ থেকে ফার্মাসিস্টের চাকুরীর পাশাপাশি শুরু করেন টেলিস্কোপ বানানোর এ কার্যক্রম।শুধু তাই নয়, তার এই কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় কারো কোন সহযোগীতা নেই। নেই কারো পরামর্শ। ইন্টারনেট ও ইউটিউবের সহযোগিতায় বানানো টেলিস্কোপ এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার চিন্তা করছেন তিনি। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়া পাড়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। জাহিদের এ টেলিস্কোপ দেখতে ভিড় করছেন বিভাগীয় শহর থেকে।
ভোলা পৌরশহরের ৭ নং ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত আর্মি অফিসার মোঃ নুরুন্নবীর ছেলে নাজমুল আহসান জাহিদের ঘরের ছোট্ট একটি কক্ষে টেলিস্কোপ তৈরীর কাজ শুরু কররেন। এর জন্য নেই কোন ল্যাব বা বিশেষজ্ঞ। তার দৃঢ় মনোবল আর একা প্রচেস্টায় মাত্র সাড়ে ৩ মাসেই এসেছে সফলতা। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত শুরু করেছেন এ তরুণ উদ্যোক্ততা।
জাহিদ ২০০১ সালে এসএসসি, ২০০৩ সালে এইচএসসি এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বি ফার্মা ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে এম ফার্মা সম্পন্ন করেন। পরে ২০১১ সালে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।
নাজমুল আহসান জাহিদ জানান, সৃস্টির রহস্য নিয়ে তার আগ্রহ ছিল কৈশর থেকেই। তাই ফার্মাসিস্টপদে চাকুরী করা জাহিদের সকল ব্যস্ততার মধ্যেও মন পড়ে থাকত অধরা সৃস্টির সৌন্দয্য আর রহস্যের মধ্যে। তাই সৃষ্টির এসব রহস্য অবলোকন করার জন্য একটি টেলিস্কোপ কিনতে গিয়ে হোচট খান তিনি। বিদেশ থেকে আসা তার পছন্দের টেলিস্কোপটির দাম এক লাখ টাকা। কেনার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও অর্থের অভাবে সেটি আর কেনা হয়নি তার। কিন্তু ইচ্ছার পূরণের চেস্টা থামিয়ে রাখেন নি। নিজেই টেলিস্কোপ বানানোর জন্য মনস্থির করেন। এ বিষয়ের বিভিন্ন বই আর ইন্টারনেটে ইউটিউব কন্টেন দেখে মনোবল নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় দুই মাস ধরে অনলাইনে কিছিু সরঞ্জামাদিও সংগ্রহ করেন। এরই মধ্যে ডিজাইন মেজারমেন্টসহ অন্যান্য কাজগুলো সেরে রাখেন নিজের মতো করে। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য সাড়ে ৩ মাসে তৈরি করেছেন ৫টি এস্ট্রোনমি গ্রেডর নিউটোনিয়ান টাইপ ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ। ইতোমধ্যে অনলাইনে এ গুলোর বিক্রীর কথা চুড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই গ্রাহকের কাছে ডেলিভারি করবেন বলেও জাহিদ জানান।

তিনি আরও বলেন,১০০ টি টেলিস্কোপের অর্ডার পেয়েছেন কিন্তু নতুন করে ১০ টি নির্মানের কাজ হাতে নিয়েছেন। প্রতিটি বিক্রি করবেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দরে।
বাংলাদেশে এসট্রোনমি ও এস্ট্রোফিজিক্সের চর্চাকে আরও উচ্চতায় নিতে জাহিদের এ প্রচেস্টা। টেলিস্কোপ তৈরীতে সফলতার পর এখন সে নতুন করে আরও ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ এর সাথে ইকোটোরিয়াল প্লাটফর্ম তৈরীতে মনযোগ দিতে চান। যা পরবর্তীতে এস্ট্রোফটোগ্রাফীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাহিদের বন্ধু সুমন টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখে উচ্ছ্বসিত হন। সহযোগিতার পাশপাশি এ কাজটি এগিয়ে নেয়ার জন্য উৎসাহও যোগান।
লোকমুখে শুনে টেলিস্কোপ দেখতে আসেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল। তিনি জানান, খালি চোখে এর আগে অনেকবার চাঁদ ও আকাশের তারকা দেখিছি। কিন্তু এই টেলিস্কোপে যেভাবে দেখলাম তার মজাই আলাদা।
ইকরাম জানান, সরকারি পৃষ্টপোশকতা পেলে জাহিদের এ প্রচেস্টা আরও এগিয়ে নিতে পারবে। জাহিদের তথ্য মতে, বিদেশ থেকে আমদানি করা এ ধরনের টেলিস্কোপগুলোর দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তার তৈরী সমান সুযোগ সুবিধার টেলিস্কোপ বিক্রী হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন,জাহিদের নিজ উদ্যোগ এ টেলিস্কোপ তৈরির বিষয়টি আমরা খবর পেয়েছি।তার সাথে কথা হয়েছে,খোঁজখবর নিয়েছি। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ থাকলে জাহিদকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
ভোলা/ইবিটাইমস/আরএন

























