ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে এক বৈঠকের জন্য শনিবার কিয়েভে আসেন
ইউরোপ ডেস্কঃ গতকাল শনিবার (১১ জুন) ইউক্রেনের ইইউর সদস্যপদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে সরাসরি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে,গত ২৪ মার্চ ইউক্রেনের প্রতিবেশী বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশ রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে ইউক্রেন ইইউর(EU) সদস্যপদের জন্য ইইউর সদর দফতর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে একটি আবেদনপত্র জমা দেয়।
ভয়েস অফ আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে,ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গতকাল শনিবার ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সাথে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদ লাভে অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাপক আলাপ হয়েছে।
বৈঠকের পর ইইউ কমিশন প্রধান তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক টুইট বার্তায় বলেন, “পুনর্গঠনের জন্য যৌথ কাজের এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পথে ইউক্রেনের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজখবর নেব আমি।” বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আগামী সপ্তাহের শেষের মধ্যে ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ আবেদনের বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ করবেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের ব্যাপারে কিছু খোলা প্রশ্ন স্পষ্ট করেছেন ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েন। ইউক্রেন ইইউর সদস্যপদের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর ইইউ রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে প্রার্থী দেশের মর্যাদা দেওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে সুপারিশ করতে ইইউ কমিশনকে নির্দেশ দেয়। ইউক্রেনের জন্য, ইইউতে যাওয়ার পথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,আবার অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিধর দেশ রাশিয়ার এখানে সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা থাকায় ইইউর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল।
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আগামী সপ্তাহের শেষের মধ্যে ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ আবেদনের বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ করবেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের অস্তিত্বের জন্য ইইউর সদস্যপদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি,ইইউ কমিশন প্রধান প্রেসিডেন্ট দেশের এই ক্রাইসিস মুহূর্তে জেলেনস্কির প্রশাসনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। একই সময়ে, তিনি আরও সংস্কারের আহ্বান জানান। মূলত, তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যাওয়ার পথে ইউক্রেনের “অসাধারণ প্রচেষ্টা এবং সংকল্প” স্বীকার করেছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকা আরও জানিয়েছে,ইইউ প্রধানের সাথে বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার সতর্ক করেছেন যে, তার দেশে রাশিয়ার আক্রমন আন্তর্জাতিক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং একাধিক দেশকে তীব্র অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন করবে। সিঙ্গাপুরের শাংগ্রি-লা আলোচনায় উপস্থিত ৪২ দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে কথা বলার সময়ে জেলেন্সকি জোরালো পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন। শাংগ্রি-লা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সম্মেলন।
জেলেন্সকি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন যে, এশিয়া ও আফ্রিকার একাধিক দেশ দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যাভাবে পড়বে, কারণ রুশ সৈন্যরা ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বন্ধ করতে অবরোধ বসিয়েছে। ইউক্রেন বিশ্বের সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “যদি … রাশিয়ার অবরোধের কারণে আমরা খাদ্যপণ্য রফতানি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এশিয়া ও আফ্রিকায় বিশ্ব এক চরম ও গুরুতর খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে।” রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ডের সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করে মূল্য বৃদ্ধি করা আরম্ভ করে এবং এখন তারা খাদ্য নিয়েও একই কাজ করছে।
কৃষ্ণ সাগর ও অ্যাজভ সাগরে বন্দর অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া। এর ফলে ইউক্রেনের খাদ্য রফতানি বিশ্ববাজারে পৌঁছতে পারছে না। এটা শুধু ইউক্রেনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না বরং সারা বিশ্বকেই করছে বলে মন্তব্য করেন জেলেন্সকি।
অবরোধটিকে একটি “বিশেষ অভিযান” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে রাশিয়া, যার উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং তাদের বিবেচনায় বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদীদের আটক করা।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস