ভারতের স্থানীয় একটি টেলিভিশনে এক টকশোতে নুপুর শর্মার বক্তব্য টা ছিল, ‘ ৬ বছরের বাচ্চাকে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করেছেন নবীজি’। (আস্তাগফিরুল্লাহ)
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা নূপুর শর্মা। গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি। নূপুরের মন্তব্য দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। আরব দেশ সমূহে ভারতের পণ্য বর্জনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রথমে তার এই বক্তব্যে ভারতের কানপুরে সামান্য প্রতিবাদ শুরু হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ সমূহে প্রচন্ড বিস্ফোরণের রূপ নেয়। নুপুর শর্মার নবীজি কে নিয়ে কটুক্তি করার প্রতিবাদে প্রথম প্রতিবাদ শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে। বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহে টুইটার কম ব্যবহার করার কারণে এই অঞ্চলে বিষয়টা তেমন প্রকাশ পায় নি। তবে তার এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ সমূহে মুহূর্তের মধ্যেই বিস্ফোরণের রুপ নেয়।
আরব দেশ সমূহের অনেক কোম্পানি ভারতীয়দের চাকরিচ্যুত করা শুরু করেছে, রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক দেশ। কাতার, কুয়েত সরকার ভারতীয় হাইকমিশনার কে ডেকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে এবং ভারতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাইতে বলছে। ইতিপূর্বে যারাই বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির কারণে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করতো এতদিন বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের বলা হতো, ” ভারতে অনিরাপদ বোধ করলে পাকিস্তান চলে যাও”।
বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মার মন্তব্যকে অপমানজনক বলে বর্ণনা করেছে সৌদি আরব। অবমাননাকর মন্তব্য না করে ‘বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা’ রাখতে বলা হয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আরব দেশ সমূহের প্রচন্ড চাপের পর ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি টকশোতে অংশগ্রহণকারী নূপুর শর্মা ও তারই দলের আরেক সদস্য বিজেপি দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দাবাদ দল থেকে বহিষ্কার ঘোষণা দিয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে একটি প্রতিবাদলিপি দিয়েছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও সরকারিভাবে এর নিন্দা জানানোর আহবান জানিয়েছে কাতার।
এদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, বিজেপির সাবেক জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মা গত সপ্তাহে টেলিভিশনে এক বিতর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ও তাঁর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা:) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে। মহানবীকে নিয়ে জিন্দাল একটি টুইট করলে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। একপর্যায়ে টুইটটি মুছে ফেলেন জিন্দাল। নিজের আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নুপুর শর্মা।
নবী পত্নী হযরত আয়েশা রা: বা আয়েশা বিনতে আবু বকর ছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণের মধ্যে একজন। তিনি ছিলেন নবীর তৃতীয় স্ত্রী। ইসলামের ঐতিহ্য অনুসারে, তাকে “উম্মুল মু’মিনিন” বা “বিশ্বাসীদের মাতা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায় তাঁকে নবী মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করে থাকেন।
নবীপত্নী আয়েশা রা: এর সংক্ষিপ্ত জীবনী: হযরত আয়েশা (রা:) ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা:)- এর সবচেয়ে কম বয়সের স্ত্রী। তিনি ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আব বকর (রা:)- এর কন্যা। তাঁর মায়ের নাম উম্মে বুম্মান। তাঁর উপাধি ছিল সিদ্দিকা ও হুমায়রা। আর তাঁর উপনাম হলো-উম্মুল মমিনিন ও উম্ম আব্দুল্লাহ। এখানে উল্লেখ্য যে,হযরত আয়েশা রা: সবচেয়ে বেশী হাদিস বর্ণনা করেছেন।
তিনি হিজরতের পূর্বে ৬১৩/৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। কুরাইশ বংশের নিয়মানুযায়ী জন্মের পর তাঁর লালন-পালনের ভার দেওয়া হয় ওয়ায়েল নামে এক লোকের স্ত্রীর উপর। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারিণী । শিশু কাল থেকে তাঁর শিক্ষাগ্রহণ শুরু হয়। শৈশবকালেই তাঁর আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা ও মেধাশক্তি সকলকে মুগ্ধ করেছিল।
তাঁর মধ্যে সর্বদা শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য বিদ্যামান ছিল। তিনি অন্য শিশুরের মতো লেখাধুলা, আমোদফূর্তি ও দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসতেন।হযরত খাদিজা (রা:)-এর মৃত্যুর পর নবুয়তের দশম সনে মহানবি (স.)- এর সাথে হযরত আয়েশা (রা:)-এর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। হযরত খাওলা বিনতে হাকিম ছিলেন এ বিবাহের ঘটক। এ বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারিত হয় ৪৮০ দিরহাম। বিবাহের তিন বছর পর রাসূল (সা:) – এর সাথে হযরত আয়েশা (রা:)-এর দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। হযরত আবু বকর (রা:)- বিবাহের কাজির দায়িত্ব পালন করেন।
আয়েশা রাঃ এর শিক্ষাজীবন তৎকালীন আরব সমাজে লেখা-পড়ার তেমন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। হযরত আয়েশা (রা:)- পিতার কাছ থেকেই মূলত লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি কাব্য, সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি যা একবার শুনতেন সাথে সাথে মুখন্থ করে ফেলতেন। পুথিঁগত বিদ্যা অর্জন ছাড়াও তিনি গৃহস্থালী বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।
ইফকের ঘটনাঃ ষষ্ঠ হিজরি সনে বনু মুস্তালিক যুদ্ধে রাসুল (সা:)- এর সাথে হযরত আয়েশা (রা:)-ও ছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাঁর গলার হার হায়িয়ে যায়। হারানো হার খুঁজতে গিয়ে তিনি কাফেলা থেকে পিছনে পড়ে যান। ফিরতে দেরি হয়ে যায়। এ সুযোগে মুনাফিকরা তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা করল। এতে তিনি চরম মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। তাঁর জীবন একেবারে বিষণ্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু তিনি ধৈর্য্য হারান নি। আল্লাহর উপর আস্থা রেখে অটল ছিলেন।
এ সময়ে রাসুল (সা:) কোন সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেন নি। তিনি চিন্তিত হলেন। হযরত আয়েশা (রা:)-এর পিতামাতাও চরম উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে কালাতিপাত করছিলেন।অবশেষে আয়েশা (রা:)-এর পবিত্রতা বর্ণনা করে সূরা নুরে ১১-২১ নম্বর আয়াত নাজিল হলো। মুনাফিকদের য়ড়যন্ত্র ব্যর্থ হলো। রাসুল (সা:) চিন্তামুক্ত হলেন। হযরত আয়েশা (রা:)-এর পবিত্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
শিক্ষায় অবদানঃ হযরত আয়েশা (রা:)-ছিলেন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতী অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারিণী। তিনি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। বিশেষ করে তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ও আরবদের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। শরিয়তের বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল ও নীতিগত বিষয়ে তাঁর পরামর্শ দেওয়া হতো।
মর্যাদাঃ হযরত আয়েশা (রা:)-রাসুল (সা:)-এর অতি আদরের সহধর্মিণী ছিলেন। তিনি মহানবি (সা:)- এর অন্য স্ত্রীদের থেকে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। রাসুল (সা:) বলেন “নারী জাতির উপর আয়েশা (রা:)-এর মর্যাদা তেমন, যেমন খাদ্যসামগ্রীর উপর সারিদের মর্যাদা।” (বুখারি ও ইবনে মাজাহ) সারিদ হলো আরবের শ্রেষ্ট খাদ্য, যা রুটি, গোশত ও ঝোলের সমন্বয়ে তৈরি হয়। রাসূল (সা:) আরও বলেন “আয়েশা(রা:)-হলেন-মহিলাদের সাহায্যকারিনী।” (কানযুল উম্মাল)
একবার নবী মুহাম্মদ (সা:) আয়েশা (রা:)- কে লক্ষ্য করে বলেন-“হে আয়েশা! ইনি জিব্রাইল, তোমাকে সালাম দিচ্ছে।” (বুখারি) হযরত আয়েশা (রা:) নিজ বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা ভিত্তিতে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছিলেন।
আয়েশা রাঃ এর ইন্তিকালঃ উম্মল মুমেনিন হয়রত আয়েশা (রা:)- ৫৮ হিজরির ১৭ রমযান ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুবরণের সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৪ বছর। রাসুল (সা:) এর ইন্তিকালের পর আরও ৪০ বছর জীবিত ছিলেন তিনি। তাকেঁ মদিনার জান্নতুল বাকি নামক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। নবী পত্নী হযরত আয়েশা (রা:)-এর ধৈর্য, জ্ঞানসাধনা, পাণ্ডিত্য, স্বামীভক্তি ও চারিত্রিক মাধুর্য আমাদের মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস।
আমরা ইউরো বাংলা টাইমসের পরিবারের পক্ষ থেকে নবী পত্নী হযরত আয়েশা রা: কে নিয়ে অশ্লীল ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সকল প্রকার ষড়যন্ত্র ও কটাক্ষ বা অশ্লীল কটুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস