ইসরাইল সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ফিলিস্তিনের রামাল্লায় রাষ্ট্রীয় ভাবে দাফন করা হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ফিলিস্তিনের রামাল্লা থেকে আল জাজিরা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার (১২ মে) বাদ যোহর ফিলিস্তিনের রামাল্লায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে গতকাল ইসরাইল সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহকে দাফন করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের বংশোদ্ভূত আল জাজিরার সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন,মরহুমা শিরীন আবু আকলেহ একজন শহীদ। তিনি আসল সত্য বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান। তিনি ইতিমধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে বিবিসি জানায়,ইসরায়েলি অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর এক অভিযানের সময় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহ ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
কাতার-ভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ এবং ‘ইচ্ছেকৃতভাবে’ ৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলাকে গুলি করে। একই ঘটনায় তার প্রযোজকও গুলিবিদ্ধ হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সাংবাদিকদের টার্গেট করে গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, গোলাগুলি চলার সময় ‘সম্ভবত’ ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলি লেগেছিল তাদের গায়ে। এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই ঘটনার জন্য তিনি পুরোপুরি ইসরায়েলি সরকারকেই দায়ী করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বুধবার সকালে তাদের সৈন্যরা এবং নিরাপত্তা বাহিনী জেনিনের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছিল ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের’ ধরতে। “এই অভিযানের সময় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা সৈন্যদের দিকে গুলি চালায়ে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। সৈন্যরা তখন বন্দুকধারীদের দিকে গুলি চালায় এবং হামলার কিছু লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়।”
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শিরিন আবু আকলেহ যখন এই অভিযানের খবর দিতে সেখানে অবস্থান করছিলেন, তখন তার মাথায় গুলি লেগেছিল। খুবই সংকটজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
একই ঘটনায় আরেকজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, আল জাজিরার প্রযোজক আলি সামুদির পিঠে গুলি লাগে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার অবস্থা স্থিতিশীল।গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় শিরিন আবু আকলা প্রেস জ্যাকেট পরা ছিলেন যাতে তাকে স্পষ্টভাবেই সাংবাদিক বলে চেনা যাচ্ছিল।
ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, আল জাজিরার আরবি ভাষার চ্যানেলের একজন সুপরিচিত নারী প্রতিবেদক শিরিন আবু আকলেহ গুলিবিদ্ধ হন এবং তারপরই মারা যান।আরেক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আলী সামুদি পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
কাতার ভিত্তিক নেটওয়ার্ক আল-জাজিরা তাদের সম্প্রচার থামিয়ে শিরিনের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করে। তাদের চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে “ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সহকর্মীকে লক্ষ্যবস্তু ও হত্যা করার জন্য ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর প্রতি নিন্দা জানাতে ও জবাবদিহি করতে” আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেছেন, তারা ইতোমধ্যে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তার ভিত্তিতে “সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা, যারা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছিল, তারাই সাংবাদিকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।“
অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ পরিচালনা করা এবং ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা করা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এটিকে ইসরাইলি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত একটি “জঘন্য অপরাধ” বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরাইলি বাহিনী এবং গণমাধ্যম বিশেষ করে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের মধ্যকার সম্পর্ক টানাপড়েনের। পশ্চিম তীরের বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় রাবার বুলেট বা কাঁদানে গ্যাসে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহের গায়ে “প্রেস” লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থাকার পরও অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় কপালে গুলি করে হত্যা করায় অল ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব, অস্ট্রিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, ইতালি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইউরো বাংলা টাইমসের পরিবারের পক্ষ থেকেও আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।
কবির আহমেদ ইবিটাইমস এম আর