ভুলবশত ভারতের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়ল পাকিস্তানে

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে ভুলবশত তাদের নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ভূখণ্ডে গিয়ে পড়েছে। এই ঘটনার জন্য গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং কোনো প্রাণহানি না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গত শুক্রবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ৯ মার্চ রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের সময় যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে ভুলবশত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে ভারত সরকার। উচ্চপর্যায়ের কোর্ট অফ এনকোয়ারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের একটি জায়গায় সেই ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনা গভীরভাবে দুঃখজনক হলেও বিষয়টি অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক যে দুর্ঘটনার জন্য কোনো প্রাণহানি হয়নি।’

রাশিয়ার সংবাদসংস্থা স্পুটনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে পাকিস্তান ভূখণ্ডে পড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতের হরিয়ানার সিরসা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। পাঞ্জাব প্রদেশের মিয়া চান্নু শহরের আকাশে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি নজরে আসে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে উদ্ধৃত করে স্পুটনিকে বলা হয়, ‘সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিটে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার লক্ষ্য করে যে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে একটি উচ্চগতির বস্তু আকাশে উড়েছে। প্রাথমিক গতিপথ থেকে সরে গিয়ে বস্তুটি হঠাৎ করে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের দিকে চলে যায় এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। অবশেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে মিয়া চান্নুর কাছাকাছি চলে আসে সেটি।’

অবশ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘আর্মড’ ছিল না। অর্থাৎ হামলা চালানোর উদ্দেশে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছে যে একটি ভারতীয় ” অস্ত্রবিহীন সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র” তার ভূখণ্ডে আঘাত করেছে, বেসামরিক সম্পত্তির ক্ষতি করেছে তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে পাকিস্তান থেকে ভয়েস অফ আমেরিকা জানায়,এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার রাওয়ালপিন্ডির গ্যারিসন শহরে সংবাদদাতাদের বলেছেন, “পাকিস্তান এই স্পষ্ট লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে।”

তিনি দাবি করেছেন, “যে কারণেই এই ঘটনাটি ঘটেছে, তা ভারতীয়দের ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি বলেন, এই “উস্কানিমূলক” ভারতীয় কাজটি বুধবার সন্ধ্যায় ঘটে।

ইফতিখার বলেছেন পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষিপ্ত রকেটটি দু’দেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১০৪ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় শহর সিরসা থেকে উড্ডয়নের সাথে সাথেই তা লক্ষ্য করে এবং এর সম্পূর্ণ উড়ানের পথ “নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ” করে।

তিনি বলেন, “প্রাথমিক গতিপথ থেকে, বস্তুটি হঠাৎ করে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের দিকে চালিত হয় এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, অবশেষে মিয়া চান্নুর কাছে গিয়ে পড়ে”।

জেনারেল ব্যাখ্যা করেছেন যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ছিল এবং পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্ত প্রদেশ পাঞ্জাবের ১২৪ কিলোমিটার অভ্যন্তরে তার যাত্রা শেষ করার আগে প্রায় ২০৪ সেকেন্ডের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমায় অবস্থান করেছিল।

ইফতিখার বলেন, ” এর কারণে কিছু বেসামরিক সম্পত্তিরও ক্ষতি হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে, মানুষের জীবনের কোনও ক্ষতি বা আঘাতের ঘটনা ঘটেনি,”। তিনি উল্লেখ করেন যে সে এলাকায় কোনও স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনা ছিল না। তবে ইফতিখার বলেছেন, এরকম ঘটনার ফলে একটি বড় ধরণের বিমান বিপর্যয় এবং স্থলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত।

তিনি বলেন, “এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই ক্ষেপনাস্ত্রের আকাশ পথটিতে ভারতীয় এবং পাকিস্তানের আকাশসীমায় অনেক আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী ফ্লাইট, সেইসাথে স্থলে মানুষের জীবন এবং সম্পত্তিকে বিপন্ন করেছে,” ।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন সিনিয়র অফিসার ভাইস মার্শাল তারিক জিয়া সংবাদদাতাদের বলেছেন যে বিমান বিশেষজ্ঞরা এখনও এই উচ্চ-গতির রকেটের অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করছেন।

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »