অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে সমগ্র অস্ট্রিয়াকে লাল জোন এই থেকে ঘন লাল জোনে স্থানান্তরিত করেছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকের পর সমগ্র অস্ট্রিয়াকে করোনার সংক্রমণের বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘন লাল জোন ঘোষণা করেছে। গত সপ্তাহে আশা করা হয়েছিল যে, এই সপ্তাহে অত্যন্ত রাজধানী ভিয়েনা,বুর্গেনল্যান্ড সহ আরও কয়েকটি রাজ্য লাল জোন থেকে কমলা জোনে ফেরত আসবে। তবে বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার অস্বাভাবিক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বুধবার রেকর্ড সংখ্যক ৪৭,৭৯৫ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার নতুন করে আবারও একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৯,৪৩২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন। বর্তমানে অস্ট্রিয়াতে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.2 এর প্রাদুর্ভাব চলছে। এই সাব ভ্যারিয়েন্ট BA.2 সাধারণ ওমিক্রনের চেয়ে অনেক বেশী দ্রুত সংক্রামক। তাছাড়াও বর্তমানে এই সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন আগামী দিনগুলিতে সংক্রমণের বিস্তারের এই বৃদ্ধির পরিমাণ অব্যাহত থাকবে। গত ৫ মার্চ থেকে অস্ট্রিয়ায় নির্দিষ্ট কিছু স্থানে FFP2 মাস্ক পড়া ছাড়া বাকী অন্যান্য সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,বর্তমান অস্ট্রিয়াতে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে অস্ট্রিয়ার ট্রাফিক লাইট কমিশন সমগ্র অস্ট্রিয়াকে পুনরায় করোনার সংক্রমণ বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘন লাল জোনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। যদিও গত কয়েক সপ্তাহে করোনার সংক্রমণের বিস্তার সামান্য হ্রাস পেয়েছিল। গত ১৪ দিনের প্রবণতা এখন আবার উপরের দিকে নির্দেশ করছে। কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন অঞ্চলে তা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে। ফলে অস্ট্রিয়ার হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডগুলিতে করোনার রোগীর ভর্তিও বাড়ছে, যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের কার্যকারী নথি থেকে দেখা যায়।
অস্ট্রিয়ার ফেডারেল রাজধানী ভিয়েনা এই সপ্তাহেই করোনার সংক্রমণের বিস্তারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পথে ছিল কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় জুড়ে প্রতি এক লাখ জনপদে আক্রান্ত ছিল ১৬৯ জন। তবে এই সপ্তাহে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২১৫ তে পৌঁছেছে।
ভিয়েনায় বর্তমানে প্রতি এক লাখ জনপদে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত আছেন ১২২ জন। গত সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ১০৫ জন। অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে Tirol রাজ্য। এই রাজ্যে প্রতি এক লাখ জনপদে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত আছেন ৩৬৩ জন।
অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতালগুলিতে রোগীর ভর্তির সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। Burgenland রাজ্যের হাসপাতালের স্বাভাবিক করোনার স্টেশনগুলিতে করোনায় রোগীদের দ্বারা নির্দিষ্ট দখলের জন্য ইতিমধ্যেই দ্বি-সংখ্যার পরিসরে রয়েছে৷ অন্যান্য সমস্ত ফেডারেল রাজ্যে, হাসপাতালের কোভিড মামলার সংখ্যাও বাড়বে, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট সহ। যদিও অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের হাসপাতালের অবস্থা এখনও সুরক্ষিত অবস্থায় এবং নিয়ন্ত্রণে আছে।
অস্ট্রিয়ার জটিলতা বিষয়ক গবেষক পিটার ক্লিমেক এপিএ এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন সরকারের বাধ্যতামূলক টিকা স্থগিত করার সিদ্ধান্তের সাথে বর্তমান করোনা সংক্রমণের বিস্তার বৃদ্ধির সাথে খুব একটা সম্পর্ক নাই। “বাধ্যতামূলক টিকা সর্বদা ২০২২ সালের শরতের প্রস্তুতি হিসাবে ছিল।” তার মতে, বর্তমানে করোনার সংক্রমণের বিস্তারের এই বৃদ্ধির কারণ গত ফেব্রুয়ারিতে খোলার কারণে।
এদিকে অস্ট্রিয়ায় গতকাল (১০ মার্চ) করোনায় নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৪৯,৪৩২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ জন। রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৮,৩৯৫ জন।
অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৯,২৮৩ জন, Steiermark রাজ্যে ৯,১০৭ জন, OÖ রাজ্যে ৮,৪৬৯ জন, Tirol রাজ্যে ৩,৬৯০ জন, Salzburg রাজ্যে ৩,৩৪৮ জন, Kärnten রাজ্যে ২,৭৮১ জন, Vorarlberg রাজ্যে ২,৬০৮ এবং Burgenland রাজ্যে ১,৭৫১ জন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩৭৫ জন এবং করোনার প্রতিষেধক টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ২,৮৫৩ জন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩০,২২,০৭৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,১৩৬ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ২৬,৭১,১৬২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১৭৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৬৬৮ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস