অস্ট্রিয়ায় করোনায় একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত শনাক্ত প্রায় ৪৮ হাজার

ভিয়েনার রাজ্য গভর্নর ও মেয়র মিখাইল লুডভিগ (SPÖ) সবকিছু দ্রুত খোলার জন্য আবারও সরকারের সমালোচনা করলেন। সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে,দেশে আবারও একটি নতুন লকডাউন উড়িয়ে দেওয়া যায় না

 

ইউরোপ ডেস্কঃ গতকাল বুধবার(৯ মার্চ) অস্ট্রিয়ায় করোনায় একদিনের রেকর্ড সংখ্যক ৪৭,৭৯৫ জন নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন এবং একই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২ জন। প্রায় ৮৯ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত আল্পস পর্বতমালার ছোট্ট এই মধ্য ইউরোপীয় দেশের জন্য সংক্রমণের এই সংখ্যা খুবই বেশী।

অস্ট্রিয়ার ফেডারেল রাজধানী ভিয়েনার গভর্নর ও সিটি মেয়র মিখাইল লুডভিগ (SPÖ) এক টুইট বার্তায় সরকারের তড়িঘড়ি করে গত ৫ মার্চ থেকে শুধুমাত্র মাস্ক পড়া ছাড়া বাকী সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে আবারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন সংক্রমণের এই রেকর্ড সংখ্যক শনাক্ত খুবই উদ্বেগজনক। তিনি তার বার্তায় জোর দিয়ে বলেন, ফেডারেল সরকারের করোনার বিধিনিষেধ বা সুরক্ষা অপসারণ একটি মারাত্মক ভুল ছিল,তা আবারও প্রমাণিত হল।

মিখাইল লুডভিগ আরও বলেন,আমি বরাবরের মতই এর বিরোধীতা করে আসছি। তাই সমগ্র অস্ট্রিয়ায় রেস্টুরেন্ট থেকে সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলেও আমরা ভিয়েনায় এখনও 2G নিয়ম বলবৎ রেখেছি। তিনি সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোহানেস রাউখকে উদ্দেশ্য করে বলেন,করোনার এই উচ্চ রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ এবং এর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলা করার আহ্বান জানাই। কারণ দেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সবসময় সবার আগে আসতে হবে। তিনি আরও জানান, অস্ট্রিয়ার বাধ্যতামূলক টিকাদানের বিশেষজ্ঞ কমিশন শরৎকালে একটি নতুন করোনা তরঙ্গের প্রত্যাশা করেছে – একটি লকডাউনও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,ফেডারেল সরকার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক টিকা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোহানেস রাউখের(Greens) সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বুধবার সাংবিধানিক মন্ত্রী ক্যারোলিন এডস্ট্যাডলার(ÖVP) দেশে বাধ্যতামূলক করোনার প্রতিষেধক টিকাদানের আইন স্থগিতাদেশের কথা জানান এবং আগামী তিন মাসের মধ্যেই সরকার কর্তৃক গঠিত করোনার প্রতিষেধক টিকাদান কমিশন একটি নতুন পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।

সরকার প্রধান চ্যান্সেলরির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ক্যারোলিন এডস্ট্যাডলার দেশে বাধ্যতামূলক করোনার প্রতিষেধক টিকার আইন প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন,প্রচলিত ওমিক্রন বৈকল্পিকের বাধ্যবাধকতা আনুপাতিক নয়। তাছাড়াও এখন করোনার ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব চললেও তা অনেকটাই স্বাভাবিক ভাইরাসের
মতোই আচরণ করছে।

এই সংবাদ সম্মেলনে সবেমাত্র শপথ নেয়া নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোহানেস রাউখ তেমন কিছু বলেন নি। তবে তিনি মন্ত্রী ক্যারোলিন এডস্ট্যাডলার নেতৃত্বাধীন করোনার প্রতিষেধক বাধ্যতামূলক টিকাদান কমিশনের দেশে বাধ্যতামূলক টিকাদান স্থগিত করায় কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান,অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা
আবারও আগামী শরতে অস্ট্রিয়ায় পুনরায় করোনা মহামারীর একটি নতুন প্রাদুর্ভাবের সতর্কতার কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাউখ করোনার টিকাদান কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,একটি “নতুন, সম্ভবত সংক্রমণের বিশাল তরঙ্গ” প্রত্যাশিত এবং যদি কোনো সতর্কতা অবলম্বন না করা হয়, তাহলে প্রভাবশালী রূপটি এমন একটি জনসংখ্যার মুখোমুখি হতে পারে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং এইভাবে “শীতকালীন ২০২১ সালের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে বেশি রোগের বোঝার দিকে নিয়ে যায়,” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,”যদি পূর্বাভাস প্রতিকূল হয়, তাহলে ২০২২ সালের শরৎকালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ওভারলোড হতে পারে বা ওভারলোড এড়াতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।” নতুন লকডাউনের কথাও আছে!

টিকা কেন্দ্রীয় টুল বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রামক ঘটনা এবং রোগের বোঝা পরিচালনার জন্য টিকা একটি মূল হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “উচ্চ টিকা দেওয়ার হার নিশ্চিত করার জন্য একটি পরীক্ষিত এবং পরীক্ষিত উপায় হিসাবে টিকা দেওয়ার মৌলিক বাধ্যবাধকতা এখনও নীতিগতভাবে বোঝা যায় যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অতিরিক্ত বোঝা এড়ানো যায়,” বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে টিকা প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা কখন এবং কখন কার্যকর করা প্রয়োজন তা নির্ভর করে বিভিন্ন কারণের উপর, যেমন মহামারী সংক্রান্ত বিকাশ (নতুন রূপ, বসন্ত এবং গ্রীষ্মে সংক্রমণের কোর্স) বা অর্জিত অনাক্রম্যতা হ্রাসের পরবর্তী কোর্স টিকা বা অসুস্থতার মাধ্যমে।

সেপ্টেম্বরে বুস্টার ভ্যাকসিনেশন টিকা দেওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সংক্রমণের সম্ভাব্য তরঙ্গের সূত্রপাতের বিষয়ে টিকা প্রশাসনের সর্বোত্তম সম্ভাব্য সময় এবং সংশ্লিষ্ট লজিস্টিকগুলির একটি সূক্ষ্ম প্রস্তুতির পাশাপাশি উপযুক্ত যোগাযোগ অপরিহার্য পূর্বশর্ত।

উপরন্তু, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত যতটা সম্ভব লোকজনের একটি বুস্টার টিকা নেওয়া সম্পন্ন করা উচিত। “যার ফলে শেষ ইমিউনোলজিকাল ঘটনাটি আদর্শভাবে শরতের তরঙ্গের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব কম সময় হওয়া উচিত”।

এদিকে গতকাল বুধবার অস্ট্রিয়ায় নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৪৭,৭৯৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২ জন। রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৮,৯৫৫ জন।

অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ ১১,২১৬ জন, OÖ রাজ্যে ৯,০০৭ জন, Steiermark রাজ্যে ৭,৭৭০ জন, Tirol রাজ্যে ৩,২০৭ জন, Salzburg রাজ্যে ২,৮৬৮ জন, Vorarlberg রাজ্যে ২,২৮৬ জন, Kärnten রাজ্যে ১,৬১৭ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৮৬৯ জন নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বুধবার করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪১১ জন এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ২,৭০৯ জন।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৯,৭২,৬৪৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,১১৩ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ২৬,৪৩,৯৪১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩,১৩,৫৯৩ জন। এর মধ্যে
আইসিইউতে আছেন ১৮২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৭৬৪ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »