রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর দেশ ছেড়ে পালানো হাজার হাজার শরণার্থীর মধ্যে এমন অনেক শিশু রয়েছে,যাদের সাথে তাদের পিতা-মাতা নাই
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার জনপ্রিয় ফ্রি মেট্রো পত্রিকা “Heute” ভিয়েনা প্রশাসনের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া ফ্রিমেলের উদ্ধৃতি দিয়ে একথা জানান। বর্তমানে ভিয়েনা প্রশাসন থেকে একটি জরুরী বার্তায় বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনকে জানানো হয়েছে যে, ইউক্রেন থেকে আসা পিতামাতাহীন শিশুদের জন্য এখন পালক পরিবার প্রয়োজন।
আন্দ্রেয়া ফ্রিমেল আরও জানান,যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে রুমানিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া হয়ে রেলভ্রমনের মাধ্যমে পিতামাতাহীন শিশুরা শরণার্থী দলের সাথে ইতিমধ্যেই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পৌঁছতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান এই সমস্ত শিশুদের ভিয়েনার বিশেষ প্রাথমিক চিকিৎসা শিবিরে রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু দিনের পর দিন শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই ভিয়েনা প্রশাসন থেকে নগরবাসীদের প্রতি এই সমস্ত শিশুদের দত্তক বা অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য জরুরী ভিত্তিতে আবেদন জানানো হয়েছে। অবশ্য কারিতাস অস্ট্রিয়া(CARITAS) সহ আরও কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা যেমন, Diakonie, Volkshilfe, এবং Red-Cross অস্ট্রিয়া এই ব্যাপারে নিজ নিজ চ্যানেলে কাজ করছেন।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার (ÖVP) ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশী দুর্যোগ ও ত্রাণ তহবিল থেকে ১৫ মিলিয়ন ইউরোর সাহায্য প্যাকেজের কথা জানিয়েছেন। এই অর্থের কিছু পরিমাণ উপরোক্ত সাহায্যকারী সংস্থার জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে যাতে শরণার্থীরা সহজেই অস্ট্রিয়া আসতে পারে এবং পুনর্বাসিত হতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বন্ধু বা প্রতিবেশীদের সাথে নিরাপদ দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে পাঠিয়ে তারা দেশেই থেকে গেছেন। কেননা ইউক্রেন সরকার অল্প বয়স্ক মানুষদের ইউক্রেন ছেড়ে না যেতে অনুরোধ করেছেন। অনেক পিতা-মাতা বন্ধুবান্ধব বা নিকটাত্মীয়দের কাছে তাদের সন্তানদের দিয়ে বলেন, যুদ্ধ শেষ হলে তারা তাদের সন্তানকে ফিরিয়ে নিবেন।
অনেক শরণার্থী অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,অনেক পিতামাতাহীন শিশুর পিতা-মাতার অনেকেই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তাছাড়াও ভিয়েনায় শরণার্থীদের সাথে এমনও অনেক শিশু আছে যারা তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে পালানোর সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে অন্যান্য শরণার্থীরা তাদের সাথে করে নিয়ে আসে। ভিয়েনা প্রশাসন Heute পত্রিকাকে একটি হট নাম্বার দিয়েছেন তাদের জন্য, যারা এই সমস্ত শিশুদের পালক বা অস্থায়ী আশ্রয় দিতে
চান।
পালিত শিশুদের বিভাগ,ভিয়েনা রাজ্য প্রশাসন – 01/4000-90770, সোম-শুক্র 8:00-15:30। ই-মেইল: kanzlei rap@ma11.wien.gv.at
আরও তথ্যের জন্য ভিয়েনা শিশু ও যুব কল্যাণ পরিষেবার হটলাইন এর 01/4000-8011, এই নাম্বারে সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
গত সোমবার একটি সংবাদ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল যে,১১ বছরের একটি ছেলে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শরণার্থী দলের সাথে একা স্লোভাকিয়া সীমান্তে আসে। অবশ্য সংবাদ মাধ্যমে ছেলেটির নাম প্রকাশ করা হয়নি।
একটি যুদ্ধের পরিণতি যে কি ভয়ানক হতে পারে, তা এখন দেখছে গোটা বিশ্ব। পরিণতি যে কি হতে চলেছে এখন কেবল সেই আশঙ্কা চতুর্দিকে। এরই মধ্যে উঠে এল এক মর্মস্পর্শী দৃশ্য। দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া থেকে একা প্রায় ১,০০০
হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ১১ বছর বয়সী এক ছেলে শিশু স্লোভাকিয়া এসেছে। তার সাথে সম্বল বলতে পাওয়া গেছে একটি ব্যাকপ্যাক, পাসপোর্ট আর হাতে লেখা কিছু ফোন নাম্বার।
স্লোভাকিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশী বিদেশী সংবাদ মাধ্যমকে বলা হয়েছে, সীমান্তে যখন ১১ বছরের একটি ছেলেকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তখন কিছুটা অবাক হন স্লোভাক সেনারা। সৌভাগ্যক্রমে সৈন্যরা ছেলেটির হাতে লেখা কিছু ফোন নাম্বার দেখতে পায়। ছেলেটির সাথে পাওয়া পাসপোর্টের ভিতরে ভাঁজ করা একটি কাগজে তথ্য ছিল। তার সাহায্যে স্লোভাকিয়ায় তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করেছিল, সংবাদসংস্থা সিএনএন- এর রিপোর্ট সূত্রে তা জানা গিয়েছে। বলা হয়েছে, “ছেলেটিকে একাই আসতে হয়েছিল কারণ তাঁর বাবা-মাকে ইউক্রেনে থাকতে হয়েছিল। সীমান্তের স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁকে আলাদা করে নিয়ে যান এবং খাবার ও গরম পোশাকও দেন। বালকের হাসি ও নির্ভীক মনোভাব সকলের মন জয়ে করেছিল।”
তবে ছেলেটি কেন একা একা সীমান্তে পাড়ি দিয়েছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। ছেলেটির এই যাত্রা ফের ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণের হৃদয়বিদারক দিকটি তুলে ধরে। সংবাদ সংস্থা এপি-র রিপোর্টে উল্লেখ, যুদ্ধের ১১ দিনেই ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সব থেকে বড় মানব সঙ্কট, রিপোর্টে দাবি সংবাদসংস্থা এপি-এর। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা UNHCR জানিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে ২০ লাখের উপরে মানুষ পালিয়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস