Innsbruck মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ডরোথি ভন লেয়ার একটি দেশব্যাপী অ্যান্টিবডি গবেষণার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার এই টপ ভাইরোলজিস্ট গতকাল সন্ধ্যায় অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন ORF এর সংবাদ বিষয়ক অনুষ্ঠান ZIB এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডির জন্য ৫,০০০ হাজার লোককে নির্বাচন করতে হবে।
তিনি জানান, এর জন্য নীতিশাস্ত্র কমিটির অনুমোদন এবং তারও আগে অস্ট্রিয়ার ফেডারেল সরকারের আদেশ বা অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ভন লেয়ার নিশ্চিত করেছেন যে এই অর্থপূর্ণ অ্যান্টিবডি মান করোনার গ্রিন পাসেও প্রবেশ করবে।
অ্যান্টিবডি কী ? সাধারণভাবে আমরা জানি যে,করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিলে দেহে করোনাভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায় তাকেই অ্যান্টিবডি বলা হয়। তাছাড়াও একবার করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনি সেরে উঠতে উঠতেই আপনার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হযে যাবে, এবং আপনি করোনাভাইরাস-প্রতিরোধী হযে যাবেন।
সোজা কথায়, আপনার দেহে এ্যান্টিবডি থাকলে তবেই আপনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারবেন – তার আগে নয়। তবে নতুন এক জরিপে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যাদের দেহে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় নি – তাদের দেহেও এ ভাইরাস প্রতিরোধের অন্তত খানিকটা ক্ষমতা থাকে।
এখন প্রশ্ন হল, সেই ক্ষমতা কোথা থেকে আসে ? সুইডেনের কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের ওই জরিপটির গবেষকরা বলছেন, তা আসে ‘টি-সেল’ নামে রক্তে থাকা আরেক ধরণের কোষ থেকে – যার কাজ কোন দেহকোষে সংক্রমণ হলেই তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করা। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ক্ষমতার গবেষণায় এতদিন বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে অ্যান্টিবডির দিকেই।
“এটা হচ্ছে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মতো দেখতে একটা প্রোটিন যা ঠিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে একটা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার মতো করেই কাজ করে” – বলছেন সহকারী অধ্যাপক মার্কাস বাগার্ট, যিনি এই জরিপ রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা।
করোনাভাইরাস মানুষের দেহকোষে ঢোকার আগেই এই অ্যান্টিবডিটা ভাইরাসের সাথে আটকে গিয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।আর যদি অ্যান্টিবডি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে করোনাভাইরাসে দেহকোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সেটাকে আরো ভাইরাস তৈরির কারখানায় পরিণত করে। গবেষকরা ইতোমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছে এমন দেহকোষগুলো টার্গেট করে এবং সেগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেখেছেন,তখন ভাইরাস সংক্রমণ থেকে অন্য সুস্থ কোষ আক্রান্ত হতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, টি-সেলের এক ধরনের “স্মৃতিশক্তি” আছে।তারা ভাইরাসটাকে চিনতে পারলেই এটা কোন কোন কোষগুলোকে সংক্রমিত করেছে তা টার্গেট করে সেগুলো ধ্বংস করতে থাকে। জরিপটি চালানো হয় ২০০ শত লোকের উপর । তাদের দেহে অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল দুটোই আছে কিনা, সেটাই এ জরিপে পরীক্ষা করা হয়েছিল। জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রতি একজন অ্যান্টিবডি-বিশিষ্ট ব্যক্তির বিপরীতে দু’জন করে লোক পাওয়া যাচ্ছে যাদের রক্তে এমন টি-সেল আছে – যা সংক্রমিত দেহকোষ চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করে ফেলতে পারে।
ভাইরোলজিস্ট ডরোথি ভন লেয়ার আরও জানান, অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আরও দশ লাখ মানুষকে করোনার টিকা নিতে হবে। তাহলে অস্ট্রিয়া করোনা মহামারী থেকে বের হওয়ার আশা করতে পারে কিন্ত বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা বৃদ্ধির পরিবর্তে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
এদিকে জার্মানির Leibnitz Institute for Economic Research (RWI) এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছেন, যারা এখনও করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি, তাদের আটকাতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে তার চেয়ে পুনরায় একটি নতুন লকডাউন চার গুণ বেশি ব্যয়বহুল হবে। কাজেই ইউরোপের কোন দেশই আর নতুন লকডাউনে যেতে চাইছে না।
অস্ট্রিয়ায় আগামী বুধবার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে পুনরায় কেনাকাটায় ও সকল ইন্ডোর ইভেন্টে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করেছে। যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি,তাদের জন্য সর্বত্র FFP2 মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পুলিশ প্রশাসন আগামী বুধবার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে পুনরায় মাস্ক পড়া নিয়ন্ত্রণ করবে। কেহ নিয়ম ভঙ্গ করলে € ৯০ ইউরোর(প্রায় ৳ ৯,০০০ টাকা) জরিমানা গুনতে হবে।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস