বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতকাল পার্লামেন্টে একথা জানান
ইউরোপ ডেস্কঃ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে বলেন,বেশীরভাগ ব্রিটিশ সেনাকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বৃটিশ সৈন্যরা প্রায় দুই দশক সময় ধরে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে জড়িত ছিল। বর্তমানে তালেবানরা সেখানে কর্তৃত্ব গ্রহণ করছে এবং বিদেশী সৈন্যদের চলে যাওয়ার ফলে গৃহযুদ্ধের কারণ হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
“আফগানিস্তানে ন্যাটো মিশনে নিযুক্ত সমস্ত ব্রিটিশ সেনা এখন দেশে ফিরছেন,” প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংসদকে বলেন, ব্রিটিশ বাহিনী কী অর্জন করেছিল, একই সাথে আফগানিস্তানের মুখোমুখি যুদ্ধের “বিপদ” এর এবং হতাহতের কথা স্বীকার করেছেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, “সুস্পষ্ট কারণে আমি আমাদের বিদায়ের সময়সূচি প্রকাশ করব না, যদিও আমি হাউজকে (সংসদ) কে বলতে পারি যে আমাদের বেশীরভাগ সৈন্য ইতোমধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সরে এসেছেন।
১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরে ব্রিটিশ বাহিনীকে প্রথম আফগানিস্তানে মোতায়েন করা হয়েছিল এবং ২০১৪ অবধি যুদ্ধ পরিচালনায় বড় ভূমিকা নিয়েছিল। আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে যুদ্ধে এই পর্যন্ত ৪৫৭ জন বৃটিশ সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
ন্যাটো(যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট) যার মধ্যে ব্রিটেন একজন অন্যতম সদস্য। বৃটেন সরকার এপ্রিলে বলেছিল যে তার সেনারা ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার জন্য রাষ্ট্রপতি জো বিডেনের সিদ্ধান্তের সাথে সমন্বয় করে সরে যেতে শুরু করবে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘতম এই আফগানিস্তান যুদ্ধের কার্যকরভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের দীর্ঘকালীন মঞ্চভূমি বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি পরিত্যাগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগন বলেছে যে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার ৯০% সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
জনসন বলেন যে, তিনি আফগানিস্তানের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলোকে অবমূল্যায়ন করেন না। তিনি আরও যোগ করে বলেন,আফগানিস্তানের সরকারকে বৃটেন তার উন্নয়নে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।”আমি আশা করি কেউই এই মিথ্যা উপসংহারে ঝাঁপিয়ে পড়বে না যে আমাদের বাহিনী প্রত্যাহারের অর্থ হ’ল আফগানিস্তানের প্রতি ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতি শেষ, আমরা আর মুখ ফিরিয়ে নেব না এবং আমরা আজকের পরিস্থিতির বিপদ সম্পর্কে কোন ভ্রান্তির মধ্যে নেই।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনৈক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কূটনীতিকদের সুরক্ষার জন্য অল্প সংখ্যক সেনা এখনও সেখানে থাকবে। বৃটিশ প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান হিসাবে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসাবে থাকা নিক কার্টার বলেছিলেন, আমেরিকান এবং অন্যান্য বিদেশী সেনা চলে যাওয়ায় আফগানিস্তান গৃহযুদ্ধের পথে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক সংবাদগুলি “অত্যন্ত মারাত্মক” এবং সেখানে বিদেশি সেনা ছাড়া দেশে গৃহযুদ্ধের কারণে সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
তিনি বলেন, আফগানিস্তান ১৯৯০ এর দশকের গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে”যেখানে শুধুমাত্র যুদ্ধবাজদের সংস্কৃতি দেখতে পাওয়া যায় এবং সুরক্ষার বাহিনীর মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে নৃগোষ্ঠী বা এই বিষয়টির জন্য উপজাতি সম্প্রদায়কে ভাঙ্গতে দেখা যাবে।””যদি এটি ঘটে থাকে তবে আমার ধারণা, তালেবানরা দেশের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে অবশ্যই তারা দেশের সমস্ত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করবে না।”
এদিকে বৃটেনে করোনার সংক্রমণ অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে পরবর্তী বড় ধরণের প্রাদুর্ভাবেরই ঈন্গিত বহন করছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগামী ১৯ জুলাই থেকে বৃটেনে করোনার ব্যাপক বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার ৮ জুলাই নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৩২,৫৫১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৫ জন। সমগ্র বৃটেনে বা যুক্তরাজ্যে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ২২ হাজার ৮৯৩ জন এবং এই পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৬ জন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯৩ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আছেন ৪১৭ জন।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস