ভিয়েনা ১১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ডেঙ্গুেত আরও ৪ জনের প্রাণহানি হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সময়সীমা নেই – ট্রাম্প জার্মানিতে শরণার্থীদের অনেকেই এখনও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে মঙ্গলবার অস্ট্রিয়া সফরে আসছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার ওমানে দুর্ঘটনায় নিহত ৮ প্রবাসীর লাশ ফিরল দেশে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী, সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না: ইসি আনোয়ারুল তজুমদ্দিনে আগুনে পুড়লো ১৯ মাছের আড়ৎ

কাজ নেই ভাসমান নরসুন্দরের, করোনায় ট্রিমারের দাপট

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৯:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
  • ৭ সময় দেখুন

সাব্বির আলম বাবু, ভোলা: দেশব্যাপী মহামারী করোনার প্রভাবে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের সাথে সেলুন ব্যবসায়ীরাও সরকার ঘোষিত লকডাউনে এখন কর্ম বিরতিতে আছে।

নরসুন্দর (নাপিত) সুকুমার শীল এমনই একজন। যে তার ইটপাতা ভ্রাম্যমান সেলুনে কাজ করে বংশানুক্রমিক এ পেশাকে টিকিয়ে রেখে সামান্য উপার্জনে কোনরকমে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। কখনো আকাবাকা মেঠো পথের পাশে, কখনো হাটবাজারের এক কোনায়, হাটতে গিয়ে দূর থেকে চোখে পড়তো সত্তোর্ধ এক বৃদ্ধের কোলে মাথা লুকানো এক যুবক। দুজনেই পিঁড়িতে বসা। বৃদ্ধের হাতে কাঁচি-চিড়ুনী।

কাঁচি-চিড়ুনীর চিক-চাক শব্দের এক অপরুপ খেলা। একমনে নিবিঢ় ভালোবাসায় নিপুন হাতে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে যাচ্ছেন বৃদ্ধ। যা আজকাল খুব একটা দেখা যায় না।

সুকুমার শীলের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তার লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত। পরিবারিক দুর অবস্থার কারনে অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন পৈত্রিক পেশায়। পাকিস্তান-বাংলাদেশের সৃস্টি আজ অব্দি এই জীবনে অনেক কিছুই দেখেছেন। সেই থেকে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিই যেন তার দায়িত্ব হয়ে পরেছে। আটআনা মুজুরীতে প্রথম তার চুলকাটা শুরু। চার আনা, আট আনা করে যা মুজুরী পেতেন তাই ছিল অনেক। সারাদিন হাটবাজার, রাস্তার ধারে কাজ করতেন, হাট ভাঙতে রাত ১২টা ১টা বাজতো। কোমরে বাধা থাকতো চারকোনা লেজওয়ালা কাঁচা টাকার ব্যাগ। এক সময় খুচরা পয়সা জমে ভরে যেতো ব্যাগ। দুদিনের বাজার করেও জমা থাকতো পয়সা। সে সময় হাট শেষে বাজারের ভরা ব্যগ আর পয়সার ব্যাগ কোমরে বেঁধে গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফেরার স্মৃতি আজও স্বপ্নের মতো। এখন ২০০/৩০০ টাকা আয়ে পকেট ভরে কিন্তু পেট ভরে না। নদী পাড়ের মানুষ হয়েও ইলিশ মৌসুমে বড় একটা ইলিশ কিনতে পারেননি বলে তার বড় আক্ষেপ।

সকুমার বলেন মানুষ এখন সৌখিন। তারা আধুনিক সেলুনে চুলকাটায় বেশী আগ্রহী। তার ভাষায় ‘আয়না ওয়ালা সেলুনে দ্যাশ ভইরা গ্যাছে, তাই মানুষ আর ইটে বইয়া চুল কাটাতে চায় না। হের লাইগা আমাগো আয় রোজগার এখন কম অয়।’

সুকুমার জানান, সম্পত্তি বলতে পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তার। বউ ৩ ছেলে ১ মেয়ের কেউই এখন তার কাছে নেই। লেখাপড়া বেশী না করলেও তারা সবাই ঢাকা-বরিশাল গেছে জীবিকার সন্ধানে।

নরসুন্দর সুকুমার শীল এ পর্যন্ত কোন বয়ষ্ক ভাতা বা কোন প্রকার সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। এ জন্য অবশ্য তার কোন আক্ষেপও নেই। তিনি বলেন, এই হাতে কত মাইনষের আউজ (শিশুকালে প্রথম চুলকাটা) কামাইছি। সেই ছোট্ট পোলাপান এহন কত্তো বড় অইছে, শিক্ষিত হইয়া বড় বড় চাকুরী করতাছে, দেখলে বুকটা ভইরা যায়। মনে অয় আমার কর্ম সার্থক।

গ্রামের হিন্দু সমাজে সুকুমার শীলের মতো বংশানুক্রমিক নরসুন্দরদের বেশ কদর। ঘর শুদ্ধি, শ্রাদ্ধের জন্য তাদের নিয়মিত ডাক পরে। জীবনের শেষ কয়টা দিন তিনি মানুষের মাঝেই কাটাতে চান। যতদিন কর্মক্ষম থাকবেন এই পেশাতেই নিয়োজিত থাকবেন।

প্রায় দুই তিন যুগ আগেও গ্রামের সকল হাটবাজারেই কম বেশী দেখা মিলতো ভ্রাম্যমান নরসুন্দরদের। হাটজারে আসা ক্রেতারা নিজেদের প্রয়োজনীয় পন্য কিনার ফাঁকে ফাঁকে চুল-দাড়ি কাটানোর কাজটাও সেরে নিতেন অল্প খরচে। এসকল সেলুনে আসন কেবল একটি ইট। ইটের উপর বিছানা বিছিয়ে নরসুন্দরগন নিপুন হাতে করতেন তার ক্ষৌরকর্ম।

আধুনিক সেলুনে চুল-দাড়ি কাটাতে জন প্রতি ৯০/১০০ টাকা লাগে, সেখানে ভ্রাম্যমান সেলুনে ২৬/৩০ টাকা দিলেই চলে। এসব সেলুনে দৈনিক আয় হয় গড়ে ২০০/৩০০ টাকা। বর্তমান জীবনযাপনে এই আয় নিতান্তই অপ্রতুল। তারপরও গ্রামে গঞ্জের মানুষের সাথে গভীর সম্পর্কের টানে তারা নানা কস্টের মাঝেও এ পোশা বাদ দিতে পারেন না। কখনো বা ভাগ্য ভালো হলে কোন গ্রামের বাড়ী সদ্যজাত সন্তানের আকিকা অনুষ্ঠানে গেলে সেদিন নরসুন্দরেরা ভালো বকশিস পায়। কিন্তু ইদানিং করোনা রোগের প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত লকডাউন ও আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই উধাও হয়ে যাচ্ছে ভ্রাম্যমান সেলুন।

ভোলা//ইবিটাইমস/আরএন

জনপ্রিয়

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

কাজ নেই ভাসমান নরসুন্দরের, করোনায় ট্রিমারের দাপট

আপডেটের সময় ০৯:২২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

সাব্বির আলম বাবু, ভোলা: দেশব্যাপী মহামারী করোনার প্রভাবে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের সাথে সেলুন ব্যবসায়ীরাও সরকার ঘোষিত লকডাউনে এখন কর্ম বিরতিতে আছে।

নরসুন্দর (নাপিত) সুকুমার শীল এমনই একজন। যে তার ইটপাতা ভ্রাম্যমান সেলুনে কাজ করে বংশানুক্রমিক এ পেশাকে টিকিয়ে রেখে সামান্য উপার্জনে কোনরকমে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। কখনো আকাবাকা মেঠো পথের পাশে, কখনো হাটবাজারের এক কোনায়, হাটতে গিয়ে দূর থেকে চোখে পড়তো সত্তোর্ধ এক বৃদ্ধের কোলে মাথা লুকানো এক যুবক। দুজনেই পিঁড়িতে বসা। বৃদ্ধের হাতে কাঁচি-চিড়ুনী।

কাঁচি-চিড়ুনীর চিক-চাক শব্দের এক অপরুপ খেলা। একমনে নিবিঢ় ভালোবাসায় নিপুন হাতে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে যাচ্ছেন বৃদ্ধ। যা আজকাল খুব একটা দেখা যায় না।

সুকুমার শীলের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তার লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত। পরিবারিক দুর অবস্থার কারনে অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন পৈত্রিক পেশায়। পাকিস্তান-বাংলাদেশের সৃস্টি আজ অব্দি এই জীবনে অনেক কিছুই দেখেছেন। সেই থেকে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিই যেন তার দায়িত্ব হয়ে পরেছে। আটআনা মুজুরীতে প্রথম তার চুলকাটা শুরু। চার আনা, আট আনা করে যা মুজুরী পেতেন তাই ছিল অনেক। সারাদিন হাটবাজার, রাস্তার ধারে কাজ করতেন, হাট ভাঙতে রাত ১২টা ১টা বাজতো। কোমরে বাধা থাকতো চারকোনা লেজওয়ালা কাঁচা টাকার ব্যাগ। এক সময় খুচরা পয়সা জমে ভরে যেতো ব্যাগ। দুদিনের বাজার করেও জমা থাকতো পয়সা। সে সময় হাট শেষে বাজারের ভরা ব্যগ আর পয়সার ব্যাগ কোমরে বেঁধে গান গাইতে গাইতে বাড়ী ফেরার স্মৃতি আজও স্বপ্নের মতো। এখন ২০০/৩০০ টাকা আয়ে পকেট ভরে কিন্তু পেট ভরে না। নদী পাড়ের মানুষ হয়েও ইলিশ মৌসুমে বড় একটা ইলিশ কিনতে পারেননি বলে তার বড় আক্ষেপ।

সকুমার বলেন মানুষ এখন সৌখিন। তারা আধুনিক সেলুনে চুলকাটায় বেশী আগ্রহী। তার ভাষায় ‘আয়না ওয়ালা সেলুনে দ্যাশ ভইরা গ্যাছে, তাই মানুষ আর ইটে বইয়া চুল কাটাতে চায় না। হের লাইগা আমাগো আয় রোজগার এখন কম অয়।’

সুকুমার জানান, সম্পত্তি বলতে পৈত্রিক ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই তার। বউ ৩ ছেলে ১ মেয়ের কেউই এখন তার কাছে নেই। লেখাপড়া বেশী না করলেও তারা সবাই ঢাকা-বরিশাল গেছে জীবিকার সন্ধানে।

নরসুন্দর সুকুমার শীল এ পর্যন্ত কোন বয়ষ্ক ভাতা বা কোন প্রকার সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। এ জন্য অবশ্য তার কোন আক্ষেপও নেই। তিনি বলেন, এই হাতে কত মাইনষের আউজ (শিশুকালে প্রথম চুলকাটা) কামাইছি। সেই ছোট্ট পোলাপান এহন কত্তো বড় অইছে, শিক্ষিত হইয়া বড় বড় চাকুরী করতাছে, দেখলে বুকটা ভইরা যায়। মনে অয় আমার কর্ম সার্থক।

গ্রামের হিন্দু সমাজে সুকুমার শীলের মতো বংশানুক্রমিক নরসুন্দরদের বেশ কদর। ঘর শুদ্ধি, শ্রাদ্ধের জন্য তাদের নিয়মিত ডাক পরে। জীবনের শেষ কয়টা দিন তিনি মানুষের মাঝেই কাটাতে চান। যতদিন কর্মক্ষম থাকবেন এই পেশাতেই নিয়োজিত থাকবেন।

প্রায় দুই তিন যুগ আগেও গ্রামের সকল হাটবাজারেই কম বেশী দেখা মিলতো ভ্রাম্যমান নরসুন্দরদের। হাটজারে আসা ক্রেতারা নিজেদের প্রয়োজনীয় পন্য কিনার ফাঁকে ফাঁকে চুল-দাড়ি কাটানোর কাজটাও সেরে নিতেন অল্প খরচে। এসকল সেলুনে আসন কেবল একটি ইট। ইটের উপর বিছানা বিছিয়ে নরসুন্দরগন নিপুন হাতে করতেন তার ক্ষৌরকর্ম।

আধুনিক সেলুনে চুল-দাড়ি কাটাতে জন প্রতি ৯০/১০০ টাকা লাগে, সেখানে ভ্রাম্যমান সেলুনে ২৬/৩০ টাকা দিলেই চলে। এসব সেলুনে দৈনিক আয় হয় গড়ে ২০০/৩০০ টাকা। বর্তমান জীবনযাপনে এই আয় নিতান্তই অপ্রতুল। তারপরও গ্রামে গঞ্জের মানুষের সাথে গভীর সম্পর্কের টানে তারা নানা কস্টের মাঝেও এ পোশা বাদ দিতে পারেন না। কখনো বা ভাগ্য ভালো হলে কোন গ্রামের বাড়ী সদ্যজাত সন্তানের আকিকা অনুষ্ঠানে গেলে সেদিন নরসুন্দরেরা ভালো বকশিস পায়। কিন্তু ইদানিং করোনা রোগের প্রাদুর্ভাবে সরকার ঘোষিত লকডাউন ও আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে ক্রমেই উধাও হয়ে যাচ্ছে ভ্রাম্যমান সেলুন।

ভোলা//ইবিটাইমস/আরএন