ঢাকার কেরানীগঞ্জে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ২৯ জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার ভয়ঙ্কর ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন শ্রমিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফেরত এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তারা করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে সংক্রমিত কিনা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি। স্থানীয় একাধিক সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জে ভাসমান জনগোষ্ঠি বেশী হওয়ার ফলে  ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেননা এই উপজেলায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সমূহের অনেক শ্রমিক বাস করেন।

তাছাড়াও কেরানীগঞ্জ উপজেলা রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের উপজেলা হওয়াতে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত অনেক ভাসমান জনসাধারণের বসবাস রয়েছে কেরানীগঞ্জে। বাংলাদেশের পত্রিকা

কালের কন্ঠ জানিয়েছেন বর্তমানে কেরানীগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের আগানগর গার্মেন্ট পল্লী এলাকায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখের মতো শ্রমিক। জিনজিরা তাওয়াপট্টী এলাকায় রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক।

এছাড়াও কেরানীগঞ্জে অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও বিভিন্ন কল-কারখানা ও উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকজন। রোজার ঈদের দীর্ঘ ছুটির পরে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট পল্লী ও জিনজিরা তাওয়াপট্টির কারখানাগুলো খুলতে শুরু করেছে। চালু হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কল-কারখানার কাজও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে শ্রমিকরা। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পরে গত ১০ দিনে সেখান থেকে কোনো শ্রমিক কেরানীগঞ্জে এসেছে কিনা, আসলেও কি পরিমাণ এসেছে, কে কোথায় উঠেছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে কালের কন্ঠ পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কম সুবিধায় উত্তরবঙ্গের শ্রমিকদের কাজ করানো যায়। তাই গার্মেন্টস পল্লীতে উত্তরবঙ্গের চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, চিতলমারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের শ্রমিকরা এখানে বেশী পরিমাণে কাজ করছেন।

তবে কেরানীগঞ্জে অন্যান্য জেলার লোকজনও আছে। ঈদের দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গত সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিকেরা আসতে শুরু করেছে। তবে এদের কাহারও কোন করোনা টেস্ট করা হয়নি। কেউ ভারতীয় ভেরিয়েন্ট নিয়ে এখানে এসেছে কিনা তাও খুঁজে পাওয়ারও কোনো উপায় নাই।

আগানগরের স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পত্রিকাটির সংবাদদাতা জানান, এখানে এক একটি কারখানায় একসঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করে। কোনো কোনো কারখানায় আরো বেশী শ্রমিক ও কাজ করে থাকে। কোনো শ্রমিক যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখানে কাজ করতে আসে, তাহলে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে অন্যদের মাঝে।

জিনজিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ডা. হাবিব রহমান বলেন, কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন জেলার মানুষ কাজ করে। কেরানীগঞ্জের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষজন যাতায়াত করে। সুতরাং করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিতো আছেই। বরং অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কেরানীগঞ্জে ঝুঁকি আরো অনেক বেশী ।

শুধু ভারতীয় ভেরিয়েন্ট না সব ভেরিয়েন্টের জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কেরানীগঞ্জের বাজার, যাতায়াতের রাস্তা কিংবা কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। বিশেষ করে, যাতায়াতের রাস্তাগুলোতে কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এগুলো দেখারও যেন কেউ নাই। কেরানীগঞ্জে শুধু নামেই লকডাউন দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনেরও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

জিনজিরা তাওয়াপট্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আক্তার জিলানী খোকন বলেন, আমাদের এখানে অধিকাংশ কারখানাই বন্ধ, যেসব কারখানা খোলা আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পরিচালনা করা হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী বলেন, ঈদের পরে দুর-দুরান্তের পাইকাররা কম আসছে, তারা অনলাইনেই অর্ডার করছে। আর ঈদে অনেক শ্রমিকই গ্রামে যায়নি, তাদের কারখানায় থেকে গিয়েছিল। করোনা মোকাবেলায় আমরা প্রতিদিন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং করছি এবং গার্মেন্টস পল্লীতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা নিজেরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান জানান, এই পর্যন্ত কেরানীগঞ্জে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২,৬৫৪ জন। প্রতিদিন কেরানীগঞ্জে গড়ে ৩০ জনের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারতীয় ভেরিয়েন্ট মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আশেপাশের কেউ ভারত থেকে আসলে অবশ্যই তা আমাদের ইনফর্ম করে তার করোনা টেস্ট নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের পরীক্ষা করার সামর্থ্য রয়েছে, বাকিটা জনগণকে সাহায্য করতে হবে। দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের আছে। কারো ভীত হওয়া উচিত না।

কেউ যদি মনে করে তার টেস্ট করানো দরকার, তাহলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ১০০ টাকায় এখানে এসে টেস্ট করাতে পারে। তিনি আরও বলেন,সবার মনে রাখতে হবে কারো যদি করোনা হয়,তাহলে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব, তাই সবাইকে নিরাপদ রাখতে করোনাকে ভয় না পেয়ে টেস্ট করানো উচিত।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, কেরানীগঞ্জে এখনো ইন্ডিয়ান ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আপাতত বলা যায়, কেরানীগঞ্জে  করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা জনগণকে মানানোর জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনা মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। সবারই উচিত মাস্ক পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানা। আর কেউ যদি ভারত থেকে এসে তথ্য লুকাতে চায়, তাহলে আশেপাশের মানুষদের উচিত তা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া।

কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »